।। প্রথম কলকাতা ।।
Israel-Hamas war: গাজা যুদ্ধে জিতছে হামাস, হিসেবে বড় ভুল করে ফেলল ইসরায়েল! হামাস আর ইসরায়েলের যুদ্ধে নাকি জিতে যাচ্ছে হামাস! না, এটা আমাদের কথা নয়। স্বনামধন্য ম্যাগাজিনে বড় বড় করে ছাপা হয়েছে এই লেখা। হামাসকে হারাতে গিয়ে নাকানিচুবানি অবস্থা ইসরায়েলের। কোন কৌশলে এত বড় ভুল করে ফেললেন নেতানিয়াহু? হারানো তো দূর, উল্টে শক্তি বাড়িয়ে দিচ্ছে হামাসের। গাজা যুদ্ধে হামাসের জেতার সম্ভাবনা কতটুকু? শেষমেষ কি তাহলে গাজাতে হামাসের জয় হবে? যদি হামাস আর ইসরায়েলের তুলনা করেন, তাহলে ক্ষেপণাস্ত্র থেকে শুরু করে সামরিক শক্তিতে হামাসের থেকে বহুগুণ এগিয়ে ইসরায়েল। বিগত নয় মাস ধরে চলা যুদ্ধে গাজার যে কি অবস্থা গোটা বিশ্ব দেখছে। হামাসের সদস্য সংখ্যাই বা আর কত! সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে, যদি বলা হয় হামাস জিতছে, তাহলে কথাটা একটু অবান্তর বলেও মনে হতে পারে। কিন্তু এমনটা বলার পিছনে প্রচুর যুক্তি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক ম্যাগাজিন ফরেন অ্যাফেয়ার্স এর রিপোর্ট।
•বাড়ছে হামাসের শক্তি, লড়াই করবে জীবনের শেষ বিন্দু দিয়ে!
একটা সহজ হিসাব দেখুন, প্রায় ৯ মাস হয়ে গিয়েছে। গাজায় বিমান আর স্থল হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল। কিন্তু হামাসকে পুরো দমে পরাজিত করতে পেরেছে কি? না, এখনো পারেনি। ইসরায়েল যে টার্গেট নিয়ে এগোচ্ছে, হামাসকে সমূলে নির্মূল করবে। কিন্তু এখনো তো মাথা উঁচু করে রয়েছে হামাসের শীর্ষ বেশ কয়েকজন নেতা। যারা পরিবারের বহু সদস্য কে হারিয়েছেন, যুদ্ধে প্রিয়জনকে হারিয়েও তারা যুদ্ধের ময়দানে হাল ছাড়েনি। ইসরায়েলি হামলায় হমাসের শীর্ষ নেতা ইসমাইল হানিয়া হারিয়েছেন তার পরিবারের দশ সদস্যকে। কিন্তু সেই শীর্ষ নেতা কখনো সামনে এসে বলেননি, ঠিক আছে এবার সমঝোতায় আসা যাক। মাঝখানে যখন যুক্তরাষ্ট্র দুই পক্ষের যুদ্ধ বিরতি নিয়ে মধ্যস্থতা করার চেষ্টা করেছিল, তখন হামাস কিছুটা সম্মতি হয়েছিল। তবে হ্যাঁ, নিজেদের দাবিতে ছিল অনড়। অর্থাৎ স্থায়ী যুদ্ধ বিরতি ছাড়া তারা ইসরায়েলের সঙ্গে কোনও রকম আপোসে আসতে রাজি নয়। হামাস যেন বদ্ধপরিকর, যতক্ষণ না তাদের লক্ষ্য পূরণ হবে, ততক্ষণ তারা নিজেদের শেষ বিন্দু দিয়ে লড়াই করবে। অপরদিকে ইসরায়েল হামাসের হাত থেকে জিম্মিদের ছাড়াতে চাইছে।
গত ৯ মাসে আকাশ আর স্থল অভিযানে ইসরায়েল গাজায় হামাসকে না পেরেছে পরাজিত করতে, না পেরেছে এই সশস্ত্র গোষ্ঠীকে পরাজয়ের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যেতে। যদি বিষয়টা উল্টো দিক থেকে বিবেচনা করেন, তখন কিন্তু ৭ই অক্টোবরের তুলনায় আজকের হামাস আরো শক্তিশালী। এমনটাই বলছে ফরেন অ্যাফেয়ার্স এর রিপোর্ট। গত বছরের অক্টোবরে হামাস ইসরায়েলে অতর্কিতভাবে আক্রমণ চালায়। তাতে বহু ইসরাইলি নাগরিক মারা যান। আবার অনেকেই জিম্মি হন হামাসের হাতে। তারপর ইসরায়েলি সেনা অভিযান শুরু করে উত্তর আর দক্ষিণ গাজায়। যার জেরে বাস্তুচ্যুত হয়েছে গাজার প্রায় ৮০ শতাংশ মানুষ। নিহত হয়েছেন প্রায় ৩৭ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি। বলা হচ্ছে, এই গাজায় এখনো পর্যন্ত ইসরায়েলি বাহিনীর ফেলেছে ৭০ হাজার টনের বেশি বোমা। যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় লন্ডন, ড্রেসডেন এবং হামবুর্গে ফেলা বোমার থেকে অনেক বেশি। ইসরায়েলি বাহিনীর বোমার হামলায় গুঁড়িয়ে ধুলিস্যাৎ হয়ে গিয়েছে গাজার অর্ধেকের বেশি ভবন। জল খাবার আর বিদ্যুৎ সরবরাহের পরিমাণ এতটাই সীমিত করে দিয়েছে, যার কারণে দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গিয়েছে গাজার বাসিন্দাদের। বহু আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক ইসরায়েলের এমন আচরণকে অনৈতিক বলেছেন। তবে ইসরায়েলের নেতারা বারংবার বলে এসেছেন, তাদের উদ্দেশ্য একটাই। হামাসকে পরাজিত করা অর্থাৎ এই সশস্ত্র গোষ্ঠীটাকে পুরো দুর্বল করে ফেলা যাতে তারা বেসামরিক ইসরায়েলিদের ওপর নতুন করে আর কোনও রকম আক্রমণ চালাতে না পারে। পাশাপাশি এও দাবি করে, ইসরায়েলিদের কাছে ফিলিস্তিনিদের জীবনে অগ্রাধিকার পায়। কিন্তু হামাসের শক্তিকে ধ্বংস করার জন্য গাজার বাসিন্দারা যে শাস্তি ভোগ করছে তা মেনে নিতে হবে।
* হামাসের মাথা গুনছে ইসরায়েল, গুলিয়ে ফেলছে রণনীতি!
ইসরায়েল যে অঙ্কটা কষে এগোচ্ছিল, যে ছকে হামাসকে বন্দী করতে চাইছিল, তার পাশাটাই পুরো উল্টে গিয়েছে। রিপোর্টের দাবি, ইসরায়েলের আক্রমণ প্রকৃতি পক্ষে হামাসের শক্তি বাড়িয়েছে। এখন তো ধরাছোঁয়ার বাইরে হামাস। আসলে এখানে ফিলিস্তিনে ইসরায়েল তার কৌশলে ভুল করে ফেলেছে। ভিয়েতনামে ১৯৬৬-৬৭ সালে যেমন কৌশলে ভুল করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। হঠাৎ করে শক্তিশালী হয়ে উঠেছিল ভিয়েতনামের সশস্ত্র সংগঠন ভিয়েত কং। তখন যুক্তরাষ্ট্রকে অনর্থক অনুসন্ধান আর অভিযানে বিপুলসংখ্যক সেনা পাঠাতে হয়েছে। সেই পথেই এগোচ্ছে ইসরায়েলও। ইসরায়েল ভাবছে, সামরিক শক্তি দিয়ে হামাসকে পরাজিত করবে, কিন্তু ভুল ভাবে প্রয়োগ করছে সেই শক্তি। উল্টে হামাস পরিণত হয়েছে একটা সুদৃঢ় ভয়ঙ্কর গেরিলা বাহিনীতে।
ইসরায়েল যেন বুঝতেই পারছে না, যে তাদের সামরিক কৌশল ব্যর্থ হয়ে যাচ্ছে। ইসরায়েল যে ব্যর্থ, তার কারণেই কিন্তু শক্তিশালী হচ্ছে শত্রুপক্ষ। শুধু তাই নয়, রণনীতিতে রয়েছে প্রচুর ভুল। ইসরায়েল সরকার আর তার বিশ্লেষকরা কেবলমাত্র এই অভিযানে ঠিক কতজন হামাস সদস্য নিহত হয়েছেন তার মাথা গুনছেন। ভাবছেন হয়ত, অভিযানে এটাই সফলতা। এটা ঠিক যে, হামাসের বহু সদস্য নিহত হয়েছেন। ইসরায়েলের মতে যুদ্ধের আগে হামাসের প্রায় ৩০ থেকে ৪০ হাজার জন সদস্য ছিল। যেখানে যুদ্ধ নিহত হয়েছেন অন্তত ১৪ হাজার সদস্য। আবার ওদিকে হামাস জোর দিয়ে বলছে, নিহত হয়েছে তাদের ৬ থেকে ৮ হাজার সদস্য। মার্কিন গোয়েন্দা সূত্র বলছে, হামাসের প্রকৃত নিহতের সংখ্যা প্রায় ১০ হাজার হবে। এই সংখ্যার উপর জোর দিয়ে হামাসের শক্তি মূল্যায়ন করাটা কঠিন। কারণ সদস্য হারানোর পরেও কিন্তু এককভাবে গাজার বৃহৎ অংশ এখনো হামাসের নিয়ন্ত্রণে। উল্টে হামাস চালাচ্ছে গেরিলা যুদ্ধ। যার মধ্যে রয়েছে অতর্কিত হামলা থেকে শুরু করে বন্দী হওয়া সেনার কাছ থেকে নেওয়া অস্ত্রে তৈরি ইম্প্রোভাইজড বোমা। নেতানিয়াহুর জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা যখন মনে করছে, হামাসের এসব হামলা ২০২৪ সালের শেষ পর্যন্ত বড় জোর স্থায়ী হতে পারে।
কিন্তু হামাসে সম্ভবত আর ১৫ হাজার সংগঠিত যোদ্ধা রয়েছে। যা ৭ই অক্টোবর হামলা চালানোর যোদ্ধার সংখ্যার প্রায় ১০গুণ। উপরন্তু হামাসের ভূগর্ভস্থ টানেল নেটওয়ার্কের ৮০ শতাংশেরও বেশি এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে। সেখানে যত পরিমাণ অস্ত্র সংরক্ষিত রয়েছে, তা কিন্তু এখনো ইসরায়েলি নজরদারিতে পড়েনি। গাজায় হামাসের শীর্ষ নেতৃত্বের অনেকেই এখন অক্ষত। আর তারাই তো হামাসের মূল শক্তির উৎস।। আর একটা কথা কি বলুন তো, হামাস কিংবা যে কোনও সশস্ত্র গোষ্ঠীর ক্ষমতার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উৎস, নিয়োগের ক্ষমতা। বিশেষ করে এই গোষ্ঠীর নেতাদের নতুন প্রজন্মের যোদ্ধা আর কর্মীদের আকৃষ্ট করার ক্ষমতাই প্রধান। সেই জায়গাটাও বেশ ভালোভাবেই কাজে লাগাচ্ছে হামাস। তাই তো বারংবার বলা হচ্ছে, ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধে হামাসের টিকে থাকার সম্ভাবনা বেশি। ৭ই অক্টোবরের আগের তুলনায় আজকের ফিলিস্তিনিদের মধ্যে হামাসের সমর্থন অনেকটা বেশি।
* কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি ইসরায়েল, জিতবে কে?
আসলে ইসরায়েলের সামনে এখন দাঁড়িয়ে রয়েছে একটা বড় কঠিন বাস্তবতা। যেটা ইসরায়েলকে মেনে নিতেই হবে। না নেওয়া ছাড়া উপায় যে নেই। দীর্ঘ নয় মাস গেরিলা যুদ্ধের পরেও কিন্তু হামাসকে পরাজিত করার বা চূড়ান্তভাবে হারানোর জন্য ইসরায়েলের কাছে একক কোনো সামরিক সমাধান নেই। আসলে, হামাসের মধ্যে যে রাজনৈতিক আর সামাজিক একটা আন্দোলনের বীজ বুনে দিয়েছে, সেটা খুব সহজে হারিয়ে যাওয়ার নয়। সেটা কিন্তু অনুধাবন করতে পারছে ইসরায়েলের সেনাবাহিনীও। কিছুদিন আগে তা স্বীকারও করে নিয়েছে। বিগত ৯ মাসের সামরিক অভিযানে ইসরায়েল তার উদ্দেশ্যের দিকে খুব একটা এগোতে পারেনি হামাস পরাজিত তো হয়নি, উল্টে তাদেরকে পরাজয়ের কাছাকাছিও পাঠানো যায়নি। বরং আরো বেশি আবেদন আরো জনপ্রিয়তা তৈরি করেছে এই সশস্ত্র গোষ্ঠী। দুঃখের বিষয় হল, এই যুদ্ধ এখন চলতেই থাকবে। প্রাণ যাবে গাজার বহু সাধারণ মানুষের। হুমকি মুখে পড়বে দুই পক্ষই অর্থাৎ হামাস আর ইসরায়েল। এখনো কিন্তু হামাসের হাতে বন্দি রয়েছে ইসরাইলের বহু মানুষ। তাদের দুর্ভোগও কম নয়। কিন্তু চূড়ান্তভাবে কোন পক্ষ পরাজিত হবে তার ফলাফল এই মুহূর্তে বলা যাচ্ছে না। ইসরায়েলের সাথে অনেকটা তুলনামূলক আলোচনায় চলে আসছে হামাস। আর এখানেই তো ভয় নেতানিয়াহুর।
ফিলিস্তিন যে বহু আগেই বহু শক্তিধর রাষ্ট্রের সহানুভূতি পাচ্ছে তা তো জানেনই। সম্প্রতি চলমান যুদ্ধের মধ্যেই নাকি রাশিয়া সফরে যাচ্ছেন ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস। গাজা ইসরায়েল যুদ্ধের শুরু থেকেই ফিলিস্তিনের প্রতি সংহতি জানিয়েছিল রাশিয়া। যুদ্ধের শুরু থেকেই গাজায় যুদ্ধ বিরতির আহ্বান জানিয়েছিলেন পুতিন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দ্বন্দ্বের কারণে রাশিয়া আগাগোড়াই মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য জোট মানে ফিলিস্তিন লেবানন ইরানের সাথে একটু বেশি সখ্যতা রয়েছে। শুধু রাশিয়া কেন, মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য শক্তিধর রাষ্ট্র থেকে শুরু করে সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো হামাসকে সমর্থন করছে। অস্ত্র দিচ্ছে। এ যুদ্ধ এখনই শেষ হওয়ার নয়। কারণ ইসরায়েলও যে কম শক্তিশালী নয়। নেপথ্যে রয়েছে বড় বড় পশ্চিমাদেশের মাথা। তারাও ইসরায়েলকে প্রাণপণে সাহায্য করার চেষ্টা করবে। তখন আরো মারাত্মক পর্যায়ে পৌঁছাতে পারে এই যুদ্ধ।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম