।। প্রথম কলকাতা ।।
Success Story Of Bisleri: চোখ বন্ধ করে মিনারেল ওয়াটার বললেই মাথায় আসে বিসলেরির কথা। বছর গেলে কোটি কোটি টাকা মুনাফা, সেই লাভজনক ব্যবসা নিয়ে নিচ্ছে টাটা গ্রুপ। আমার আপনার সবার পছন্দের বিসলেরি জলে এখন টাটার স্বাদ। প্রায় সাত হাজার কোটি টাকায় টাটা কিনে নেবে বিসলেরি। কোম্পানির মালিক রমেশ চৌহান কেন বিক্রি করছেন? এক সময় বিসলেরি দিয়ে কাটত মদের নেশা! কোন জাদুতে এই কোম্পানি দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ভারতে?
ভারতের প্যাকেটজাত জলের জগতে রীতিমত দাপটে ব্যবসা করছে বিসলেরি। এবার সেই বিসলেরি হাত বদল হয়ে চলে আসবে টাটা গ্রুপে। যদিও এখনো পর্যন্ত টাটা কনজিউমার প্রোডাক্টস এবং বিসলেরির তরফ থেকে অফিসিয়াল কোন তথ্য প্রকাশ হয়নি। বিসলেরি ইন্টারন্যাশনালেরর চেয়ারম্যান রমেশ চৌহান জানিয়েছেন , আপাতত কোম্পানি তুলে দেওয়া হবে টাটা গ্রুপের হাতে। যদিও প্রক্রিয়া চূড়ান্ত হয়নি। ভারতীয় জলের বাজারের অর্ধেক দখল করে রেখেছে শুধুমাত্র বিসলেরি। অপরদিকে রমরমিয়ে চলছে টাটা গ্রুপের জলের ব্যবসা, তবে তা বিসলেরিকে টেক্কা দিতে পারেনি। ইতিমধ্যেই টাটা গ্রুপের হাতে রয়েছে হিমালয়ান ব্র্যান্ডের আওতায় টাটা কপার প্লাস ওয়াটার এবং টাটা গ্লুকো।
রমেশ চৌহান এর আগেও থামস আপ,গোল্ড স্পট এবং লিমকার মত সংস্থা কোকাকোলার কাছে বিক্রি করে দিয়েছেন। বিসলেরির চাহিদা দর যে খুব একটা খারাপ এমনটা নয়। Techci নামক বাজার গবেষক সংস্থার রিসার্চ রিপোর্ট অনুযায়ী, ভারতে ২০২১ আর্থিক বছরে প্যাকেটজাত জলের বাজার ছিল প্রায় ১৯৩১৫ কোটি টাকার। অনুমান করা হচ্ছে ২০২৩ সাল নাগাদ বিসলেরি প্রায় ২৫০০ কোটি টাকার ব্যবসা করবে, যার মধ্যে মুনাফা হবে প্রায় ২২০ কোটি টাকা। ২০২১ সালে এই কোম্পানি প্রায় ৯৫ কোটি টাকা লাভ করেছে। ২০২০ সালে লাভ করেছে প্রায় ১০০ কোটি টাকা।
কেন বিক্রি করছেন?
রমেশ চৌহান এমন এক ব্যক্তি যার হাত ধরে ভারতে মিনারেল ব্র্যান্ড বিসলেরি জনপ্রিয়তা লাভ করেছিল। বর্তমানে শিল্পপতি রমেশ চৌহানের বয়স প্রায় ৮২ বছর। শরীরও খুব একটা ভালো নয়। এত বড় জলের ব্যবসা এগিয়ে নিয়ে যেতে তার কোন যোগ্য উত্তরসূরী নেই। একমাত্র মেয়ে জয়ন্তী চৌহানের বাবার ব্যবসায় খুব একটা আগ্রহ নেই। এর মাঝে টাটা গ্রুপ বিসলেরি কেনার প্রস্তাব দিয়েছিল। মনে করা হচ্ছে, চারিদিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে রমেশ টাটা গ্রুপের হাতে বিসলেরি তুলে দিচ্ছেন। রমেশ চৌহানের কাছে বিসলেরি সংস্থা বিক্রির সিদ্ধান্ত বেশ কঠিন। তবে তিনি মনে করেন, টাটা গ্রুপ এই সংস্থাকে আগের থেকে অনেক ভালো লাগবে। তিনি টাকার জন্য বিসলেরি বিক্রি করছেন না। তিনি চান তার সংস্থার খুব ভালোভাবে দেখাশোনা হোক। কারণ তিনি এতদিন এই ব্যবসাকে আবেগের সঙ্গে পরিচালনা করেছেন। সমানভাবে আবেগ এবং উৎসাহ নিয়ে কাজ করেছে তার কর্মীরা। তিনি টাটা সংস্কৃতি পছন্দ করেন তাই অন্যান্য ক্রেতা থাকা সত্ত্বেও টাটাকেই বেছে নিয়েছেন। আপাতত রমেশ চৌহানের লক্ষ্য বিসলেরি বিক্রির পর সেই টাকা নিয়ে পরিবেশ রক্ষা, জনসেবামূলক কাজ যোগদান করবেন। এছাড়াও প্লাস্টিকের পুনর্ব্যবহার, দরিদ্রদের চিকিৎসা, জল সংরক্ষণ প্রভৃতি বিষয়ক কাজ করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন।
বিসলেরির ইতিহাস
একজন ইতালি ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ১৯৬৯ সালে রমেশ বিসলেরি কিনেছিলেন। ভারতের স্বাধীনতা ১৮ বছর পর এর যাত্রা শুরু হলেও ইতিহাস বহু পুরনো। একদম শুরুটা হয়েছিল, ১৮৫১ সালে ইতালির ভেরোলানুভা নামক ছোট্ট শহরে। প্রতিষ্ঠাতা ইতালির রসায়নবিদ ফেলিস বিসলেরির নামে কোম্পানির নাম রাখা হয়। তবে এখানেই রয়েছে আসল টুইস্ট। বিসলেরি সংস্থা যখন তৈরি হয় তখন এর উদ্দেশ্য পরিশ্রুত জল তৈরি ছিল না। তিনি মূলত সিঙ্কোনা আর আয়রন সমৃদ্ধ নুন দিয়ে এক ধরনের আয়ুর্বেদিক পানীয় তৈরি করেছিলেন। এই পানীয় মদের নেশা ছাড়াতে কাজে লাগত। পরবর্তীকালে এই জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পেলে সারা বিশ্ব জুড়ে রপ্তানি শুরু হয়। এটি তৈরি করতে বিভিন্ন আয়ুর্বেদিক উপাদান যেত ভারত থেকে। আর সেই সূত্রেই ১৯৫৩ সালে ভারতে আসেন কোম্পানির তৎকালীন মালিক সিজার রোসি এবং তার স্ত্রী ফিয়ামেট্টা। স্বাধীনতার পর ভারতের বাজারে মিনারেল ওয়াটারের ঠিক কতটা চাহিদা তা নিমেষে বুঝেছিলেন রোসি। বিশেষ করে বিদেশ থেকে আসা পর্যটকদের কাছে মুম্বাইয়ের জল খুব একটা পছন্দের ছিল না। তখন হোটেলের মধ্যে জল ফুটিয়ে পরিশ্রুত করে দেওয়া হত। এই সুযোগকে মোক্ষম কাজে লাগান রোসি। যদিও সেই সময় তাকে অনেকেই পাগল তকমা দিয়েছিল। অনেকে হাসাহাসি করে বলেছিল, দাম দিয়ে কে আবার জল খাবে? তখন সত্যিই অনেকে ভাবতে পারেননি বর্তমানে মানুষ টাকা দিয়ে এত পরিমাণে জল কিনতে পারেন। রোসির কাছ থেকে চার লক্ষ টাকার বিনিময়ে এই সংস্থা ১৯৬৯ সালে কিনে নেন রমেশ চৌহান।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম