।। প্রথম কলকাতা ।।
Kenya: কাকের উপদ্রবে একেবারে নাজেহাল কেনিয়া। কাকেরাও যে এত ভয়ঙ্কর হতে পারে, আপনি জাস্ট সেটা ভাবতেও পারবেননা। সমস্ত কাক মেরে ফেলা হচ্ছে কেনিয়াতে। ৬ মাসে টার্গেট ১০ লাখ। ভারতীয় কাকের জ্বালায় অস্থির পূর্ব আফ্রিকার বিভিন্ন শহর। কাক নিধন যজ্ঞ শুরু করছে কেনিয়া সরকার। কাকের জ্বালায় শেষ হতে বসেছে সে দেশের পাখিরাই। ভয়ঙ্কর অবস্থা কেনিয়াতে।
সাম্প্রতিক সমীক্ষা বলছে ভারতে কাকের সংখ্যা দিনদিন কমে যাচ্ছে। শহরাঞ্চলে তো বটেই, ভারতের গ্রামাঞ্চলেও আজকাল আর কাকের দেখা পাওয়া যায়না। যার সরাসরি প্রভাব কিন্তু পড়ছে আমাদের পরিবেশের উপর। ভারতের তো এমন অবস্থা যে, পারলে কিছু কাক বাইরে থেকে নিয়ে আসে। তাহলেই জাস্ট ভাবুন, অবস্থাটা কীরকম।
ভারতে যখন এই পরিস্থিতি, কেনিয়া তখন আবার কাকের উপদ্রবে অতীষ্ট। কাকের উপদ্রব এতটাই যে, টেকা দায় হয়ে গেছে দেশটিতে। পরিস্থিতি এমন যে, আগামী ছ’মাসে অন্তত ১২ লক্ষ কাককে হত্যা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেনিয়া সরকার। জাস্ট সংখ্যাটা ভাবুন একবার। ছয় মাসে ১২ লক্ষ! ব্যাপারটা অবাক করার মত নয় কি? কিন্তু কেন এমন পদক্ষেপ? কাকেদের কোন বিষয়টা ভাবিয়ে তুলেছে কেনিয়ার পরিবেশবিদদের?
কেনিয়ার বন্যপ্রাণী বিভাগ বলছে, কাক তাদের প্রাথমিক বাস্তুতন্ত্রের অংশ নয়। মূলত ভারত থেকে কেনিয়ায় পাড়ি দিয়েছে এইসব কাক। আর এখন সেদেশেই বংশবিস্তার করেছে এই কাকের দল। কেনিয়ার আকাশে এখন শুধুই কাক আর কাক। তাদের অত্যাচারে কেনিয়ার উপকূলবর্তী অঞ্চলে অন্যান্য পাখি বিলুপ্ত হতে বসেছে। কাকের দল অন্যান্য পাখিদের ডিমও নাকি খেয়ে ফেলছে। এককথায়, ভারতীয় কাকের জ্বালায় শেষ হতে বসেছে সেদেশের পাখিরাই। ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে সেদেশের বিমান পরিষেবা। যেখান সেখান থেকে ছোঁ মেরে তুলে নিয়ে যাচ্ছে খাবার। চারিদিকে ছুঁড়ে ফেলছে এঁটো-কাঁটা। শোনা যাচ্ছে কাকের উপদ্রব সবচেয়ে বেশি ভূগছে তানজানিয়ার স্বয়ংশাসিত প্রদেশ জাঞ্জিবার। কেবল এই প্রদেশেই ভারতীয় কাকের সংখ্যা অন্তত ১ কোটি ৩০ লক্ষ। তাহলেই ভাবুন, জাঞ্জিবার অবস্থা ঠিক কতটা ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছে।
সবচেয়ে মজার ব্যাপার হল, এইসব কাক আর রাস্তায় পড়ে থাকা খাবার খায়না। ভারতীয় কাকেদের নজর রেস্টুরেন্টের সুস্বাদু এবং দামী খাবারের দিকে। রেস্টুরেন্টের চেয়ার টেবিলের উপর যত্রতত্র খালি কাকের মল। সমস্যা এতটাই জটিল হয়ে উঠেছে যে, কেনিয়ার প্রায় সব রেস্টুরেন্ট, দোকান, মলে পেশাদার কাক তাড়ুয়া নিয়োগ করছে কর্তৃপক্ষরা। কাকের কারণেই চরম নোংরা হয়ে উঠেছে কেনিয়ার পরিবেশ।
এদিকে কেনিয়ার অর্থনীতির আবার অনেকটাই নির্ভর করে পর্যটন শিল্পের উপর। এবার এই কাকের উপদ্রবে পর্যটকরাও বিরক্ত। স্বাভাবিকভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কেনিয়ার পর্যটন কেন্দ্র। আর তাই এবার কাক নিধন যজ্ঞে নেমেছে কেনিয়া সরকার। শোনা যাচ্ছে, এক ধরণের বিশেষ বিষ প্রয়োগ করা হবে এইসব কাকেদের উপর। এমন এক বিষ প্রয়োগ করা হবে যাতে কাক ছাড়া আর অন্য কোনও পাখি ক্ষতিগ্রস্ত হবেনা।
এখন মনে প্রশ্ন জাগতে পারে, কেনিয়াতে এত কাক এল কীভাবে? নাহ্, কাকেরা নিজেরা যায়নি। বরং জাঞ্জিবারকে আবর্জনা মুক্ত করে তুলতে ব্রিটিশরা এই দেশ থেকে কাক নিয়ে যায় সেখানে। ব্রিটিশদের ধারণা ছিল, এতে আবর্জনা মুক্ত হয়ে উঠবে দেশটি। কিন্তু ঘটল উলটো। ধীরে ধীরে গোটা কেনিয়া জুড়ে শুরু হল ভারতীয় কাকের দাপট। কয়েক দশকের মধ্যে গোটা পূর্ব আফ্রিকায় ছড়িয়ে পড়ে এইসব কাক। পরিবেশবিদরা বলছেন ভারতীয় কাকেরা এতই চালাক যে কোনোভাবেই আর এদের নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি। অর্থাৎ ব্রিটিশরা যা চেয়েছিল তা তো হয়ইনি, বরং হল তার উল্টো। এখন আফ্রিকার আকাশে ভারতীয় কাকের হানা কতদিন চলবে সেটাই দেখার।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম