।। প্রথম কলকাতা ।।
Canada-Iran relations: ইরানকে ভয় পাচ্ছে কানাডা! বিপ্লবী গার্ডকে সন্ত্রাসী তকমা কেন? ইরানের বিপ্লবী গার্ডকে সন্ত্রাসী তকমা। হঠাৎ কানাডার এমন জোরালো পদক্ষেপ কেন? তাহলে কি ইরানকে ভয় পাচ্ছে? নাকি রয়েছে অন্য কোনও কারণ? শুধু কানাডা নয়, এর আগেও যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপীয় ইউনিয়ন বারংবার ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ডকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে তালিকাভুক্ত করতে চেয়েছে। আর যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ইরানের এই বাহিনী বহুদিন ধরেই রয়েছে কালো তালিকায়। প্রশ্নটা এখানেই। একটা দেশের সশস্ত্র বাহিনীকে বিশেষ করে পশ্চিমারা কেন বারংবার টার্গেট করছে? কেনই বা ইরানের বিপ্লবী গার্ডকে মোটা দাগে দেগে দেওয়া হচ্ছে সন্ত্রাসী বলে? কোথাও কি ইরানকে রুখে দেওয়ার জন্য চেষ্টা? কিংবা মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের আধিপত্য কমাতে পশ্চিমারা বেঁধে ফেলতে চাইছে ইরানকে? দেশটার মূল অস্ত্র কিন্তু এই বিপ্লবী গার্ড। এমত পরিস্থিতি, ইরানি বা কতটা শঙ্কিত? সত্যি কি এই বিষয়টা ইরানকে ভাবায়?
ইরানের রক্ষাকবচ বিপ্লবী গার্ড, তেহরানকে দূর্বল করার মূল অস্ত্র!
সম্প্রতি কানাডা ইরানের ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পস অর্থাৎ আইআরজিসিকে তালিকাভুক্ত করল সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে। কানাডা সরকারের এই পদক্ষেপকে বিশ্বজুড়ে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের একটা তাৎপর্যপূর্ণ হাতিয়ার বলে বর্ণনা করেছেন কানাডার জন নিরাপত্তা বিষয়ক মন্ত্রী ডমিনিক লেব্লাঙ্ক। এর অর্থ হল, ইরান সরকারের বহু জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা আর কানাডায় প্রবেশ করতে পারবে না। তাদের মধ্যে রয়েছেন আইআরজিসির গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তারাও। কানাডার এমন পদক্ষেপ বুঝিয়ে দিল, ইরানের সঙ্গে দেশটার সম্পর্ক মোটেই সুমধুর নয়। যদিও এই দুই দেশের সম্পর্কের তিক্ততার ইতিহাস বহুদিনের। এবার তার বহিঃপ্রকাশ হতেই ক্ষেপেছে ইরানও। কারণ ইরানে আইআরজিসিকে একটা অভিজাত বাহিনী হিসেবে মনে করা হয়। দেশটার সামরিক বলুন, রাজনৈতিক কিংবা অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে এই বাহিনীর ব্যাপক প্রভাব রয়েছে। শুধু তাই নয়, এই বাহিনীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি। এই বাহিনীর নিজস্ব স্থল, জল এবং বিমান বাহিনী রয়েছে। প্রায় ২ লক্ষ সক্রিয় সদস্য সহ এত বড় একটা বাহিনীকে দুম করে যদি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে দেগে দেওয়া হয়, তা যে কোন দেশের পক্ষেই একটু অস্বস্তিকর। একইভাবে যেটা ঘটছে ইরানের সঙ্গে। শুধু ইরান নয় গোটা মধ্যপ্রাচ্য জুড়েই এই গার্ডের প্রভাব যথেষ্ট। যারা ইরানের শত্রু দেশ কিংবা ইরানকে ভালো চোখে দেখেনা, তাদের কাছে এই সামরিক সংগঠন রীতিমত চক্ষুশূল। আর এই সংগঠন আছে বলেই কিন্তু মধ্যপ্রাচ্য সহ পশ্চিমা দুনিয়ার বহু দেশ ইরানকে সমঝে চলে।
সোজা কথায়, যে ইরান গোটা বিশ্বের কাছে পাওয়ারফুল হিসেবে পরিচিতি পাচ্ছে, তার মূল কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে এই ইসলামিক রেভ্যুলশনারি গার্ড। যা সব সময় ইরানকে ভিতর কিংবা বাইরে থেকে আসা যেকোনো রকম হুমকি প্রতিরোধে কাজ করে। ১৯৭৯ সালের পর থেকে এই বাহিনী শিয়া ধর্মীয় নেতার শাসনের রক্ষাকবচ হিসেবে কাজ করছে। শুধু নিজের দেশের সীমানায় নয়, বাইরেও সক্রিয়। ইরাক আর সিরিয়ায় কাজ করছে তেহরানের স্বার্থ সুরক্ষায়। ইরানেও রয়েছে এই বাহিনীর কোটি কোটি ডলারের বাণিজ্যিক সাম্রাজ্য। কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, যুক্তরাষ্ট্র যে ইরানের সামরিক ক্ষমতার লাগাম টেনে ধরতে চাইছে, কিন্তু তাও পারছেনা। তার নেপথ্যে রয়েছে আইআরজিসির ক্ষমতা। ইরানের মিত্র দেশগুলো সহ বহু সশস্ত্র গোষ্ঠীকে তেহেরানপন্থী এই সশস্ত্র সংগঠন অর্থ, অস্ত্র, প্রশিক্ষণ এবং পরামর্শ দিয়ে সাহায্য করে। যার জেরে ইরানের মিত্র দেশগুলো এমন পদক্ষেপে কানাডার উপর বেশ রুষ্ট। আইআরজিসির শাখা কুদস ফোর্স যার মাধ্যমে ইরান দেশের বাইরের অভিযান সহ বহু তৎপরতার সঙ্গে নানান কাজ চালায়।। এই কুুদস ফোর্সকে কানাডা কিন্তু বহু আগেই সন্ত্রাসী সংগঠনের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে। আর এবার বাদ দিল না আইআরজিসিকেও। কানাডার এই পদক্ষেপ বুঝিয়ে দিচ্ছে, ইরান বিপ্লবী গার্ডের মাধ্যমে সন্ত্রাসী কার্যক্রম করে, আর যার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য কানাডা তার হাতে থাকা সমস্ত অস্ত্র ব্যবহার করবে। কানাডার আরো অভিযোগ,ইরানের শাসক গোষ্ঠী নাকি দেশ সহ দেশের বাইরে ক্রমাগত মানবাধিকারের প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শন করছে। ইরান আন্তর্জাতিক আইন কানুন ভিত্তিক নিয়ম-শৃঙ্খলাকে অস্থিতিশীল করতে চায়। ইতিমধ্যেই কানাডায় থাকা ইরান সরকারের বহু সাবেক এবং বর্তমান কর্মকর্তাকে তদন্তের মুখে পড়তে হয়েছে। এমনকি তাদেরকে কানাডা থেকে বের করে দেওয়া হতে পারে।
ইরানের অবস্থা নিয়ে কি ভয় পাচ্ছে পশ্চিমারা? ব্যর্থ যুক্তরাষ্ট্রের প্ল্যানিং
আপাতত ইরানে যে সমস্ত কানাডি নাগরিকরা রয়েছেন তারা ঝুঁকির মধ্যে পড়তে পারেন বলে সতর্ক করে দিয়েছেন কানাডার পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেলানি জোলি। আশঙ্কা, কানাডার নাগরিকদের নির্বিচারে আটক করা হতে পারে। আর তাই তো উঠছে বড় প্রশ্নটা। তাহলে কি কানাডা এখন ইরানের অবস্থান নিয়ে একটু শঙ্কিত কিংবা ভয় পাচ্ছে? নাগরিকদের বারংবার সতর্ক করে যাচ্ছে দেশটার সরকার। ইরানও যে ছেড়ে কথা বলবে না ,তার পাল্টা পদক্ষেপ নেবে তা বলাই বাহুল্য। এর আগে কিন্তু কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো আইআরজিসিকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে তালিকাভুক্ত করতে চাননি। তিনি বারংবার বলেছিলেন, যদি এই পদক্ষেপ নেয়া হয় তাহলে কানাডায় অবস্থান করা বহু ইরানি ব্যক্তি অন্যায্য আচরণের শিকার হতে পারেন। বিশেষ করে যারা ইরানের বর্তমান শাসকদের বিরোধিতা করছে দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। তবে এবার যেন আর কোনো রাখঢাক নয়। শুধু কানাডা নয়, পশ্চিমা দেশগুলো কিন্তু ইরানের এই সশস্ত্র বাহিনীকে নজরে নজরে রাখে। সেই ২০১৯ সালে, যুক্তরাষ্ট্র আইআরজিসিকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে তালিকা ভুক্ত করেছে। যুক্তরাজ্যও বারংবার বলে এসেছে তারাও একই পদক্ষেপ নেবে। তবে এখনো পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করেনি। অর্থাৎ যুক্তরাজ্যেরও ইরানের এই বাহিনীর উপরে যথেষ্ট রাগ রয়েছে। ২০২২ এ শোনা গিয়েছিল, রেভল্যুশনারি গার্ডকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হবে কিনা সেই বিষয়ে নাকি যাচাই-বাছাই করছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন আর জার্মানি। তখন পরিস্থিতিও ছিল ইরানের হাতের বাইরে। পুলিশের হেফাজতে থাকা তরুণী মাসা আমিনির মৃত্যুকে কেন্দ্র করে তুমুল বিক্ষোভ প্রতিবাদ চলছিল তেহেরানে। বিক্ষোভ দমনে কঠোর অবস্থান নিয়েছিল ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ড। ইরানের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যার আওতায় ছিল ইরানের নীতি পুলিশ, রেভল্যুশনারি গার্ডের সাইবার বিভাগ, আর তৎকালীন তথ্যমন্ত্রী। অভিযোগ উঠেছিল, ইরানের চলমান বিক্ষোভে নাকি মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে।
তবে হ্যাঁ কয়েক বছর আগে গুঞ্জন উঠেছিল যুক্তরাষ্ট্র নাকি তার সিদ্ধান্ত বদলাবে। ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনীকে বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠনের কালো তালিকা থেকে বাদ দেবে। কিন্তু বিনিময়ে যে সমস্ত শর্ত রাখতে চেয়েছিল, তার নিশ্চয়তা দিতে হবে ইরানকে। আসলে যুক্তরাষ্ট্র ইরানের এই বাহিনীর লাগাম টেনে ধরতে চেয়েছিল। ইরানকে হাতে রাখা মানে মধ্যপ্রাচ্যের অধিকাংশটাই কাবু করে ফেলা। সেক্ষেত্রে আইআরজিসি যদি যুক্তরাষ্ট্রের হাতে থাকে, তাহলে ইরানকে নিয়ে পশ্চিমাদের আর মাথা ব্যাথার কোন কারণই থাকবে না। যদিও শোনা যায়, তেহরানের পক্ষ থেকে কোন ধরনের গ্রহণযোগ্য প্রতিশ্রুতির বিনিময়ে এমন পদক্ষেপ হবে, সেই বিষয়ে ওয়াশিংটন কোন সিদ্ধান্ত নেয়নি। ইরানের ক্ষমতা কাঠামো এই ইসলামী বিপ্লবী গার্ডের ব্যাপক প্রভাব রয়েছে। এমনক সামরিক ও গোয়েন্দা বাহিনীর পাশাপাশি দেশটার বাণিজ্য খাতা নিয়ন্ত্রণ করে থাকে এই বাহিনী। তাই তাদের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র বহুবার বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালানোর অভিযোগ করেছে।
মধুর নয়, কানাডা-ইরানের তিক্ততার সম্পর্ক
কানাডার সঙ্গে যদি ইরানের সম্পর্কের কথা বলা হয়, তা কিন্তু একদমই ভালো নয়। বহুবার ইরান অভিযোগ করেছে, কানাডা নাকি তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করছে। শুধু তাই নয়, কানাডার বিরুদ্ধে চলমান সরকার বিরোধী বিক্ষোভে মদত দেওয়ার অভিযোগ এনেছে মধ্যপ্রাচ্যের এই দেশটা। একই অভিযোগের আঙুল ছিল যুক্তরাষ্ট্রের দিকেও। ২০১৮ সাল নাগাদ ইরান বলে, আন্তর্জাতিক রীতি নীতি ভেঙে ইরানে চলমান বিক্ষোভে অনধিকার চর্চা করছে কানাডা। আর যুক্তরাষ্ট্র দেশটার শাসক বিরোধীদের মদদ দিচ্ছে। অপরদিকে কানাডার যুক্তি ছিল, ইরানের জনগণের মৌলিক অধিকার রক্ষার শান্তিপূর্ণ লড়াইয়ে উজ্জীবিত বোধ করছে কানাডা। আর তখন ইরানের অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থা সত্যি খুব খারাপ ছিল। জর্জরিত হয়ে পড়ছিল একের পর এক বিক্ষোভে। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প টুইটারে লিখেছিলেন, ইরানের বড় বড় বিক্ষোভ গুলো প্রমাণ করে দিয়েছে, দেশটার মানুষ বুঝতে শিখেছে কিভাবে তাদের অর্থ আর সম্পদ চুরি হয়ে সন্ত্রাসে বিনিয়োগ করা হচ্ছে। মনে হচ্ছে, তারা আর এটা মানবে না। তখন ইরানের প্রেসিডেন্ট ছিলেন হাসান রুহানি। ইরানিদের সতর্ক করে বলেন, শত্রুরা সুযোগ নিতে পারে দেশকে এমন পরিস্থিতিতে ফেলা উচিত নয়। বিষয়গুলোকে এড়িয়ে যেতে হবে। তখন থেকে কিন্তু ইরান সরকার কানাডা সম্পর্কে একটু বেশ সতর্ক। দুই দেশের মধ্যে তিলে তিলে যে ক্ষোভটা বাড়ছিল এবার তা পুঞ্জীভূত হয়ে বিস্ফোরকের আকার নিতে শুরু করেছে।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম