।। প্রথম কলকাতা ।।
North Korea-Russia: কিমের দোরগোড়ায় মার্কিন রণতরী, হুঙ্কার ছাড়লেন পুতিন! ফল ভালো হবে না। উত্তর কোরিয়া অর্থাৎ কিমের দেশের দোরগোড়ায় পৌঁছে গেল যুক্তরাষ্ট্রের মারাত্মক যুদ্ধ জাহাজ। উস্কানি নাকি সতর্কতা? কিম পুতিন হাত মেলাতেই কি, ভয় পাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ? যুদ্ধ জাহাজ পাঠিয়ে জানান দিচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রও কম শক্তিশালী নয়। দক্ষিণ কোরিয়াকে পুতিনের কড়া হুঁশিয়ারি। কিমের বিরুদ্ধে চলবে সামরিক মহড়া। মেনে নেবে তো ? আবারো পালটা হুঁশিয়ারির আশঙ্কা। কী করবেন এবার কিম? বেলুন পাঠাবে নাকি অন্য কিছু? দক্ষিণ কোরিয়ার সাথে যুক্তরাষ্ট্র আর জাপান মিলে আঁটছে নতুন ফন্দি। ক্ষমতা প্রদর্শনের লড়াইতে জিতবে কে? উত্তর কোরিয়া নাকি যুক্তরাষ্ট্র?
•ক্ষমতার খেলায় মেতেছে যুক্তরাষ্ট্র, এবার অস্ত্র থিওডোর রুজভেল্ট
প্রায় ২৪ বছর পর রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন যখন উত্তর কোরিয়ায় গিয়েছিলেন, তখন কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র একদম চুপ ছিল। কয়েকবার সতর্কতা দিয়েছিল নামমাত্র। কিন্তু কোন স্টেপ নেয়নি। তবে যুক্তরাষ্ট্র যে তলে তলে অন্য কোনও ফন্দি আঁটছিল, এবার তা প্রকাশ্যে বেরিয়ে এল। এটা কে উস্কানি বলুন, আর সতর্কতা, যুক্তরাষ্ট্র এমনটা মাঝেমধ্যেই করে থাকে। যখন শত্রু দেশগুলোর পদক্ষেপ পছন্দ হয় না, তখনই সেই শত্রু দেশের কাছে গিয়ে নয় সামরিক মহড়া চালায়, নয় যুদ্ধবিমান দিয়ে টহলদারি করে।বিশেষ করে যখনই নিজেকে একটু কোণঠাসা মনে করে তখনই কিন্তু এমন কর্মকাণ্ড করে থাকে। ঠিক এক বছর আগে, উত্তর কোরিয়ার আকাশে গুপ্তচর বিমান পাঠিয়ে আকাশ সীমা নাকি লঙ্ঘন করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। সেই অভিযোগে সরব হয়েছিলেন কিম জং উন। শুধু তাই নয়, অভিযোগ ছিল কোরীয় উপদ্বীপের কাছে আণবিক ক্ষেপণাস্ত্র থাকা ডুবোজাহাজ মোতায়েন করার পরিকল্পনা করছে ওয়াশিংটন। যদিও এমত অবস্থায় যে কিম কিছুই করেন না, বা চুপ করে থাকেন এমনটা নয়। এর আগে বহুবার হয়েছে উত্তর কোরিয়ার আকাশে প্রবেশ করা যুক্তরাষ্ট্রের গুপ্তচর বিমান গুলি করে ধ্বংস করেছে। বুঝতে পারছেন, যুক্তরাষ্ট্র আর উত্তর কোরিয়ার সম্পর্কটা ঠিক কতটা তিক্ততার? অনেকটা সাপে নেউলের মতো।
এবার দুই কোরিয়ার উত্তেজনার মধ্যে দক্ষিণ কোরিয়ায় পৌঁছে গেল মার্কিন ভয়ঙ্কর রণতরী। আণবিক শক্তি সম্পন্ন এই রণতরীটি অংশ নেবে ত্রিদেশীয় সামরিক মহড়ায়। বিষয়টাকে একদমই ভালো চোখে দেখছে না কূটনৈতিক মহল। মনে করছে, এতে আরো উত্তেজনার পারদ চড়তে পারে। দুই কোরিয়ার মধ্যে যুদ্ধ বেঁধে যাওয়ার আশঙ্কা তুমুল। মার্কিন নৌবাহিনীর এই রণতরী থিওডোর রুজভেল্ট কিন্তু কম শক্তিশালী নয়। তাহলে কি, যুক্তরাষ্ট্র কিমকে বোঝাতে চাইছে, তাদের ক্ষমতা ঠিক কতটা? এটা ক্ষমতা প্রদর্শন এর একটা খেলা নয় তো? কারণ যুক্তরাষ্ট্র আর দক্ষিণ কোরিয়া জোটের শক্তিশালী যৌথ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা যে আরও জোরদার হতে চলেছে, তা কিন্তু বুঝিয়ে দিল এই রণতরী। উত্তর কোরিয়ার ক্রমবর্ধমান হুমকির জবাব দিতে এই দুই দেশ যে বদ্ধপরিকর, লক্ষণ কিন্তু তাই বলছে। আপাতত পরিকল্পনা অনুযায়ী,.থিওডোর রুজভেল্ট পৌঁছে গিয়েছে দক্ষিণ কোরিয়ার বুসান নৌঘাঁটিতে। এটি অংশ নেবে চলতি মাসে দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান আর যুক্তরাষ্ট্রের যৌথ মহড়ায়। বলে রাখি, থিওডোর রুজভেল্টের ক্ষমতা মারাত্মক। উপসাগরীয় যুদ্ধের সময় পারস্য উপসাগরে একে মোতায়েন করা হয়েছিল। অত্যাধুনিক মার্কিন এই বিমানবাহী রণতরী একটা সময় ইরাকি বাহিনীর জন্য হয়ে উঠেছিল দুঃস্বপ্ন। আর সেই রণতরীকে এবার দেখার দেখা যেতে চলেছে ভিন্ন ভূমিকায়। নৌ মহড়ার নাম দেয়া হয়েছে ‘ফ্রিডম এজ’। তিন দেশেরই নৌ বাহিনী আর সামুদ্রিক বাহিনী অ্যান্টি সাবমেরিন ওয়্যারফেয়ার আর এয়ার ডিফেন্স মহড়া চালাবে। যেখানে কমান্ড শিপ হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে এই থিওডোর রুজভেল্ট। যদিও এই তিন দেশের যৌথ মহড়া একেবারেই নতুন নয়। গত বছরেও উত্তর কোরিয়ার হুমকির মুখে এই ধরনের মহড়া চালিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র জাপান আর দক্ষিণ কোরিয়া। এর আগে গত বছরের আগস্টে এক সম্মেলনে এই তিন দেশের নেতারা ঠিক করেছিলেন, প্রতি বছর তারা সামরিক প্রশিক্ষণ মহড়ার আয়োজন করবে।
•দাঁতভাঙা জবাব পুতিনের, দক্ষিণ কোরিয়াকে কড়া হুঁশিয়ারি
খটকাটা অন্য জায়গায়। কিছুদিন আগে পুতিন যখন উত্তর কোরিয়া থেকে রাশিয়ায় ফিরে গিয়েছেন, ঠিক তখনই এই তিন দেশ যৌথ মহড়ার আয়োজন করছে। শুধু তাই নয়, যেদিন মার্কিন রণতরীটি দক্ষিণ কোরিয়া গিয়েছে ঠিক তার একদিন আগেই দেশটিতে রাশিয়ার রাষ্ট্রদূতকে তলব করা হয়েছে। রাশিয়া আর উত্তর কোরিয়ার মধ্যে হওয়া যৌথ প্রতিরক্ষা চুক্তির প্রতিবাদ জানাতে রাশিয়ার রাষ্ট্রদূতকে ডেকে পাঠানো হয়। যে চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছিলেন রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন আর উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন। এই চুক্তি দক্ষিণ কোরিয়া একেবারেই ভালো মনে মেনে নেয়নি। দেশটার দাবি, বিশ্বের এক ঘরে হয়ে যাওয়া দুই দেশের মধ্যে এই চুক্তি তাদের নিরাপত্তার জন্য একটা বড় হুমকি। এর জবাব হিসেবে তারা ইউক্রেনে অস্ত্র সহায়তার বিষয়টা বিবেচনা করবে। অর্থাৎ এটা স্পষ্ট, ইট ছুঁড়লে পাটকেল ফেরত দিতে প্রস্তুত দক্ষিণ কোরিয়া। কারণ দক্ষিণ কোরিয়া জানে, তার বড় সাপোর্ট রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের। যদি উত্তর কোরিয়ার তরফ থেকে তাদের দিকে বিন্দুমাত্র আঁচ আসে, তাহলে তারাও রুখে দাঁড়াবে। পুতিন কিমের বন্ধুত্বের মাঝে দক্ষিণ কোরিয়া রীতিমত হুমকি দিল। ভবিষ্যতে ইউক্রেনের যুদ্ধে দেশটা অস্ত্র পাঠালেও পাঠাতে পারে।
আর এভাবেই তো দলাদলিটা শুরু হচ্ছে। যখন দক্ষিণ কোরিয়া ইউক্রেনকে অস্ত্র সহায়তার কথা বলছে, তখন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন রীতিমত হুঁশিয়ারি দিয়েছেন দক্ষিণ কোরিয়াকে। বলে দিয়েছেন, ইউক্রেনে যদি দেশটা যুদ্ধাস্ত্র দেয়, তাহলে একটা বড় ধরনের ভুল হবে। পুতিনের এই হুঙ্কার যে ঘুর পথে যুক্তরাষ্ট্রকেই দেওয়া, তা বলাই বাহুল্য। তিনি আরো বলেছেন, সিউল যদি কিয়েভকে অস্ত্র দেয় তবে মস্কো এমন সিদ্ধান্ত নেবে যা দক্ষিণ কোরিয়ার বর্তমান নেতৃত্বকে একদমই খুশি করবে না। যারা ইউক্রেন যুদ্ধে অস্ত্র সরবরাহ করে মনে করছে, তারা রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধে জড়াচ্ছে না, এমন ধারণা একদমই ভুল। কারণ উত্তর কোরিয়া সহ বিশ্বের অন্য অঞ্চলেও অস্ত্র সরবরাহ আর সংরক্ষণ করার অধিকার রয়েছে রাশিয়ার। রীতিমত দাঁতভাঙা জবাব পুতিনের। এই যে একে অপরের সঙ্গে বন্ধুত্বের নীতিতে চলে, শক্তি বাড়ানোর বিষয়টা, যেন কোন রাষ্ট্রের পছন্দ হচ্ছে না যেমন দক্ষিণ কোরিয়ার পছন্দ হচ্ছে না উত্তর কোরিয়া আর রাশিয়ার বন্ধুত্ব। অপরদিকে ওই দুই পক্ষের পছন্দ হচ্ছে না দক্ষিণ কোরিয়া আর যুক্তরাষ্ট্রের বন্ধুত্ব। সোজা কথায়, পশ্চিমা দেশগুলো এখন মস্কো আর পিয়ংইয়ং এর মধ্যে হওয়া ক্রমবর্ধমান সম্পর্ককে বেশ উদ্বেগের চোখেই দেখছে।
•পালানোর পথ পাবে না যুক্তরাষ্ট্র, আধিপত্যের লড়াইয়ে এগিয়ে কে?
দেখুন, দুই কোরিয়ার মধ্যে শত্রুতার সম্পর্ক একেবারেই নতুন নয়, বহুদিনের। সম্প্রতি দক্ষিণ কোরিয়ার সীমান্তে সামরিক তৎপর বাড়িয়েছে উত্তর কোরিয়ার সেনা সদস্যরা। একে অপরের ভূখণ্ডে বেলুন পাঠানোর মতো কর্মকাণ্ডে জড়িয়েছে দুই দেশই। আর এই দুই দেশের চিরশত্রুতার মাঝে জড়িয়ে গিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার মতো শক্তিধর দেশগুলো। ক্ষমতার আধিপত্যের লড়াইয়ে, যুক্তরাষ্ট্র সব সময় উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধেই থেকেছে।তাই সব সময় দক্ষিণ কোরিয়াকে সাহায্য করতে ব্যতিব্যস্ত ওয়াশিংটন। এমত পরিস্থিতিতে, কিম তার জোর বাড়াতে ঝুঁকছে রাশিয়ার দিকে, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের শত্রু রাষ্ট্র গুলোর দিকে।
আর বড় প্রশ্নটা এখানেই, তাহলে কি যুক্তরাষ্ট্র আর তার মিত্ররা উত্তর কোরিয়া আর রাশিয়ার বন্ধুত্বকে ভয়ের চোখে দেখছে? কারণ এই দুই দেশের মধ্যে হওয়া প্রতিরক্ষা চুক্তি কিন্তু অনিবার্য ধ্বংস ডেকে আনতে পারে বলেই মনে করছে কূটনৈতিক মহলের একাংশ। বহুদিন ধরেই উত্তর কোরিয়া আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্রকে নতুন রূপ দিতে চাইছে। কিন্তু সেই অর্জনের পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা। পুতিনের সফরের পর আশার আলো দেখছে দেশটা। পশ্চিমা বিশ্লেষকদের বিশ্বাস, উত্তর কোরিয়াকে ভয়ঙ্কর সব অস্ত্র বানানোর প্রযুক্তিতে রাশিয়া সাহায্য করতে পারে। আর যদি এমনটা ঘটে তখন পালানোর পথ খুঁজে পাবে না যুক্তরাষ্ট্রসহ তার মিত্র দেশগুলো।
এ কথা ঠিক যে, বিগত কয়েক দশকে এশিয়ায় রাশিয়ার গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপে যুক্তরাষ্ট্রসহ তার মিত্ররা বেশ বিচলিত। তাই রাশিয়া চীন উত্তর কোরিয়ার মতো দেশগুলোকে রুখতে কি না করছে। তারপর সম্প্রতি আগুনে ঘি ঢালার মতো কিম পুতিনের পারস্পারিক প্রতিশ্রুতি, প্রতিরক্ষা চুক্তি অতিক্রম করে গিয়েছে সমস্ত সীমা। তাই উত্তর কোরিয়াকে চাপে রাখতে যুক্তরাষ্ট্র জাপান দক্ষিণ কোরিয়া এক জোট হয়ে যেন নিজেদের সর্বোচ্চ শক্তি প্রদর্শন করতে চাইছে। এর পরের পদক্ষেপটা কী হবে? নিশ্চয়ই চুপ করে বসে থাকবেন না কিম। তিনিও এর পাল্টা হুমকি বা করার স্টেপ নেবেন। এটাই স্বাভাবিক। কারণ কিমের আচরণ বিধি তাই বলে। কিম যে কথায় কথায় ক্ষেপনাস্ত্র ছোঁড়েন, তা সবাই জানে। তিনি কাউকেই বরদাস্ত করেন না। কোন হুমকি কিংবা নিষেধাজ্ঞাকে তোয়াক্কাই করেন না। এবার কিমের পাল্টা চালের পালা। সাথে নিশ্চয়ই থাকবে রাশিয়াও।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম