।। প্রথম কলকাতা ।।
Spices: সুস্বাদু রান্নার জন্য নানান রকম মশলার কোনো বিকল্প নেই। এই মশলা কখনো বেটে কখনো গুঁড়ো ব্যবহার করা হয়। তবে আমাদের দেশে গোটা বা কাঁচা মশলা দিয়ে রান্নার প্রচলন কম। এখন প্রায় প্রত্যেকের রান্না ঘরেই রয়েছে একটি করে মিক্সার গ্রাইন্ডার। শিলনোড়া অস্তিত্বহীন হয়ে গেছে বললেই চলে। তবে সম্প্রতি ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিকেল রিসার্চ নিজেদের নির্দেশিকায় জানিয়েছেন গুঁড়ো মশলা খাবার থেকে অনেক বেশি নিরাপদ গোটা মশলা খাওয়া। আগেকার দিনে শিলে বাটা মশলার চল ছিল বেশি। প্রতিটি বাড়িতেই থাকতো শিলনোড়া। তাতেই পেশাই হতো যে কোনো মশলা।
এখন অনেকে বলে থাকেন বাটা মশলার রান্নাতে স্বাদ আলাদা। আগেকার দিনে যেভাবে রান্না হতো তাতেই নাকি স্বাদ বেশি মিলতো। যদিও এগুলো ব্যক্তি বিশেষে নির্ভর করে।
এখনকার যুগে দাপট বেশি গুঁড়ো মশলার। বাজারেই প্যাকেট বন্দি গুঁড়ো মাস্টার পাওয়া যায় সহজে বাটারও কোনো ঝামেলা নেই। সময় বাঁচে খাটনি কম। কিন্তু তারপর প্রশ্ন থাকে গুঁড়ো মশলায় কি বাটা মশলার মতো স্বাদ হয়? ভেজাল নেই তো? বর্তমানে কোনো কোনো অসাধু ব্যবসায়ী গুঁড়ো মশলায় বিষাক্ত রং, কাঠের গুঁড়ো, ধানের তুষ ,সিসা নিষিদ্ধ মালকাইডগ্রিন ইত্যাদি মেশায়। এই বিষাক্ত পদার্থ গুলি কিডনি লিভারে বিভিন্ন রোগ সহ সব ধরনের ক্যান্সারে ঝুঁকি বাড়ায়।
তাই বাজার থেকে কেনা গুঁড়ো মশলার পরিবর্তে ঘরে বেটে নেওয়া তাজা মশলা অধিক স্বাস্থ্যকর। এছাড়া হলুদ আদা রসুন পেঁয়াজ কিন্তু চাইলেই গোটা ব্যবহার করা যায়। কোটা মশলা ব্যবহারে রান্নায় চমৎকার ঘ্রাণ আসে। মাস্টার এই প্রাকৃতিক তেল বাণিজ্যিকভাবে প্রস্তুত কালে নষ্ট হয়ে যায়। অনেক সময় আমরা লবঙ্গ বা গোলমরিচ গুঁড়ো করে অনেকদিন ব্যবহার করি। এতে এন্টিমাইক্রোবিয়াল উপাদান নষ্ট হয়। এক্ষেত্রে কিছুটা ছেচে ব্যবহার করা ভালো।
রসুনের ক্ষেত্রে কুঁচি করে তাৎক্ষণিক ব্যবহার করা হলে অ্যালাইনেজ নামক এনজাইম নিঃসৃত হয়ে উপকারী অরগানো সালফার অ্যালিসিনের উপকারিতা তৈরি করে। যখন রসুন বাটা হয় এবং লম্বা সময় ফ্রিজে সংরক্ষণ করা হয় তখন ঠান্ডা তাপমাত্রাও বাতাসের সংস্পর্শে অ্যালিসিনের পরিমাণ অনেক অংশ কমে যায়। এছাড়া বর্তমানে রান্নায় ব্যবহৃত হয় গার্লিক পাউডার। এক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে স্বাদ বাড়ালেও বাণিজ্যিকভাবে প্রস্তুত হওয়ায় অ্যালিসিনের কার্যকারিতা অনেকটাই নষ্ট হয়ে যায়।
আদা বাটার ফলও কিছু উপকারী উপাদান হারিয়ে যায় বাটা দা অপেক্ষা মিহি কচি করা আদা, রান্নায় ব্যবহার করলে সর্বোচ্চ উপকারিতা পাওয়া যায়। বাণিজ্যিকভাবে প্রস্তুত শুকনো আদার ক্ষেত্রেও জিনজারলের উপকারিতা কমে যায়। আমাদের দেশীয় রান্নায় সাধারণত হলুদ গুঁড়ো ব্যবহার করা হয়। তবে ফ্রেশ হলুদ বেটে রান্নার ব্যবহার করলে স্বাদ বেশি আসে। কারকিউমিনের সম্পূর্ণ উপকারিতা পাওয়া যায়। অনেক সময় ভেজাল মশলার চক্র ফাঁসের খবর শোনা যায়। ভেজাল মিশিয়ে হলুদ গুঁড়ো ধনে গুঁড়ো বা লঙ্কার গুঁড়ো প্যাকেট যত করা হচ্ছে। প্রায়শই এসব শোনা যায়। তাই চিন্তা এড়াতে গোটা মশলা কিনে মিক্সিতে গুঁড়ো করে নেওয়া যায় মিক্সিতে জল মশলা মিশিয়ে বেটেও নেওয়া যায়।
তবে হ্যাঁ শ্রম সাপেক্ষে সময় বেশি লাগে। ফলে যদি একেবারেই সময় না মেলে তাহলে একটু ভালো ব্র্যান্ডের মশলা কিনলে হয়তো ভেজাল থাকবে না। প্রয়োজনে কিছু ব্রান্ড ঘুরিয়ে ফিরিয়ে মশলা পরীক্ষা করে তারপর নিশ্চিত হতে পারেন। মশলা কতটা খাবেন না খাবেন সেটা কিন্তু আপনার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে একমাত্র চিকিৎসকই বলতে পারেন।আর মনে রাখতে হবে মশলার ব্যবহারের ক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে বাটা ও দীর্ঘ সময় সংরক্ষণের ফলে যাতে মশলার গুরুত্বপূর্ণ উপাদান বাতাসের সংস্পর্শে জারিত হয়ে হারিয়ে না যায়।
আর বাণিজ্যিকভাবে প্রস্তুতকৃত গুঁড়ো মশলার ক্ষেত্রে উপকারী উপাদান গুলোর ৬০ শতাংশ আমরা পাই বাকি ৪০ শতাংশ প্রস্তুত কালে হারিয়ে যায়। তাইতো খাদ্য সংক্রান্ত ১৭ টি নির্দেশিকার মধ্যে একটি নির্দেশিকা পরিষ্কার বলা হয়েছে কোনোভাবেই গুঁড়ো মশলা খাওয়া উচিত নয়। গুঁড়ো মশলার রং আকার এবং আকৃতি কৃত্রিমভাবে তৈরি হয়। এটি স্বাস্থ্যের পক্ষে ভীষণ ক্ষতিকারক। গোটা মশলা পিষে যদি রান্না করেন সে ক্ষেত্রে আপনার রান্নার স্বাদ যেমন বাড়বে তেমন আপনার শরীরও ভালো থাকবে।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম