।। প্রথম কলকাতা ।।
History Of Sando Ganji: স্যান্ডো গেঞ্জি এলো কোথা থেকে? ভেবেছেন কখনও? বাঙালির এই অতিপ্রিয় অন্তর্বাস পরার চল ঠিক কীভাবে শুরু হয়েছিল? কে তিনি? যিনি স্যান্ডো গেঞ্জির সাথে আমাদের পরিচয় করিয়েছিলেন? আজ স্যান্ডো গেঞ্জির গল্প শুনলে আপনি নিশ্চয়ই একটু অবাক হবেন। মনে করা হয়, এক বিখ্যাত বডিবিল্ডারের নাম জড়িয়ে রয়েছে এই স্যান্ডো গেঞ্জির সাথে। তাহলে বলা যাক স্যান্ডো গেঞ্জির সেই গোপন কথা?
বাচ্চা থেকে বয়স্ক, পোশাকের নীচে নরম কাপড়ের স্যান্ডো গেঞ্জি পরেন সকলেই। পুরুষদের এই হাত কাটা যেমন আরামদায়ক তেমন জনপ্রিয়ও বটে। অনেকেরই ধারণা, ভারতে এই পোশাকের চল শুরু হয় ব্রিটিশ আমল থেকেই। মূলত প্রাশ্চাত্য থেকেই প্রাচ্যে এসেছে এই পোশাকটি। খুব সম্ভবত এই হাত কাটা গেঞ্জির উৎপত্তি ইংল্যান্ডের গুয়েরেন্সি দ্বীপপুঞ্জ থেকে। সেখানকার জেলেরা নাকি এই ধরণের নরম আরামদায়ক পোশাক পরতেন। পরে ঐ দ্বীপপুঞ্জের নামানুসারেই এই হাতকাটা পোশাকের নাম রাখা হয় ‘গেঞ্জি’। ধীরে ধীরে এই পোশাক জনপ্রিয়তা পায় ব্রিটিশ নৌসেনাদের মধ্যেও।
ধারণা করা হয়, এই ব্রিটিশ নৌসেনাদের হাত ধরেই গেঞ্জির প্রবেশ ঘটে আমাদের ভারতে। কিন্তু এ তো গেল গেঞ্জির কথা। আমরা তো আবার তার আগে স্যান্ডো বসাই। তা এই স্যান্ডো কথাটা এলো কোথা থেকে? এর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে বিখ্যাত জার্মান বডিবিল্ডার ইউজেন স্যান্ডোর নাম। তার জন্ম জার্মানির কনিগসবার্গে হলেও, তার জনপ্রিয়তা ছড়িয়েছিল গোটা বিশ্বেই। মাত্র ১০ বছর বয়সেই শরীরচর্চায় আগ্রহ জন্মে তার। ধীরে ধীরে হয়ে উঠেন নামী বডি বিল্ডার। বলা হয়, ১৯০১ সালে তার উদ্যোগেই প্রথম বডি বিল্ডিং প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়।
প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয় লন্ডনের রয়্যাল অ্যালবার্ট হলে। জানেন সেই অনুষ্ঠানে বিচারকের আসনে স্যন্ডোর সাথে আর কে কে ছিলেন? শোনা যায়, দ্য গ্রেট ‘শার্লক হোমস’র রচয়িতা স্যার আর্থার কোনান ডয়েল এবং ক্রীড়াবিদ ও ভাস্কর চার্লস লয়েস ছিলেন সেখানে।
এরপর ১৯০৫ সালে ভারত সফরে আসেন স্যান্ডো। এসেই ভারতের যোগ শাস্ত্রের সাথে জুড়ে যান তিনি। শোনা যায়, ওই সময়ে ভারতীয় জাতীয়তাবাদীদের কাছে স্যান্ডো হয়ে উঠেছিলেন ভারতীয় যোগের একজন আন্তর্জাতিক আইকন। সেই সময়টা নাকি বিভিন্ন শোয়ে তিনি এই হাতকাটা গেঞ্জি পরতেন। মনে করা হয় তারপর থেকেই বাংলায় গেঞ্জির আগে জায়গা করে নেয় ‘স্যান্ডো’ কথাটি। আজও পশ্চিমবঙ্গ, বাংলাদেশ সহ উত্তরপূর্ব ভারতের কিছু অঞ্চলে এই হাতকাটা গেঞ্জিকে স্যান্ডো গেঞ্জিই বলা হয়। যদিও এই তথ্যের কোনও কংক্রিট প্রমাণ পাওয়া যায় না। তবে বিভিন্ন ইতিহাসবিদরা এটাই বলে আসছেন।
তা স্যান্ডো ব্যক্তিটি কিন্তু দারুণ ইন্টারেস্টিং ছিলেন। শোনা যায়, স্যান্ডোর বাইসেপসই ছিল সাড়ে ১৯ ইঞ্চি। তার ঊরুই নাকি ছিল বিখ্যাত ব্রিটিশ রেসিং ড্রাইভার ও সাইক্লিস্ট ক্রিস হোয়ের সমান। তার সিক্স প্যাক বডিতে কত ব্রিটিশ রমণী যে মন হারিয়েছেন তার ইয়ত্তা নেই। তার ৪৮ ইঞ্চির ছাতি ফুলে হয়ে যেত ৬২ ইঞ্চি। এক কথায় স্যান্ডো ছিলেন মেয়েদের কাছে আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু।
এই স্যান্ডো গেঞ্জি নিয়ে কিন্তু আরও অনেক ইন্টারেস্টিং গল্প আছে। ১৯৩৪ সালের ‘ইট হ্যাপেনড ওয়ান নাইট’ সিনেমায় মার্কিন অভিনেতা ক্লার্ক গ্যাবলের জামা খুলে ফেলার একটি সিন ছিল। সেই দৃশ্যে তিনি কোনও গেঞ্জি পরেননি। তারপরই সাধারণ মানুষ মনে করে, গ্যাবল যখন গেঞ্জি পরেননি তখন নিশ্চয়ই এর কোনও মান্যতা নেই। রাতারাতি ধস নেমেছিল গেঞ্জির ব্যবসায়।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম