।। প্রথম কলকাতা ।।
Israel-Hamas War: বিশ্রী রকম চাপে জর্জরিত ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু। টানাটানি হচ্ছে তাঁর গদি নিয়ে। এই মুহূর্তে গাজায় যুদ্ধ না থামলে কপাল পুড়তে পারে তাঁর। সেই চাপে, ভিতরে ভিতরে আলোচনা করছেন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে। জো বাইডেন বলেই দিলেন, একটা শর্তে এক্ষুনি থেমে যাবে গাজা যুদ্ধ। স্বস্তি পাবে গাজার মানুষগুলো। কিন্তু হামাস ইসরায়েলের কথা মানবে তো? যুক্তরাষ্ট্র আর ইসরায়েলের সম্পর্কের ফাটল জিতিয়ে দিচ্ছে হামাসকে! গাজা বাসীর করুণ অবস্থা, জল পর্যন্ত নেই। বাড়ছে মৃতের সংখ্যা। বাইডেনের কথায় মিলল বড় স্বস্তি।
•ইসরায়েল জুড়ে বিক্ষোভ, ভয়ঙ্কর চাপে নেতানিয়াহু
আসলে জিম্মি মুক্তির বিষয়ে ভয়ঙ্কর চাপে রয়েছে বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। হামাসের হাতে বন্দিদের অবিলম্বে মুক্তির জন্য এবং নেতানিয়াহু সরকারের পদত্যাগের দাবিতে ইসরায়েল জুড়ে বিক্ষোভ করছে হাজার হাজার মানুষ। যা আশঙ্কা করা হয়েছিল হয়ত সেটাই হতে চলেছে। এই যুদ্ধ নাড়িয়ে দিতে পারে নেতানিয়াহুর গদি। বিষয়টা কিন্তু শুধুমাত্র এখানেই থেমে থাকেনি। ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রধান কার্যালয় সামনে, পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েছে সরকারবিরোধী বিক্ষোভকারীরা । গাজায় জিম্মিদের পরিবার ইসরায়েলে তেল আবিবের পাশাপাশি আন্দোলন করছে সিজারিয়া, রেহোভোত এবং হাইফা সহ অন্যান্য শহরে। জিম্মিদের পরিবারের কিছু কিছু সদস্যরা রীতিমত তীব্র সমালোচনা করছে নেতানিয়াহুর। তাদের মতে, শুধুমাত্র নেতানিয়াহুর কারণেই নাকি জিম্মি চুক্তি হচ্ছে না। শুধু তাই নয়, তিনি নাকি ইসরায়েলকে সাফল্যও পেতে দিচ্ছেন না। তাদের দাবি, অবিলম্বে হামাসের কাছ থেকে জিম্মিদের মুক্ত করতে হবে। আর তাদের মুক্ত করতে হবে নেতানিয়াহুর কাছ থেকে। মানে আন্দোলনকারীরা আর মনে প্রাণে মেনে নিতে পারছে না নেতানিয়াহুর সরকারকে। কূটনৈতিক মহল মনে করছে, এই মুহূর্তে দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়েছে ইসরায়েলের। বেগতিক দেখে জিম্মি চুক্তি নিয়ে কথা বলেছে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে। তাই হঠাৎ করেই, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এত বড় বয়ান দিলেন। হামাস জিম্মিদের মুক্তি দিলেই গাজায় অবিলম্বে কার্যকর হবে যুদ্ধ বিরতি চুক্তি।
গাজায় শুধুই হাহাকার, বাড়ছে মৃতের সংখ্যা
গত বছরের ৭ই অক্টোবর ফিলিস্তিনের হামাস গোষ্ঠী দক্ষিণ ইসরায়েলে প্রবেশ নজিরবিহীন হামলা চালায়। হত্যা করে প্রায় ১২০০ ইসরায়েলি। পাশাপাশি, গাজায় বন্দি করে নিয়ে আসে প্রায় ২৫০ ইসরায়েলি এবং বিদেশি নাগরিককে। তারপর থেকে হামাসকে নির্মূল করতে আর ইসরায়েলি বন্দিদের মুক্তি নিশ্চিত করতে হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন নেতানিয়াহু। নভেম্বরে সাত দিনের যুদ্ধবিরতিতে প্রায় ১১০ জন ইসরায়েলিকে হামাস মুক্তি দিলেও, এখনো কিন্তু তাদের কাছে শতাধিক বন্দি রয়েছে। আর ওদিকে ইসরায়েলি হামলায়, গাজায় মৃত্যুর সংখ্যা ছাড়িয়ে গিয়েছে প্রায় ৩৫ হাজার। আহতের সংখ্যা প্রায় ৭৮ হাজারের বেশি। ইরানের কিছু সংবাদ মাধ্যমের দাবি, গাজায় নিহতর সংখ্যা আরও বেশি। কারণ হামলার সময় বহু এলাকায় ধসে পড়া ভবনের নিচে চাপা পড়ে রয়েছে অসংখ্য মৃতদেহ। গাজার বেশিরভাগ অঞ্চলই এখন পুরোপুরি ইসরায়েলের কবলে। যেখানে ২০ লক্ষেরও বেশি ফিলিস্তিনি কষ্ট পাচ্ছেন জ্বালানি থেকে শুরু করে বিদ্যুৎ, খাবার আর জলের অভাবে। গাজার হাসপাতালগুলোর অবস্থা তো আরো ভয়ঙ্কর। না আছে প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক, না আছে প্রয়োজনীয় সংখ্যক নার্স। ওষুধে চলছে চরম হাহাকার। কঠিন দুর্দশার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন লক্ষ লক্ষ ফিলিস্তিনি মহিলা। বিশেষ করে যাদের ছোট সন্তান হয়েছে, কিংবা যারা সদ্য সন্তানের জন্ম দিয়েছেন, তাদের অবস্থা আরো শোচনীয়। শিশুদের জন্য ন্যূনতম দুধ পর্যন্ত কিনতে পারছেন না। জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনআরডব্লিউ এর মত বলছে, গাজায় এই মুহূর্তে প্রায় ১ লক্ষ ৫৫ হাজার অন্তঃসত্বা ভুগছে জলশূন্যতায়।
হামাস জিম্মিদের মুক্তি দিলেই, যুদ্ধ বিরতি সম্ভব : জো বাইডেন
এমত পরিস্থিতিতে যুদ্ধবিরতিটা ভীষণ দরকার বলে মনে করছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় থেকে শুরু করে অধিকাংশ দেশ। একদিকে মানবিক বিপর্যয় আরেক দিকে দুর্ভিক্ষ, আপাতত এর মাঝেই আটকে রয়েছে গাজা। দেখুন, মধ্যপ্রাচ্যের সংঘাতে জড়িয়েছে ইরান, ইসরায়েল হামাস। আর এখানে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে রয়েছে ওয়াশিংটন। এই সংঘাতের কথা আসলেই বারংবার চলে আসছে জো বাইডেনের নাম। তিনি বড় গলায় বলেছেন, ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় সব জিম্মিকে যদি হামাস মুক্তি দেয়, তাহলে যুদ্ধ বিরতি সম্ভব। সিয়াটেলের একটি তহবিল সংগ্রহ অনুষ্ঠানে তাঁর এমন কথায়, ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে গোটা বিশ্বে। তাহলে কি সত্যি যুদ্ধবিরতি হবে? যার আশায় প্রতিটা সেকেন্ড যেন এক একটা দিনের মতো গাজা বাসীর কাছে। মানুষগুলো চাতক পাখির মত চেয়ে আছে, কবে যুদ্ধ থামবে। সত্যি বলতে, গাজার অধিকাংশ মানুষ তাদের পরিবার হারা সর্বস্ব খুইয়ে প্রায় নিঃস্ব। তাদের কাছে যুদ্ধ বিরতি তো দূর, যুদ্ধ বিরতির আলোচনাও যেন একটা বড় পাওনার মতো। বাইডেন আত্মবিশ্বাসের সাথে বলেছেন, তিনি যেমনটা বলছেন ঠিক তেমনটাই হয়তো হতে পারে। আর এটা নির্ভর করছে হামাসের উপর। যদি হামাস জিম্মি মুক্তি দেয়, তাহলে যুদ্ধ বিরতি শুরু হয়ে যাবে। কূটনৈতিক মহলের ধারণা, হয়ত সম্প্রতি যে ইসরায়েল আর যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সম্পর্কের টানাপোড়েন হচ্ছে। তা নিয়ে তো দুই দেশের মধ্যেই আলোচনা হচ্ছিল। এর আগেও আলোচনা হয়েছিল যুদ্ধ বিরতি নিয়ে, কিন্তু তা ব্যর্থ হয়। যেখানে হামাস যুদ্ধ বিরতিতে রাজি ছিল, কিন্তু ইসরায়েল নয়। কারণ হামাসের সব শর্ত ইসরায়েলের পক্ষে মানা সম্ভব হয়নি। দেখতে দেখতে গাজা উপত্যকায় যুদ্ধ চলছে দীর্ঘ সাত মাস। যুদ্ধ শুরুর এক মাসের মাথায় হামাস আর ইসরায়েলের মধ্যে সাত দিনের একটা যুদ্ধ বিরতি চুক্তি হয়েছিল, কিন্তু তা সফলতার মুখ দেখেনি। এবার বাইডেনের কথায় দেখা দিল নতুন আশার আলো।
যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েলের বন্ধুত্ব শত্রুতার পথে!
বাইডেনের কথা সত্যি হলেও হতে পারে। কারণ যুক্তরাষ্ট্র এখন উঠে পড়ে লেগেছে যুদ্ধ বিরতি চুক্তি করতে। এখানে জড়িয়ে ওয়াশিংটনের প্রেস্টিজ ইস্যু। ইসরায়েলের বিরুদ্ধেও চলে যাচ্ছে দেশটা। যেখানে গোটা বিশ্ব গত চার দশকে ইসরায়েল আর যুক্তরাষ্ট্রের দৃঢ় বন্ধন দেখেছে, গভীর বন্ধুত্ব দেখেছে, একে অপরকে পাশে দাঁড়াতে দেখেছে, সেই জায়গাতেই তো এখন ফাটল। আন্তর্জাতিক মহলের।প্রশ্ন, তাহলে কি বন্ধুত্ব ধীরে ধীরে রূপ নিচ্ছে শত্রুতায়? তাই এত বড় পাল্টি খেতে চলেছে যুক্তরাষ্ট্র ? হামাসের হয়ে সরাসরি কথা না বললেও ইসরায়েলের প্রতি যে যুক্তরাষ্ট্র একেবারেই সন্তুষ্ট নয়, তা কিন্তু সাম্প্রতিক বিবৃতি আর তাদের কর্মকাণ্ডে বুঝিয়ে দিয়েছে ওয়াশিংটন। মূলত মার্কিন আর ইসরায়েলের যে জোট, তার মূল ভিত্তি অস্ত্র সহায়তা। বলা যেতেই পারে, বাইডেনের অস্ত্র সরবরাহ বন্ধের বক্তব্যে ইসরায়েল-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক, তথা বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভূ রাজনৈতিক কৌশলগত সম্পর্কে দেখা দিয়েছে একটা বড় চিড়। গত ৪ দশকে যুক্তরাষ্ট্র কোন অবস্থাতেই ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়নি। বরং সব পরিস্থিতিতে সহযোগিতা করেছে। এমনটা হলো এই প্রথমবার। কূটনৈতিক মহলের মতে, এই মুহূর্তে যুদ্ধ না থামলে, গাজায় আরও বড় বেসামরিক হতাহতের আশঙ্কা রয়েছে। ক্রমবর্ধমান যে মানবিক সংকট তৈরি হয়েছে, যার জেরেদেশী এবং বিদেশী নানামুখী চাপের মুখোমুখি রয়েছে ওয়াশিংটন। গাজায় যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকেই বাইডেনের নিজ দল ডেমোক্রেটিক পার্টি, আর বিরোধী দল ইজরাইলপন্থী রিপাবলিকান পার্টির তোপের মুখে রয়েছে তিনি।
বাইডেনের কথায়, ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা হয়েছে। তারা বলেছেন যুদ্ধ বিরোধী এখন পুরোটাই নির্ভর করছে হামাসের উপর। যদি হামাদ জিম্মিদের ছেড়ে দেয় তাহলে সেই দিন থেকেই গাজায় ইসরায়েলি অভিযান বন্ধ হয়ে যাবে। তারপর দিন আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হবে যুদ্ধ বিরতি। ওদিকে হামাস ইসরায়েলের বিভিন্ন সংগঠনের উদ্দেশ্যে এক বার্তায় লিখেছে, মধ্যস্থতাকারীদের দেওয়া প্রস্তাব ইসরায়েল প্রত্যাখ্যান করেছে। শুধু তাই নয়, প্রস্তাবের উল্লেখিত বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়েও আপত্তি জানিয়েছে। ফলে কোর্টের বল এখন পুরোপুরি রয়েছে ইসরায়েলের হাতে। সারমর্মে এটাই বলা যায়, হামাস তার সিদ্ধান্তে অনড়। ওদিকে ইসরাইল তার সিদ্ধান্তে। সমঝোতা কিন্তু হয়নি। কেউ কারোর জায়গা থেকে এক চুলও সরে আসেনি। এমত অবস্থায় নয় হামাসকে ইজরায়েলি বন্দিদের মুক্তি দিতে হবে, না হয় ইসরায়েলকে হামাসের চুক্তি মেনে নিতে হবে। তবেই কিন্তু যুদ্ধ যুদ্ধ বিরতি হওয়া সম্ভব। না হলে আপাতত গাজা বাসীর দুঃখ দুর্দশা থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার কোন রাস্তা নেই।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম