।। প্রথম কলকাতা ।।
Iran: মার্কিন বিমানবাহী রণতরীতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো হুথি। দিনের পর দিন এই সশস্ত্র গোষ্ঠী যেভাবে শক্তি বাড়াচ্ছে, তাতে গোটা বিশ্বজুড়ে একদিন যুদ্ধের দামামা বাজিয়ে দিতে পারে। আশঙ্কায় ইসরায়েল সহ পশ্চিমি দুনিয়া। যুক্তরাষ্ট্রের জাহাজ গুলোকে এত সহজে হুথি কীভাবে টার্গেট করছে? ইসরায়েলের সাথে শত্রুতা মেটাতেই কি যুক্তরাষ্ট্রের উপর এত রাগ? হুথিদের মূল সাপোর্টার ইরান। সামনে থেকে নয়, পশ্চিমা বিশ্বকে ইরান জব্দ করতে চাইছে সশস্ত্র গোষ্ঠীর মাধ্যমে। হুথি এখন তেহরানের বড় অস্ত্র। যে কোনো মুহূর্তে হুরমুড়িয়ে ভেঙে পড়তে পারে, বিশ্ববাণিজ্যর কাঠামো। টার্গেটে রেখেছে লোহিত সাগরকে। এদের ক্ষমতা জানলে তাজ্জব হয়ে যাবেন।
হুথিদের টার্গেটে লোহিত সাগর, ভয় পাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র!
মধ্যপ্রাচ্যের ইরান সমর্থিত গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের দ্বন্দ্ব একেবারেই নতুন নয়। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে গাজায় বেসামরিক মানুষদের উপর ইসরায়েলের হামলা শুরু হতেই সবাই যেন জোট বেঁধেছে ইসরায়েল আর যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে। এবার দেখে দেখে মার্কিন বিমানবাহী রণতরীতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা। এটা কিন্তু ছোটখাটো কোন ব্যাপার নয়। সাম্প্রতি অত্যন্ত উত্তেজনাময় পরিস্থিতির মধ্যে নিয়ে যাচ্ছে লোহিত সাগর। এটি বিশ্বের অন্যতম বাণিজ্য পথ, আর সেখানেই টার্গেট করেছে মধ্যপ্রাচ্যের ইরান সমর্থিত সশস্ত্র গোষ্ঠী গুলো। লোহিত সাগরে মোতায়ন ছিল মার্কিন বিমানবাহী আইজেনহাওয়ার । এবার সেখানেই বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইয়েমেনের সশস্ত্র গোষ্ঠী হুথি। তবে কেন এই হামলা চালাল, তার কারণ জানতে গেলে ফিরে যেতে হবে কয়েক মাসের আগের ঘটনায়। হুথি সশস্ত্র গোষ্ঠীর দাবি, তারা যুক্তরাষ্ট্র আর যুক্তরাজ্যের যৌথ হামলার জবাবে পাল্টা হামলা করেছে।
বিগত কয়েক মাস ধরেই কিন্তু ইয়েমেনের হুথি সদস্যরা লোহিত সাগরের জাহাজে একের পর এক হামলা চালিয়ে আসছে। বিশেষ করে যে জাহাজগুলো সঙ্গে ইসরায়েলের সম্পর্ক রয়েছে, সেগুলোকেই টার্গেট করছে তারা। মূলত হুথি গোষ্ঠী ইরানের সমর্থক, পাশাপাশি হামাসের সমর্থক। হামাস আর ইসরায়েলের যুদ্ধ বাঁধার পর থেকেই তাদের এখন মূল টার্গেট ইসরায়েল আর যুক্তরাষ্ট্রের জাহাজগুলো। অপরদিকে যুক্তরাষ্ট্র আর যুক্তরাজ্যের টার্গেট ছিল, হুথিদের ব্যবহৃত হেলিকপ্টার, ড্রোন, রাডার, অস্ত্র গুদাম আর বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। কয়েকদিন আগেও যুক্তরাজ্য আর যুক্তরাষ্ট্রের যৌথ হামলায় নিহত হয়েছে ইয়েমেনের সশস্ত্র গোষ্ঠীর প্রায় ১৪জন হুথি সদস্য। আহত হয়েছে প্রায় ৩০ জনের বেশি। আসলে কি বলুন তো, লোহিত সাগরে এখন এটা যেন একটা স্বাভাবিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। চলতি বছরে ফেব্রুয়ারিতেই দুই দেশের বিমান হামলায় হুথিদের অন্তত ১৮টা স্থাপনা ধ্বংস হয়ে যায়। এমনটাই জানিয়েছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বিভাগের সদর দপ্তর পেন্টাগন।
সেই সময় এই হামলাকে পুরোদমে সমর্থন করেছিল অস্ট্রেলিয়া, বাহরাইন, কানাড, ডেনমার্ক, নেদারল্যান্ড, নিউজিল্যান্ডের মতো দেশগুলো। যুক্তরাজ্যের যুক্তি, তারা মিত্রদের সঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে হুথিদের ক্ষমতাকে কমানোর কাজ করে যাচ্ছে। অপরদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যুক্তি, তারা বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নৌ রুটের বাণিজ্য প্রবাহ নিশ্চিত করতে, যে কোনো রকম পদক্ষেপ নিতে পারে। এই হামলার আগেই অর্থাৎ গত নভেম্বর মাসে লোহিত সাগরের গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক রুটে চলাচলকারী মালবাহী জাহাজে হামলা চালিয়েছিল ইরান সমর্থিত হুথি বিদ্রোহীরা। এই ধরনের পাল্টাপাল্টি আক্রমণ মোটামুটি চলতেই থাকে। আসলে, লোহিত সাগর বিশ্বের ব্যস্ততম বাণিজ্যক রুট গুলোর মধ্যে অন্যতম। হুথিদের হামলার ভয় বহু বড় বড় কোম্পানি এই রুট থেকে তাদের পণ্যবাহী জাহাজ সরিয়ে দিয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই, তার মারাত্মক এফেক্টে গিয়ে পড়ছে গোটা বিশ্বের পণ্য সরবরাহ ব্যবস্থায়। হুমকির মুখে পড়েছে বাণিজ্যিক নৌযান আর নিরীহ নাবিকদের জীবন। বিশ্ব অর্থনীতির পাশাপাশি উত্তেজনা তৈরি হয়েছে আঞ্চলিক নিরাপত্তা এবং স্থিতিশীলতায়।
ইসরায়েল নয়, হুথিদের মূল উদ্দেশ্য ইরানের পাশে থাকা
যেদিন থেকে ইসরায়েল আর হামাসের দ্বন্দ্ব শুরু হয়েছে, সেদি। থেকেই হুথি সদস্যরা লোহিত সাগরে জাহাজের হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের দাবি, যে জাহাজগুলোর সঙ্গে ইসরায়েলের সম্পর্ক সেই জাহাজগুলোকেই তারা লক্ষ্য বস্তু করছে। ইসরায়েল যখন গাজায় যুদ্ধ বন্ধ করবে, তখনই তারা জাহাজে হামলা বন্ধ করবে, তার আগে নয়। আর এখানেই একটা বড় প্রশ্ন। হুথিরা কেনইবা জাহাজে হামলা করছে ? শুধুই কি ইসরায়েলের সাথে শত্রুতার কারণে? বহু সমালোচনক বলছেন, সাম্প্রতিক সময়ে যেসব জাহাজে তারা হামলা চালাচ্ছে সেগুলোর বহু জাহাজের সাথে কিন্তু ইসরায়েলের কোন সম্পর্ক নেই। তাহলে কি, গাজার পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে নিজেদের জনপ্রিয়তা বাড়াতে চাইছে হুথিরা? প্রদর্শন করছে নিজেদের শক্তিমত্তা। ইরানের কাছে প্রমাণ করে দিচ্ছে, যে তারা তেহরানের কার্যকরী মিত্র হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ। নৌ বাণিজ্য পথে হুথি হামলার অন্যতম আর একটা উদ্দেশ্য হল, বেশি সংখ্যা দেশকে এই সংঘাতে জড়িয়ে দেওয়া। যদিও ইসরায়েল ইতিমধ্যেই জানিয়ে দিয়েছে, যদি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চুপ থাকে, তাহলেও তারা হুথিদের বিরুদ্ধে একইভাবে লড়বে। ওদিকে যুক্তরাষ্ট্র যুক্তরাজ্যের মতো পশ্চিমা দেশগুলোও কিন্তু হুথিদের ছেড়ে কথা বলছে না।
কতটা শক্তিশালী হুথিরা? জোর টক্কর পশ্চিমি বিশ্বের সঙ্গে
হুথিদের সামরিক সক্ষমতা ঠিক কতটা? যার জোরে বারংবার টক্কর দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র আর যুক্তরাজ্যের সাথে! সাধারণত লোহিত সাগরে জাহাজে হামলার ক্ষেত্রে হুথিরা ব্যবহার করে ব্যালিস্টিক মিসাইল ড্রোন চালকবিহীন জাহাজ আর ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র। আবার কখনো বা ছোট ছোট নৌকা কিংবা হেলিকপ্টার নিয়ে উঠে পড়ে বড় জাহাজে। তারপর সেই জাহাজ দখল করার চেষ্টা চালায়। হুথিরা যে কামিকাজে ড্রোন ব্যবহার করে, মনে করা হয় এগুলো মূলত কাসেফ ড্রোন। এই ধরনের অস্ত্র সেই সৌদি আরবের সঙ্গে সংঘাতের সময় থেকেই তারা ব্যবহার করে আসছে। আর যে ধরনের জাহাজ বিধ্বংসী ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে, সেগুলোও প্রায় ৮০ থেকে ৩০০ কিলোমিটার পর্যন্ত আঘাত হানতে সক্ষম। যার মধ্যে অন্যতম সায়াদ আর সেজ্জিল মিসাইল। কূটনৈতিক মহলের মতে, হুথি গোষ্ঠীর কাছে এমন কিছু বিধ্বংসী ব্যালেস্টিক মিসাইল আছে, যা অত্যন্ত দ্রুতগতির হয়। যে কোনো মুহূর্তে আক্রমণ শানাতে পারে লোহিত সাগরে। বড় খটকার জায়গাটা কি বলুন তো, এই হুথি শুধুমাত্র একটা দেশের সশস্ত্র গোষ্ঠী, কিন্তু নেপথ্যে রয়েছে তাবড় তাবড় দেশের হাত। হুথিরা সবসময় নিজেদেরকে ইরান দ্বারা সমর্থিত এবং ইরানের প্রতিরোধ বলয়ের অংশ হিসেবে জোর গলায় ঘোষণা করে এসেছে। আর এই এক্সিস অফ রেসিসট্যান্স বা প্রতিরোধের বলয়ের অন্যান্য দল গুলোর মধ্যে রয়েছে লেবাননের হিজবুল্লাহ্, গাজার হামাস, সিরিয়ার আসাদ সহ ইরান সমর্থিত বহু সশস্ত্র গোষ্ঠী। বিশেষ করে যারা যুক্তরাষ্ট্র এবং ইসরায়েলের প্রতিপক্ষ।
এই হুথিদের অস্ত্র সরবরাহ থেকে শুরু করে প্রশিক্ষণ দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে ইরানের বিরুদ্ধে। হুথিদের হামলার উত্তাপ ছড়িয়ে যেতে পারে আরো বৃহত্তর অঞ্চল জুড়ে। ইয়েমেনে প্রায় ১ দশক ধরে চলা গৃহযুদ্ধের একটা বড় পক্ষ এই হুথি। যাদের উত্থান ঘটেছিল ১৯৯০ সালে। সেই সময় উত্তর আর দক্ষিণ ইয়েমেন একত্রিত হলে, দেশটার প্রসিডেন্ট প্রথমদিকে হুথিদের সংগঠনকে সমর্থন করতেন। যদিও পরবর্তীকালে হুথিদের আন্দোলন শাসক বিরোধী হয়ে ওঠায় তা ইয়েমেন সরকারের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এই হুথিদের আন্দোলনের কারণেই কিন্তু ইয়েমেনের প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে জারি হয়েছিল গ্রেফতারি পরোয়ানা। তাই হুথিদের দুর্বল ভাবাটা বড় ভুল। ২০১৪ সালে ইয়েমেনের গৃহযুদ্ধ তীব্র হলে সৌদি আরবের সঙ্গে ক্রমবর্ধমান দ্বন্দ্বের জেরে, হুথিদের সাহায্য আরও বাড়িয়ে দিয়েছিল ইরান। শোনা যায় সমুদ্র মাইন, ব্যালেস্টিক, ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র ড্রোন সহ বহু অস্ত্রশস্ত্র এবং কারিগরি সুবিধা দিয়ে ইরান হুথিদের সাহায্য করে থাকে। মার্কিন সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে গঠিত ইরানের কথিত অ্যাক্সিস অব রেসিস্ট্যান্সের কিন্তু অন্যতম অংশ এই হুথি। দিনের পর দিন তারা অস্ত্র এবং প্রশিক্ষণের মডিফিকেশনের মাধ্যমে তাদের ক্ষমতা আরো বাড়াচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের আশঙ্কা এভাবেই যদি চলতে থাকে, তাহলে একদিন না একদিন ঠিক লোহিত সাগর থেকে পশ্চিমা বিশ্ব তাদের কর্তৃত্ব হারাবে। যেখানে রাজ করবে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো। আরো মজবুত হবে মধ্যপ্রাচ্যের অর্থনীতি। তখন পশ্চিমা বিশ্বের দেশগুলো খুব একটা পাত্তা পাবেনা। বিশ্ব বাণিজ্যের পুরো রাশটাই চলে যাবে ইরান ইরাক সৌদি আরবের মতো দেশগুলোর হাতে।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম