।। প্রথম কলকাতা ।।
Israel-Palestinian conflict: এবার ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার কথা ভাবছে ফ্রান্স। পশ্চিমা বিশ্বে যেন উল্টো রাজনীতি। যুক্তরাষ্ট্র আর ইসরায়েলের প্রিয় বন্ধু ফ্রান্স কিনা এবার ফিলিস্তিনের পাশে? হঠাৎ ইউরোপের দেশগুলোর কি এমন হল? গাজায় বেসামরিক মানুষদের উপর হামলা পাল্টে দিচ্ছে পুরো বিশ্ব রাজনীতি। একের পর এক বন্ধু হারাচ্ছেন নেতানিয়াহু। কিন্তু এতে আদৌ কি লাভ হচ্ছে ফিলিস্তিনের? রাষ্ট্রের স্বীকৃতি পেলেই কি শান্ত হবে মধ্যপ্রাচ্য? নাকি সবটাই কূটনৈতিক কৌশল মাত্র? ফিলিস্তিনের স্বীকৃতিতে প্রচুর জটিলতা।
ইসরায়েল নয়, ফিলিস্তিনের পাশে ফ্রান্স ডবল গেম খেলছে না তো?
স্পেন নরওয়ে আয়ারল্যান্ডের পর এবার ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দেওয়ার কথা বলছে ফ্রান্স। সিদ্ধান্ত এখনো চূড়ান্ত হয়নি, তবে দেশটার প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রন স্পষ্ট বলে দিয়েছেন, ফ্রান্স ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিতে প্রস্তুত। বলে রাখা ভালো, ফ্রান্স সেই দেশ যে দেশটা সবসময় যুক্তরাষ্ট্রের পাশে থেকেছে। যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র তালিকায় একদম প্রথম দিকে রয়েছে ফ্রান্স। যখন ইরান ইসরায়েলের উপর হামলা চালিয়েছিল, তখন ইসরায়েলকে বাঁচাতে যুক্তরাষ্ট্র যুক্তরাজ্যের পাশাপাশি এগিয়ে এসেছিল ফ্রান্স। আর সেই ফ্রান্স এখন সিদ্ধান্ত নিচ্ছে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গিয়ে। ইসরায়েল কিন্তু কখনই ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিতে চায় না। শুধু তাই নয়, ইসরায়েলের এই সিদ্ধান্তে সহমত যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু বন্ধু রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে গিয়ে হঠাৎ ফ্রান্স এত বড় সিদ্ধান্ত নিচ্ছে কেন? এটাও একটা বড় সংশয়ের জায়গা।
ওদিকে একই দিনে ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দিয়েছে, স্পেন নরওয়ে আর আয়ারল্যান্ড। ইউরোপীয় ইউনিয়নের ২৭ টি রাষ্ট্রের মধ্যে ইতিমধ্যেই ইউরোপে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিয়েছে সুইডেন, সাইপ্রাস, চেক প্রজাতন্ত্র, পোল্যান্ড, স্লোভাকিয়া, রোমানিয়া এবং বুলগেরিয়া। সাম্প্রতিক মাস গুলোতে অস্ট্রেলিয়া যুক্তরাজ্য মাল্টা স্লোভেনিয়াও কিন্তু ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছে তারা ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেবে। ইউরোপের এক একটা দেশ যখন ফিলিস্তিনের পাশে এসে দাঁড়াচ্ছে, ফিলিস্তিনের হয়ে কথা বলছে, ঠিক তখনই কিন্তু ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রন এর এত বড় ঘোষণা। জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলজের সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, ফ্রান্সের কাছে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়া কোন নিষিদ্ধ বিষয় নয়। তবে হ্যাঁ, সেটা উপযোগী একটা সময় দেওয়া উচিত। এই যে ‘ তবে ‘ কথাটা বলছেন অর্থাৎ এখানেও রয়ে গিয়েছে একগুচ্ছ প্রশ্ন। কূটনৈতিক মহলের একাংশ মনে করছে, তাহলে কি ফ্রান্স ভাবনা চিন্তা করছে? যুক্তরাষ্ট্র আর ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যাবে কি যাবে না? কারণ এত বড় একটা স্টেপ নিলে, ফ্রান্সের বন্ধু রাষ্ট্রগুলো শত্রু হতে বেশি সময় লাগবে না। সাম্প্রতিক সময়ে, ইসরায়েল হামাস দ্বন্দ্বকে কেন্দ্র করে গাজায় যে হামলা চলছে, তার ফলে কার্যত অভ্যন্তরীণ চাপে রয়েছে ফ্রান্স।
ইসরায়েলের ডোন্ট কেয়ার ভাব, হু হু করে বাড়ছে শত্রু
ইতিমধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের বহু বিশ্ববিদ্যালয়ে গাজায় বেসামরিক মানুষের উপর ইসরায়েলের হামলার বিরুদ্ধে আন্দোলন চলছে। আর সেই আন্দোলনের উত্তাপ ছড়িয়েছে ফ্রান্সেও। ফ্রান্সের সব থেকে নামকরা বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর মধ্যে অন্যতম সায়েন্সেস পো বিশ্ববিদ্যালয়। যেখানে শিক্ষার্থীদের একাংশকে ইসরায়েলি বিশ্ববিদ্যালয় গুলিকে বর্জনের আহ্বান জানিয়ে বিক্ষোভ করতে দেখা গিয়েছে। বহু কূটনীতিকদের মতে, হয়তোবা ফ্রান্স কোথাও গিয়ে একটু ভয় পাচ্ছে। কারণ প্রথম থেকে ইসরায়েলের পাশে দাঁড়ানোর জন্য যেভাবে গোটা বিশ্বজুড়ে যুক্তরাষ্ট্রকে সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে, সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে যদি ফ্রান্সকেও সেই সমালোচনার সম্মুখীন হতে হয়, তাহলে বিষয়টা দেশটার পক্ষে খুব একটা ভালো হবে না। বিরোধী দলগুলো এই ইস্যুটাকে হাতিয়ার বানিয়ে ফ্রান্স সরকারের বিরুদ্ধাচরণ করতে পারে। এমত পরিস্থিতিতে ফরাসি প্রেসিডেন্টের কথায়, ফ্রান্সের জন্য কোন লুকোচুরি নেই। তিনি একটা স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিতে একেবারেই প্রস্তুত।
কিন্তু সেই স্বীকৃতি হবে একটা কার্যকর মুহূর্তে। অর্থাৎ এই মুহূর্তে আপাতত ফ্রান্স ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিচ্ছে না। তবে স্বীকৃতি দেওয়ার কথা ভাবছে। আর সেটা সর্বসমক্ষে এসে ফ্রান্স স্বীকারও করল। ফ্রান্স কিন্তু এখানে বারংবার একটা কথাই বলছে, বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে আক্রান্ত বেসামরিক নাগরিকদের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই বলেই মনে করে দেশটা। রাফা পরিস্থিতিকে ভয়াবহ বর্ণনা করে বলেন, রাফায় ইসরায়েলি অপারেশন অবশ্যই বন্ধ করতে হবে। ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকার আছে কিন্তু অবশ্যই তাদের উচিত, আন্তর্জাতিক সহ মানবিক আইনকে সম্মান করা। আলজেরিয়া ফিলিস্তিন বিষয়ে একটি জরুরি সভা ডাকতে জাতিসংঘের অনুরোধ জানিয়েছে, আর আলজেরিয়ার এই সিদ্ধান্তকে সমর্থন জানিয়েছেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট। মোটামুটি ভাবে, ইসরায়েল আর ফিলিস্তিন সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধানে কাজ করতে প্রস্তুত ফ্রান্স। এই মুহূর্তে সবথেকে জরুরী হল যুদ্ধ বিরতি। প্রসঙ্গত বলে রাখি, গতবছরের ৭ই অক্টোবর ইসরায়েল যখন হামাসের হামলায় পাল্টা গাজায় সামরিক অভিযান শুরু করেছিল, তখন প্রকাশ্যে ইসরায়েলের প্রতি সমর্থন জানিয়েছিল এই ফ্রান্স। কিন্তু যতদিন যাচ্ছে ততই যেন বদলে যাচ্ছে আন্তর্জাতিক কূটনীতির অঙ্কটা।
বিশ্ব রাজনীতিতে ইসরায়েল কোণঠাসা হলেও, দমে যায়নি। ইসরায়েল তার লড়াইটা লড়ছে নিজের মতো করে। বন্ধু রাষ্ট্রগুলো যখন একের পর এক পাশ থেকে সরে যাচ্ছে, সেই বিষয়গুলোকেও নেতানিয়াহুর দেশ খুব একটা পাত্তা দিচ্ছে না। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যে বন্ধুত্বে চিড় ধরেছে, সেখানেও ইসরায়েলকে খুব একটা উদ্বিগ্ন হতে দেখা যায়নি। তবে ফ্রান্সের সঙ্গে ইসরায়েলের সম্পর্কে ভাঙন ধরতে পারে। যেমনটা হয়েছে আয়ারল্যান্ড স্পেন আর নরওয়ের সঙ্গে। তাদের সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে ইসরায়েল বলেছে, ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি হামাসের হাতকে আরো শক্তিশালী করবে। যারা গত ৭ই অক্টোবর ইসরায়েলে হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছিল। ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেয়ার প্রতিবাদে ইসরায়েল কিন্তু ইতিমধ্যেই এই তিন দেশের রাজধানী মাদ্রিদ অসলো আর ডাবলিন থেকে তাদের রাষ্ট্রদূত প্রত্যাহার করে নিয়েছে। যদি ফ্রান্সও ফিলিস্তিনকে চূড়ান্ত হবে স্বীকৃতি দিতে রাজি হয়, সেক্ষেত্রে ইসরায়েলের সঙ্গে ফ্রান্সের সু সম্পর্কে যে ভাঙন ধরবে তা আগে থেকে আন্দাজ করাই যায়।
গাজার বেসামরিক মানুষদের হয়ে কথা বলছে বহু রাষ্ট্র নেতারা। এই তো, ইতালির পার্লামেন্টে যখন গাজায় ইসলায়েলি সামরিক অভিযান নিয়ে কথা হচ্ছিল, ঠিক সেই সময় ফিলিস্তিনের পতাকা দেখিয়েছেন দেশটার বিরোধী দল ফাইভস্টার মুভমেন্টের বেশ কয়েকজন আইন প্রণেতা। পাশাপাশি তারা গাজাকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। বিভিন্ন দেশের বিরোধী দলের সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে লক্ষ্য করা যাচ্ছে একই চিত্র। ওদিকে আবার নতুন বার্তা দিয়েছে কানাডা। ফিলিস্তিনিদের জন্য ট্রুডো সরকার বাড়িয়েছে বরাদ্দকৃত ভিসার সংখ্যা।
স্বীকৃতি পেলেই কি বাঁচবে ফিলিস্তিন? রয়েছে বিস্তর জটিলতা
যখন ইউরোপীয় দেশ হিসেবে স্পেন আয়ারল্যান্ড আর নরওয়ে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছিল, তখনই সেই সিদ্ধান্ত একটা পরোক্ষ চাপ তৈরি করেছিল অন্যান্য দেশের উপর। বিশেষ করে ইংল্যান্ড ফ্রান্স আর জার্মানিতে। চাপের মুখে ফেলেছে গোটা ইউরোপীয় ইউনিয়নকে। ইসরায়েলের মন্ত্রীরা বারংবার বলছে, এমন সিদ্ধান্ত হামাসকে আরও বেশি করে উৎসাহিত করবে, সন্ত্রাসবাদকে স্বাগত জানাবে, কিন্তু ইসরায়েলের কথা কোন গুরুত্বই পাচ্ছে না। মধ্যরাচ্যে ইসরায়েলের বন্ধু বলয় বেশ দুর্বল। কিন্তু পশ্চিমা দুনিয়ায় ইসরায়েলের বন্ধু সংখ্যা কম নেই। আর সেই জায়গাটাতে গিয়েই এবার মার খাচ্ছে ইসরায়েল। প্রায় ১৪৬ টা দেশ আনুষ্ঠানিকভাবে ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে জোর বাড়ছে ফিলিস্তিনের। তবে এখানেও রয়ে গিয়েছে একটা বড় খটকার জায়গা। এই যে ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিচ্ছে, এখানে ফিলিস্তিনে ঠিক কতটা লাভ? এই মুহূর্তে মধ্যপ্রাচ্যের চলমান সংঘাতের দীর্ঘমেয়াদী একটা রাজনৈতিক সমাধানের অংশ হিসেবে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি পাচ্ছে। বহু ইউরোপীয় দেশ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখনো কিন্তু ফিলিস্তিনকে আলাদা দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি।
যেখানে প্রায় উল্লেখ করা হচ্ছে, দ্বি রাষ্ট্র সমাধান অর্থাৎ টু স্টেট সলিউশনার কথা। যে তত্ত্বটি এসেছিল ১৯৯৩ সালের অসলো শান্তি আলোচনার মাধ্যমে। এই আলোচনার মাধ্যমে কিন্তু একটা সময় ইসরায়েল আর ফিলিস্তিন উভয় তাদের নিজস্ব সীমানাসহ নিজস্ব রাষ্ট্রের বিষয়ে সম্মত হয়েছিল। কিন্তু চূড়ান্তভাবে কোন লাভই হয়নি। ফিলিস্তিন কে যে আলাদাভাবে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া উচিত, তা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র আর ইউরোপীয় বহু দেশের মধ্যে যথেষ্ট মতপার্থক্য রয়েছে। আর প্রশ্নটা তো এই জায়গায়। যদি উভয়পক্ষ একই ধরনের রাজনৈতিক সমাধানের দিকে গুরুত্ব দেয়, তাহলে বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্যে যে সংকট চলছে তার একটা টেকসই সমাধান মিলবে। কিন্তু সেটা হচ্ছে কই! যে দেশগুলো ফিলিস্তিনের প্রতি সমর্থন দেখাচ্ছে তাদেরকে সামলাতে হচ্ছে অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক চাপ। সোজা কোথায়, এই রাষ্ট্রগুলো ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দিতে চাইছে তাদের একটা কূটনৈতিক সাফল্যের বড় অর্জন হিসেবে। শেষমেষ ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়া একটা প্রতীকী বিষয় হিসেবে থেকে যাবে না তো? কূটনৈতিক গুরুত্ব অবশ্যই আছে, কিন্তু যদি ফিলিস্তিনের সংকট না মেটে, তাহলে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি পেয়ে লাভটাই বা কী? এখনো ইউরোপের বহু দেশ মনে করে ফিলিস্তিন স্বাধীন রাষ্ট্র হওয়া উচিত, কিন্তু এর ফলে ফিলিস্তিনের বাস্তবতার আদৌ কি পরিবর্তন হবে? আপনার কী মনে হয়?
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম