।। প্রথম কলকাতা ।।
Bangladesh flood: ব্যাপক বৃষ্টি পাহাড়ি ঢলে ডুবলো সিলেট সুনামগঞ্জ। সুরমা সহ নদীগুলোর জল বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে। ৭২ঘন্টা ভারী বৃষ্টি হবে সঙ্গে বজ্রপাত এবং ঝড়। চেরাপুঞ্জি তে প্রবল বৃষ্টি আরও ভাসাবে সিলেট সুনামগঞ্জ কে। ১৯ হাজার মানুষ আশ্রয় কেন্দ্রের দিকে ছুটছেন। জলবন্দি ৭লাখ মানুষ। কেন বার বার ডুবছে সিলেট?আকস্মিক বন্যার কারণ ঠিক কী?
বর্ষা এখনও শুরুই হলনা, তার আগেই ভয়াবহ অবস্থা সিলেটে। আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে বন্যা পরিস্থিতি। টানা ৭২ ঘন্টার ভারী বৃষ্টি আর উজান থেকে নেমে আসা ঢলে হু হু করে বাড়ছে সিলেটের নদ নদীর জল। এরই মধ্যে জেলার প্রায় ৭ লাখ মানুষ বিপদে পড়েছেন। এখনও পর্যন্ত সিলেটের প্রায় ১২টি উপজেলাই প্লাবিত হয়েছে বন্যায়। সুনামগঞ্জের সুরমা, কুশিয়ারা, সারি ও সারি-গোয়াইন নদীর জল বইছে বিপদসীমার ওপর দিয়ে। তারই মধ্যেই আবহাওয়া দফতর জানাচ্ছে, ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে মেঘালয়ে। যার ফলে সিলেটের বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হবে বলেই আশঙ্কা প্রকাশ করছে প্রশাসন।
চলতি সপ্তাহের শুরুতেই একদিনে ভারতের চেরাপুঞ্জিতে ৩৯৫ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। যেখানে গত বুধবার সিলেটে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ছিল প্রায় ১৫৩ মিলিমিটার। দুইয়ে মিলিয়ে সিলেটের পরিস্থিতি এখন মারাত্মক ভয়ঙ্কর। জেলাটির ১১টি পয়েন্টের মধ্যে ৬টি পয়েন্টেই নদীর জল বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে।
বিশেষ করে গোয়াইনঘাট ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার অবস্থা তো খুবই খারাপ। বহু রাস্তাঘাট তলিয়ে গেছে জলের তলায়। ভেসে গেছে বিঘার পর বিঘা চাষজমি। ভেসে গেছে বহু পুকুরের মাছ। কেবল গোয়াইনঘাটেরই এক লাখ ২৫ হাজারের বেশি মানুষ এখন জলবন্দি।
ওদিকে বৃষ্টির তোড়ে তলিয়ে গেছে সিলেট এবং সুনামগঞ্জের বহু এলাকা। দুই জেলার বহু জায়গায় এখন কোমর সমান জল। মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে উঠেছেন ১৭ হাজার ২৮৫ জন মানুষ। সিলেট আবহাওয়া দফতর বলছে, আগামী ৭২ ঘন্টায় ভারী বর্ষণ, তুমুল বজ্রপাত আর ঝড় বয়ে যেতে পারে এ অঞ্চলের ওপর দিয়ে।
এর আগে ২০২২ সালেও সিলেট-সুনামগঞ্জ অঞ্চলে যে বন্যা হয়েছিল তাতেও প্রায় ৩০ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল।
তবে বার বার কেন এমনটা হচ্ছে? কেন প্রতিটা বছর ভূগতে হচ্ছে সিলেটের মানুষদের?
অন্যান্যবারের মত এবারও সবাই বলছেন অস্বাভাবিক বৃষ্টিই এই আকস্মিক বন্যার কারণে। আসলে সিলেট এবং মেঘালয়ের ভৌগলিক অবস্থানটাই এমন যে সেখানেই এমনিই বৃষ্টিপাত বেশি হয়। গত ২৭ মে থেকে ৩০ মে অবধি চলছে বৃষ্টি। চলতি বছর কেবল মে মাসে কমবেশি ৭৭৫ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে সিলেটে। সেই সাথে ভারতের মেঘালয়েও চলছে আকাশ ভাঙা বৃষ্টি। সেই জলও নামছে সিলেটে।
কিছুদিন আগেই রেমাল ঘূর্ণিঝড়ের কারণে প্রচু্র পরিমাণে জলীয় বাষ্প জমা হয়েছিল এই অঞ্চলে। তার উপর চলতি বছর আবার নির্ধারিত সময়ের আগেই ঢুকে পড়েছে মৌসুমী বায়ু। দুইয়ে মিলিয়ে বৃদ্ধি পেয়েছে বৃষ্টিপাতের পরিমাণটাও।
অসমের কী অবস্থা?
উত্তরপূর্ব ভারতের এই রাজ্যেও অন্তত ১৫ টি জেলা এখন জলমগ্ন। যার মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থা বরাক উপত্যকার বাংলাদেশ লাগোয়া জেলা করিমগঞ্জে। ভূমিধসে চাপা পড়ে প্রাণ হারিয়েছেন একই পরিবারের ৫ জন। এখনও পর্যন্ত বন্যার কবলে প্রাণ হারিয়েছেন মোট ৩১ জন। বিপদসীমার উপর বইছে অসমের করিমগঞ্জ জেলার কুশিয়ারা নদীর জল। গোটা আসাম জুড়ে বন্যা কবলিত গ্রামের সংখ্যা প্রায় ৫০০।
এদিকে ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে ব্রহ্মপুত্রও। ইতিমধ্যেই তার উপনদী কোপিলি নদী বিপদসীমার ওপর দিয়ে বইছে। এখন ব্রহ্মপুত্র ফুলেফেঁপে উঠলে তা হবে আরেক বিপদ। সমস্তটা মিলিয়ে বাংলাদেশের লাখ লাখ মানুষের এখন মাথায় হাত। এত এত ক্ষয় ক্ষতির সামনা কীভাবে করবেন? সেটাই ভেবে পাচ্ছেনা এই খেটে খাওয়া মানুষগুলি। এক কথায় একেবারেই ভালো নেই সিলেট, ভালো নেই সুনামগঞ্জ। বছর আসে বছর যায়, সিলেটের মানুষ নতুন করে স্বপ্ন সাজায়। কিন্তু প্রতি বছরই জলের তোড়ে ভেসে যায় সেইসব স্বপ্ন। এর শেষ কোথায়? আপাতত সেই উত্তরটাই হাতড়াচ্ছেন এই মানুষগুলি।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম