।। প্রথম কলকাতা ।।
Israel-Hamas War: গাজায় যুদ্ধ বন্ধের দাবি মানতে চাইছেন না ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীর নেতানিয়াহু। ইসরায়েলের যুক্তি, হামাসের প্রস্তাবিত চুক্তি অনুযায়ী, আবার গাজা নিয়ন্ত্রণ পেতে পারে হামাস। যা পরবর্তীকালে হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে ইসরায়েলের জন্য। গাজায় হামলার বেগ যত বাড়ছে, ততই ইসরায়েলের বিরুদ্ধে এক জোট হচ্ছে ইরান সমর্থিত বহু সশস্ত্র গোষ্ঠী। এবার সেই তালিকায় নাম লেখাল, বাহরাইনের আল আশতার ব্রিগেড, সংক্ষেপে এএবি। এই সশস্ত্র সংগঠন, এই প্রথম ইসরায়েল বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধে যোগ দিল। রীতিমত নজিরবিহীন হামলা চালালো ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলীয় এইলাত বন্দরে। হিজবুল্লাহ, হুথি, মিলিশিয়ার নাম এতদিন শোনা যাচ্ছিল, এবার উদ্ভব হল ইসরায়েল বিরোধী এক নতুন গোষ্ঠীর। আল আশতার ব্রিগেড যুক্তরাষ্ট্রের মহাশত্রু। ইতিমধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের তরফ থেকে কড়া নিষেধাজ্ঞা খেয়ে বসে রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য কিংবা বাহরাইন সরকার শত চেষ্টা করেও এই ব্রিগেডকে দমাতে পারেনি। কারণটা কি? ইরানের থেকে ঠিক কতটা সাপোর্ট পায়? হঠাৎ করে ইরানের বিপদে এই সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো একজোট হচ্ছে কেন? তাহলে কি ইরানের স্বার্থ আর আল আশতারের স্বার্থ এক?
এমনি থেকেই, লোহিত সাগরে ইয়েমেনের সামরিক অভিযানের কারণে প্রায় মুখ থুপড়ে পড়েছে ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলীয় এইলাত বন্দরের কার্যক্রম। আর সেই জায়গায়, আল আশতারের আক্রমণে যেন কিছুটা নাজেহাল দেশটা। শুধু হামলা করেই ক্ষান্ত হয়নি, বরং প্রকাশ্যে আল-আশতার ব্রিগেড ঘোষণা করেছে, এইলাত সমুদ্র বন্দর থেকে সড়ক পথে পণ্য পরিবহনের জন্য ট্রাকনেট নামক এক কোম্পানি ইসরায়েলের বিভিন্ন স্থানে পণ্য পৌঁছে দেয়। আর সেটারই সদর দপ্তরে হামলা চালিয়েছে তারা। পাশাপাশি এও জানিয়ে দিয়েছে, গত বছরের ৭ই অক্টোবর থেকে ইসরায়েলি গণহত্যার শিকার গাজার জনগণের প্রতি সমর্থন জানিয়ে তাদের এই হামলা। যতদিন না ইসরায়েল গাজায় গণহত্যা বন্ধ করবে, ততদিন পর্যন্ত গাজা বাসীর সমর্থনে তারা ইসরায়েল বিরোধী অভিযান চালিয়ে যাবে বলে, রীতিমতো, সতর্ক করল ইসরায়েলকে। এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এখনো পর্যন্ত ইসরায়েলের তরফ থেকে পাল্টা কোন আক্রমণ আল আশতার ব্রিগেডের ওপরে হয়নি।
কিন্তু কূটনৈতিক মহলের আশঙ্কা, হিজবুল্লাহ্ , হুথির মতো যেভাবে ইসরায়েল পাল্টা আক্রমণ করেছে, হয়তো সেই তালিকা থেকে বাদ যাবে না বাহরাইনের এই সশস্ত্র গোষ্ঠী। গতবছরের ৭ই অক্টোবর থেকে ইসরায়েলে দশকের সবথেকে বড় সামরিক অভিযান চালিয়েছিল গাজার হামাসগোষ্ঠী। তারপর থেকেই গাজায় শুরু হয় ইসরায়েলের বিমান হামলা এবং স্থল হামলা। যার জেরে এ পর্যন্ত নিহত হয়েছে প্রায় ৩২ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি এবং আহত হয়েছেন প্রায় ৮০ হাজারের বেশি মানুষ। আর এই ঘটনা মেনে নিতে পারছে না মধ্যপ্রাচ্যের বহু দেশ থেকে শুরু করে সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো। ইয়েমেন, ইরাক এবং লেবাননের প্রতিরোধে আন্দোলনগুলো অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে। আর এই ঘটনা প্রবাহের সাত মাস পর তাদের সঙ্গে নতুন করে যুক্ত হল আল আশতার ব্রিগেড। শুধু হামলাই করল না বরং নেতানিয়াহুকে সবার সামনে ছুঁড়ে দিল নতুন চ্যালেঞ্জ। প্রসঙ্গত বলে রাখি, গাজায় ইসরায়েলের হামলার প্রতিবাদে কিন্তু নভেম্বর মাসে ইসরায়েলের সাথে সমস্ত অর্থনৈতিক সম্পর্ক স্থগিত করেছিল মধ্যপ্রাচ্যের দেশ বাহরাইন। দেশটার সংসদ সেই সময় স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছিল, তারা ফিলিস্তিনিদের ন্যায্য অধিকারের পাশে আছে। এখানে প্রশ্ন উঠতে পারে, বাহরাইনের সঙ্গে ইসরাইলের দ্বন্দ্বটা ঠিক কোথায়? যখন ইসরায়েল আর হামাস যুদ্ধকে কেন্দ্র করে গোটা বিশ্ব দ্বিধাবিভক্ত, দলাদলি শুরু হয়ে গিয়েছে, সেখানে বাহরাইনের সশস্ত্র গোষ্ঠী আল আশতার ব্রিগেড ইসরায়েলকে অ্যাটাক করছে কেন? হিজবুল্লাহ কিংবা হুথির মতই কি রয়ে গিয়েছে কোন পুরনো শত্রুতা?
আল আশতার ব্রিগেডকে ছোটখাটো মনে করলে ভুল করবেন। এটি রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের নজরেও। এইতো চলতি বছরের প্রথম দিকে, যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অফ দ্যা ট্রেজারি অফিস থেকে একটি বিবৃতি জারি করা হয়। স্পষ্ট জানিয়ে দেয়া হয়, বাহরাইনের সাথে সমন্বয় করে ইরান ভিত্তিক সন্ত্রাসী গোষ্ঠী আল আশতার ব্রিগেডের আর্থিক সহায়তাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে। তার মানে, যুক্তরাষ্ট্রের কাছে এই দল একটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী এবং ইরান সমর্থিত। ইরান থেকে প্রচুর পরিমাণে সাপোর্ট পায়। এটা গোটা বিশ্ব জানে। ২০১৮ সালের নাগাদ, যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট এই ব্রিগেডকে একটি বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন এবং বিশেষভাবে মনোনীত বৈশ্বিক সন্ত্রাসী হিসেবে মনোনীত করে। ওয়াশিংটনের যুক্তি, ইরানি যে সমস্ত অস্থিতিশীল শক্তিগুলো হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে, বিশেষ করে যেগুলি বাহরাইনে এবং সারা বিশ্বে যুক্তরাষ্ট্রের অংশীদারদের জন্য হুমকিস্বরূপ, তাদের ব্যাহত করার জন্য সম্মিলিতভাবে চেষ্টা চালাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র।
এছাড়া আরো বলা হয়, এই ব্রিগেডের বেশ কয়েকজন অপরাধী কারাগারের সাজা এড়াতে বাহরাইন থেকে পালিয়ে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছে ইরানে। যারা দীর্ঘদিন ধরে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর জন্য নির্বাচিত আশ্রয়স্থল হিসেবে কাজ করে আসছে ইরান। সেই সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে থাকা ওই ব্যক্তিদের সম্পত্তিতে জারি করা হয় নিষেধাজ্ঞা। সাধারণ মার্কিন ব্যক্তিদের দ্বারা কিংবা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে থাকা ওই ব্যক্তিদের সমস্ত লেনদেন নিষিদ্ধ করা হয় । এছাড়াও যে সমস্ত আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং অন্যান্য ব্যক্তি এই অভিযুক্ত ব্যক্তিদের সাথে লেনদেনে কিংবা অন্যান্য কার্যকলাপে জড়িত, তাদের কেও নিষেধাজ্ঞার মুখোমুখি হতে পারে বলে একটা সতর্কবার্তা জারি করে। সেই সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য আলোচনা করেছিল যুক্তরাজ্য এবং বাহরাইন সরকারের সাথে। কূটনৈতিক মহলের মতে, এভাবেই বহু বছর ধরে মধ্যপ্রাচ্যের প্রভাব কমাতে এবং তার সহযোগীদের বিচ্ছিন্ন করতে ইরান সমর্থিত গোষ্ঠী গুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র। জেরুজালেম পোষ্টের রিপোর্ট বলছে, ইরান নাকি গাজায় হামাস, পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনের ইসলামিক জিহাদ, লেবাননের হিজবুল্লাহ, ইয়েমেনে হুথি, ইরাক এবং সিরিয়ার মিলিশিয়াদের, ইহুদি রাষ্ট্রে আক্রমণ করার জন্য ব্যবহার করছে।
তবে কি এই আল আশতার ব্রিগেড? যাকে নিয়ে এত চর্চা! এটি মূলত বাহরাইনের শিয়া সশস্ত্র গোষ্ঠী। আত্মপ্রকাশ করেছিল ২০১৩ সালে। বাহরাইন সরকারের সাথে এই সশস্ত্র গোষ্ঠীর যথেষ্ট দ্বন্দ্ব রয়েছে। বাহরাইনে আজ পর্যন্ত অন্তত প্রায় কুড়িটি হামলার দাবি রয়েছে এদের বিরুদ্ধে। যার মধ্যে কিছু ঘটনায় প্রাণহানিও ঘটেছে। বলা হয়ে থাকে,এই সশস্ত্র গোষ্ঠীর বেশ কিছু নেতা এবং সদস্য থাকে ইরানে। কৌশল বলতে, নানান বিস্ফোরক ডিভাইস আর ছোট অস্ত্র। এরা পশ্চিমা দুনিয়াকে পাত্তাও দেয় না। বরং উল্টে হুমকি দেয়। শোনা যায়, এই সশস্ত্র গোষ্ঠী ইরান থেকে অস্ত্র এবং বিস্ফোরক সম্পর্কে প্রশিক্ষণ নিয়েছে। এর আগেও একবার বাহুরাইন সরকারের।নিরাপত্তা বাহিনী ইরান থেকে আল আশতারে চালান নিষিদ্ধ করে। বিষয়টা এখানেই থেমে নেই, এই গোষ্ঠী আর্থিক এবং লজিস্টিক সহায়তার জন্য জোট বদ্ধ হয়েছে ইরাকি শিয়া গোষ্ঠী এবং লেবাননের হিজবুল্লার সাথে।
এভাবেই গোটা মধ্যপ্রাচ্যের এক একটা দেশ থেকে শুরু করে সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো জোট বদ্ধে হচ্ছে নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে। ইসরায়েলের বিরুদ্ধে বড় হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে বলে মনে করছে আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা। যুদ্ধবিরতির আলোচনা হলেও, আলোচনা শুধুমাত্র আলোচনা হিসেবেই থেকে গিয়েছে। নেতানিয়াহুর কথায়, ইসরায়েল এমন কোন পরিস্থিতি মেনে নিতে প্রস্তুত নয়, যেখানে হামাস ব্যাটেলিয়ন বাঙ্কার থেকে বেরিয়ে এসে গাজা নিয়ন্ত্রণ করবে। পাশাপাশি ইসরায়েল নাগরিকদের জন্য হুমকিতে পরিণত হবে। গাজায় যুদ্ধ একেবারে শেষ করতে আপাতত রাজি হচ্ছে না ইসরায়েল। এখানে হামাস এবং ইসরায়েল, দুই পক্ষই দেখছে নিজেদের স্বার্থ। ইসরায়েল কোন মতে, নিজেদের জিম্মিদের মুক্তি করার চুক্তি অংশ হিসেবে যুদ্ধ থামাতে আপাতত রাজি নয়।
শুধু তাই নয়, ইসরায়েলি বাহিনী রাফায় প্রবেশ করে অবশিষ্ট হামাস ব্যাটেলিয়ান গুলোকে ধ্বংস করতে প্ল্যানিং শুরু করে দিয়েছে। এমত পরিস্থিতিতে, জিম্মিদের মুক্ত করার জন্য একটা সাময়িক যুদ্ধ বিরতি চুক্তিতে যেতে পারে ইসরায়েল। কিন্তু সম্পূর্ণভাবে যুদ্ধ বন্ধের চুক্তিতে নয়। বহুদিন ধরেই কিন্তু নেতানিয়াহু রাফাতে হামলা চালানোর কথা বলে এসেছেন , যার জেরে চাপের সম্মুখীন হয়েছে তার দেশের ডান জোটের কাছে। ইসরায়েলের বৃহত্তম কূটনৈতিক এবং সামরিক মিত্র হওয়া সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্র রাফায় এই নতুন হামলাকে একেবারেই সাপোর্ট করছে না, বারংবার দাবি জানিয়ে দিয়েছে, আগে রাফায় বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। কিন্তু সেই পরিকল্পনা সম্পর্কে আপাতত এখনো পর্যন্ত কিছু জানায়নি ইসরাইল।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম