।। প্রথম কলকাতা ।।
Israel-Hamas War: নেতানিয়াহুর হুমকি, ইসরায়েল প্রয়োজনে একা দাঁড়াবে। লড়াই করবে সামর্থ্যের শেষটুকু দিয়ে । দরকার নেই যুক্তরাষ্ট্রকে। আর এভাবেই একা হয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। যুক্তরাষ্ট্রের সুর কিন্তু খারাপ। গাজায় হামাসের কাছে হেরে যেতে পারে ইসরায়েল। ওয়াশিংটন হঠাৎ হামাসের হয়ে কথা বলছে কেন ? যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র ব্যবহার করে হচ্ছে গাজায়, আর তাতেই ভয় পাচ্ছেন জো বাইডেন। ইসরায়েলের সাথে বন্ধুত্বে মস্ত বড় ফাটল। একে একে পাল্লা হালকা হচ্ছে তেল আবিবের।
* নেতানিয়াহুর হুঙ্কার, গাজায় একাই লড়তে প্রস্তুত
একা হয়ে গেলেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু। পাশে থাকলেন না জো বাইডেন। ইসরায়েল এখন একা লড়তেই প্রস্তুত হামাসের বিরুদ্ধে। এটা অভিমান নাকি রাগ? যুক্তরাষ্ট্রের হুমকি পেতেই কি তাহলে দমে গেল ইসরায়েল? ভয় পাচ্ছে না তো? ওদিকে সমস্ত সাপোর্ট পাচ্ছে গাজা। বিশ্বের অধিকাংশ দেশ ভাবছে গাজার মানুষের কথা। এমনকি জাতিসংঘ পর্যন্ত রুখে দাঁড়িয়েছে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে। এমত পরিস্থিতিতে নেতানিইয়াহু কী করবেন? পিছলেই আত্মসম্মানে লাগবে বড় ধাক্কা। কাঁটার মতো বিঁধছে পরাশক্তি গুলোর সমালোচনা। এরই মাঝে গাজায় পুরো দমে চালাচ্ছে হামলা। যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকে কথা দিয়েছিল, অস্ত্র দেবে। কিন্তু সম্প্রতি ইসরায়েলের চালান বন্ধের বিষয়ে রীতিমত হুমকি দিয়ে জো বাইডেন বলে দিয়েছেন, রাফায় এভাবে ইসরায়েলের হামলা দেখে অস্ত্রের চালান তিনি স্থগিত করেছেন। স্বাভাবিকভাবেই, এত দিনের বন্ধুতে এখন দেখা দিয়েছে এক গুচ্ছ প্রশ্ন। মোটামুটি যুক্তরাষ্ট্র গাজার রাফায় ইসরায়েলের পূর্ণমাত্রায় অভিযানের বিরুদ্ধে। তবে বাইডেনের হুমকিকে জাস্ট তোয়াক্কা করলেন না নেতানিয়াহু, বরং তার জবাব দিয়ে বললেন, প্রয়োজন হলে ইসরায়েল একা দাঁড়াবে। ইসরায়েল তাদের নখ দিয়ে লড়াই করবে।
এ থেকেই বোঝা যায়, ইসরায়েল অত সহজে দমবে না অর্থাৎ প্রথম থেকে হামাসের প্রতি যে নীতি নিয়ে রেখেছে তেল আবিব, সেই নীতি পালন করতেই বদ্ধপরিকর। শুধু তাই নয়, নেতানিয়াহু মনে করান ১৯৪৮ সালের যুদ্ধের কথা। স্মৃতিচারণা করেন প্রায় ৭৬ বছর আগের ঘটনা। সে সময় কিন্তু ইসরায়েলের কাছে এত অস্ত্র ছিল না। অথচ ইসরায়েলের উপর ছিল অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা। নেতানিয়াহুর মতে, সেই যুদ্ধের সময় ইসরায়েল অনেকের বিরুদ্ধে সংখ্যায় অল্প থাকলেও, তাদের মধ্যে ছিল চেতনা, বীরত্ব আর ঐক্য। সেই শক্তিতে জয়লাভ করেছিল তারা। সেই মন্ত্রে এবারও তিনি জয়ী হবেন। এতটাই আত্মবিশ্বাসী নেতানিয়াহু। যুক্তরাষ্ট্র অস্ত্রের চালান বন্ধ করলেও তা নিয়ে বিন্দুমাত্র চিন্তিত নয় তেল আবিব। বরং তারা তাদের বিশ্বাসের উপর ভর করে হামলা চালাচ্ছে গাজার উপর। এ তো গেল নেতানিয়াহুর কথা, অপরদিকে তাঁর প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট বলেন, ইসরায়েলের শুধু শত্রু নয় নয় বরং বন্ধুদেরও বোঝা উচিত, ইসরাযয়েলকে কোন দেশ কাবু করতে পারবে না। ইসরায়েল ঠিক তাদের লক্ষ্য অর্জন করবে এবং তারা শক্ত হয়ে দাঁড়াবে। অর্থাৎ যদি হামাসকে পরাজিত করতে প্রয়োজন হয়, তাহলে একাই লড়তে রাজি নেতানিয়াহু। স্বাভাবিকভাবেই, কূটনৈতিক মহলের আশঙ্কা, নেতানিয়াহুর এমন বক্তব্যে ইসরায়েল আর যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে আরও গভীর হল সম্পর্কের টানাপোড়েন। দুই দেশের সম্পর্ক নিয়ে যে আশঙ্কা করা হচ্ছিল, সেখানে সত্যি সত্যি হয়ত দেখা দিল বড়সড় ফাটল।
•রাফায় হামাসের জয়, যুক্তরাষ্ট্রের বড় কথা
ওদিকে হোয়াইট হাউস বলছে, রাফায় বড় হামলা চালানো মানেই কিন্তু হামাসকে পরাজিত করা নয়। জো বাইডেনের কথায়, রাফাতে হামলা চালালেই যে ইসরায়েলের উদ্দেশ্য পূরণ হবে, এমনটা নাও হতে পারে। হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আর ইসরায়েলের মধ্যে রাফা নিয়ে এখনো কথা চলছে। যেখানে বাইডেন সহ অন্যান্য মার্কিন কর্মকর্তারা বারংবার রাফায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযানের নিন্দা জানিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র যে ইসরায়েল থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে, তার বড় প্রমাণ সাম্প্রতিক কিছু কথাবার্তা। যুক্তরাষ্ট্র বলে দিয়েছে ইsরায়েল রাফায় অভিযান চালালেও, কৌশলগত বিজয় হতে পারে হামাসের। হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা মুখপাত্র জন কারবির মতে, এই মুহূর্তে রাফায় যে কোনো বড় ধরনের অভিযান আসলে সমঝোতার আলোচনা টেবিলে হামাসের হাতকে শক্তিশালী করবে। ইসরায়েলের হাতকে নয়।
* গাজা যুদ্ধে মার্কিনি অস্ত্রের ব্যবহার! ভয় পাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র
এই জায়গায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাজ করছে একটা বড় ভয়। যুক্তরাষ্ট্র নিজেই বলছে, গাজা যুদ্ধের সময় কিছু কিছু ঘটনায় ইতিমধ্যেই আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন লঙ্ঘন করেছে ইসরায়েল। সেক্ষেত্রে ইসরায়েল ব্যবহার করে থাকতে পারে যুক্তরাষ্ট্রের সরবরাহ করা অস্ত্র। দেশটার পররাষ্ট্র দপ্তর বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের সরবরাহ করা অস্ত্রগুলো ইসরায়েল অসঙ্গত কারণে ব্যবহার করেছে কিনা সেই নিয়ে একটা মূল্যায়ন করা দরকার। বুঝতে পারছেন? এটাই স্পষ্ট, আপাতত ইসরায়েলের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে ওয়াশিংটন। হোয়াইট হাউসের পর্যালোচনা বলছে, শুধুমাত্র গাজাই নয়, যুক্তরাষ্ট্রের সরবরাহ করা অস্ত্র ব্যবহার করে ইসরায়েল অন্তত আরও ছটা দেশের সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়েছে।। হোয়াইট হাউস তার একটা প্রতিবেদনে গাজায় পরিচালিত ইসরায়েলি অভিযানের সরাসরি সমালোচনা করেছে, যা ঘিরে ব্যাপক আলোচনা চলছে কূটনৈতিক মহলে। যুক্তরাষ্ট্র অনেকটা নিজের পিঠ বাঁচাতে যুক্তি দিয়েছে, মার্কিন অস্ত্রের আইনি ব্যবহার মেনে ইসরায়েল ব্যবহার করবে এমন আশ্বাস পেয়েছিল বলেই যুক্তরাষ্ট্র অস্ত্র সরবরাহ চালু রেখেছিল। কিন্তু এখন সেখানে তৈরি হয়েছে একটা বড় সন্দেহের জায়গা। যদিও পাশাপাশি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বেসামরিক ক্ষতি কমানোর ক্ষেত্রে ইসরায়েলের জ্ঞান , অভিজ্ঞতা কিংবা সরঞ্জাম সবটাই রয়েছে। কিন্তু ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী গাজা স্থল অভিযানের ক্ষেত্রে কি সেই সক্ষমতা ঠিকমত ব্যবহার করছে? সেই নিয়ে তৈরি হয়েছে প্রশ্ন। যদিও গাজায় মানবিক সহায়তা নিয়ে যাওয়া গাড়িগুলোকে ইসরায়েল নাকি এই মুহূর্তে আটক কিংবা বাধা দিচ্ছে না। এমনটাই দাবি মার্কিন প্রতিবেদনের।
* দুর্ভিক্ষের মুখে গাজাবাসী
সোজা কথায় ইসরায়েল, যুক্তরাষ্ট্র, ইরান সহ মধ্যপ্রাচ্যের যে কূটনৈতিক ঘোটালা শুরু হয়েছে, তার মাঝে বেজায় বিপাকে গাজার সাধারণ মানুষ। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় তথ্য বলছে, ৭ অক্টোবর থেকে ইসরায়েলের হামলা এখানে নিহত হয়েছে প্রায় ৩৫ হাজার জন মানুষ। যার মধ্যে ৭০ শতাংশই শুধু ফিলিস্তিনি শিশু আর নারী। ইতিমধ্যেই ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজার দক্ষিণাঞ্চল শহর অর্থাৎ রাফাতে ইজরায়েলি বাহিনী আরো জোরদার করেছে হামলা, যার ভয়ে শহরটি ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছেন প্রায় ৮০ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি। এমনিতে কি, গাজায় হামলা শুরুর পর এই সীমান্ত শহরে আশ্রয় নিয়েছিলেন প্রায় দশ লক্ষের বেশি বাসিন্দা। প্রায় দুর্ভিক্ষের কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছে গাজা বাসী। তবে চুপ করে বসে নেই ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী গুলো। হামাসেরভাষ্যমতে, পূর্ব দিকে তারাও ইসরাইলি সেনাদের উপর জোরদার হামলা চালিয়েছে। জাতিসংঘ আবারও সতর্ক করে বলে দিয়েছে, গাজায় যে পরিমাণে খাদ্য আর জ্বালানি রয়েছে তা প্রায় তলানিতে। কারণ এই ভূখণ্ডটির কাছাকাছি ক্রসিং দিয়ে কোন সাহায্যই পাচ্ছেনা। কায়রোতে হামাস ইসরায়েল যুক্তরাষ্ট্র মিশর এবং কাতারের প্রতিনিধি দল বৈঠক করেছে। তবে সেই আলোচনার কোন অগ্রগতি হয়নি অর্থাৎ শেষমেষ কোন চুক্তিতে পৌঁছানো যায়নি। গত সাত মাস ধরে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় যে যুদ্ধ চলছিল, তার মাত্রা আরো তীব্র থেকে তীব্রতর করেছে ইসরায়েল। গত বছরের ৭ই অক্টোবর দক্ষিণ ইসরায়েলে প্রবেশ করে নজিরবিহীন হামলা চালিয়ে ১২০০ ইসরায়েলিকে হত্যার পাশাপাশি প্রায় ২৫০ জন ইসরায়েলি আর বিদেশী নাগরিককে বন্দী করে নিয়ে আসে হামাস। মাঝে ১১০জন ইসরায়েলি বন্দিকে হামাস মুক্তি দিলেও, এখনো তাদের হাতে বন্দি রয়েছে শতাধিক ইসরাইলি নাগরিক।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম