।। প্রথম কলকাতা।।
Iran-Israel Conflict: যে কোনো মুহূর্তে গ্রেপ্তার হয়ে যেতে পারেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু! এ কি বিপদে পড়ল ইসরায়েল? সাহায্য নিতে ছুটল যুক্তরাষ্ট্রের কাছে। মহাচাপে যুক্তরাষ্ট্রও। ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে গোটা বিশ্ব জুড়ে ছড়িয়ে পড়ছে আন্দোলন। তাহলে কি গাজায় হামলা করে বড় ভুল করে ফেলল? এবার বড় মাশুল গুনতে হবে না তো নেতানিয়াহুকে? ইসরায়েলকে চারিদিক থেকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরছে শত্রুপক্ষ। সবাই গিয়ে হাত মেলাচ্ছে ইরানের সাথে। ইসরায়েল আর হামাস যুদ্ধ উস্কে দিচ্ছে বিশ্বযুদ্ধের ইঙ্গিত। ফিলিস্তিনিদের ওপর হামলা মানছে না মধ্যপ্রাচ্যের বহু দেশ, আর এখানেই মার খাচ্ছে ইসরায়েল। হু হু করে বাড়িয়ে ফেলছে শত্রু সংখ্যা। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের কাছে বড় পানিশমেন্ট পেতে চলেছে না তো ইসরায়েল? যুক্তরাষ্ট্র নেতানিয়াহুকে আদৌ বাঁচাতে পারবে তো? নাকি আশঙ্কায়ই সত্যি হবে? সত্যি সত্যি নেতানিয়াহু গ্রেফতার হয়ে যাবেন না তো?
একটা দেশের প্রধানমন্ত্রী গ্রেফতার হওয়া মানে বুঝতে পারছেন, তাও আবার আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের কাছে। গোটা বিশ্বজুড়ে বিষয়টা নিয়ে হৈচৈ পড়ে গিয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত এমন একটা আদালত, যখন কোন দেশের বিরুদ্ধে বড়সড় অভিযোগ আসে, আন্তর্জাতিক ইস্যু জড়িয়ে থাকে, তখন এমন পদক্ষেপ নিতে পারে। ব্যাপারটা একেবারেই সাধারণ নয়। আপাতত নেতানিয়াহুর সামনে রয়েছে পাহাড় সমান অভিযোগ। গাজায় হামলা শুরুর পরেই থেকেই একের পর এক ফাঁড়ায় পড়েছে ইসরায়েল। আর তার সাথেই আবার লেজুড় হিসেবে জুড়ে গিয়েছে ইরানের সাথে সংঘাত। যার জেরে উত্তাল গোটা মধ্যপ্রাচ্য। ইসরায়েল এখন কোন দিক সামলাবে? একদিকে হামাস,তো আরেক দিকে ইরান। তার পিছনে রয়েছে একের পর এক সশস্ত্র গোষ্ঠী। যারা নিজেদেরকে প্রকাশ্যে হামাসের বন্ধু বলে দাবি করছে, আর ইসরায়েলকে দাবি করছে শত্রু বলে। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত অর্থাৎ আইসিসি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীসহ তার সরকারের অন্য বহু সিনিয়র কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করতে পারে। দেখা দিয়েছে তুমুল সম্ভবনা। আর সেই গ্রেফতারি পরোয়ানা ঠেকাতে কম চেষ্টা করছেন না নেতানিয়াহু। এই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে যারা হামাসকে সাপোর্ট করে, ইরানকে সাপোর্ট করে, তারা তো রীতিমত বিষয়টাকে উপভোগ করছেন। সমালোচকরা কেউ কেউ নেতানিয়াহুর এমন অবস্থা দেখে বলছেন, এভাবেই হয়তো পতন হবে ইসরায়েলের। ওদিকে আবার নেতানিয়াহু দমে যাওয়ার পাত্র নন। এক বিবৃতিতে বলেই দিয়েছেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত নাকি ইসরায়েলের সহজাত এবং আত্মরক্ষার অধিকার খর্ব করার চেষ্টা করছে। সেটা কখনোই মেনে নেবে না ইসরায়েল। মধ্যপ্রাচ্যের একমাত্র গণতন্ত্র এবং বিশ্বের একমাত্র ইহুদি রাষ্ট্রের সামরিক কর্মকর্তাদের জব্দ করার এটা একটা হুমকি, যা অত্যন্ত আপত্তিজনক। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে তিনি কিংবা তার সামরিক কর্মকর্তারা কখনোই মাথা নত করবেন না। এত কিছু হয়ে যাওয়ার পরেও, নেতানিয়াহু এখনো পর্যন্ত গাজা হামলা বন্ধ নিয়ে কোন রকমের বার্তা দেননি। হামাসের সাথে সমঝোতায় আসার একটা আভাস পাওয়া গিয়েছে মাত্র। কিন্তু গাজার মানুষদের কি হবে? বা গাজার রাফা উপত্যকায় আপাতত হামলা বন্ধ হবে কিনা, সেই বিষয়ে কোন ইতিবাচক বার্তা দেয়নি ইসরায়েল।
ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের যে সমস্ত অভিযোগ রয়েছে, তা কিন্তু এই গাজা উপত্যকাকে কেন্দ্র করে। গত ৭ অক্টোবর, ইসরায়েলে হামাসের হামলার পর, ইসরায়েল গাজা উপত্যকায় হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। লক্ষ্য একটাই, হামাসকে সমূলে নির্মূল করা। কিন্তু মাঝখান দিয়ে ভুক্তভোগী হচ্ছেন গাজার বহু সাধারণ মানুষ। গত জানুয়ারিতে একটি অন্তর্বর্তীকালীন রায়ে ইসরায়েলকে গণহত্যা মূলক কর্মকাণ্ড বন্ধ করতে এবং গাজায় বেসামরিক মানুষদের মানবিক সহায়তা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, ইসরায়েল আর হামাসের যুদ্ধে নিহত হয়েছেন প্রায় ৩৪ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি, যাদের অধিকাংশই নারী আর শিশু। আহত হয়েছে প্রায় ৭৭ হাজারের বেশি মানুষ। আপাতত শোনা যাচ্ছে, মিশর আর কাতারের কর্মকর্তাদের মাধ্যমে যুদ্ধ বিরতি যে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছিল তাতে নাকি আনুষ্ঠানিকভাবে সাড়া দিয়েছে ইসরায়েল। কিন্তু গাজাবাসী এখনো সেই ফল পায়নি। এসবের মাঝে আবার ফিলিস্তিনের দক্ষিণাঞ্চলীয় রাফায় শুরু হয়েছে ইসরায়েলের হামলা।
বিষয়টা যখন পুরো বিশ্বের কাছে একটা আলাদা নজরে চলে আসছে, তখন নিজেকে সেফ সাইডে রাখতে চাইছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেই দিয়েছেন, গাজার বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত না করে কিংবা বিশ্বাসযোগ্য পরিকল্পনা না রেখে যদি রাফাতে ইসরায়েল বড় আকারে অভিযান চালায় তাহলে বিষয়টিকে যুক্তরাষ্ট্র সমর্থন করবে না। এর আগেও গাজায় ইসরায়েলের হামলা বন্ধে যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপের জন্য অনুরোধ করেছিলেন ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট আব্বাস রাফাহতে। বলেছিলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে আবেদন করছি, যাতে ইসরায়েল রাফা অভিযান বন্ধ করে। কারণ যুক্তরাষ্ট্রই এমন একটা দেশ যা ইসরায়েলকে অপরাধ করা থেকে বিরত রাখতে পারে। রাফা এমন একটা জায়গা যেখানে ছোট্ট পরিসরে হামলা হলেও বড়সড় মানবিক বিপর্যয় ঘটবে। কারণ গাজা হামলার পর থেকে বহু ফিলিস্তিনি এই এলাকায় এসে আশ্রয় নিয়েছে। এবার হয়ত তারা গাজা উপত্যকা থেকে পালিয়ে যেতে বাধ্য হবে।
সবদিক থেকে একটু একটু করে এবার চাপে পড়ছে ইসরায়েল। শুধু তাই নয়, যে যুক্তরাষ্ট্রকে পরম বন্ধু বলে মনে করত, কাছের বন্ধু ভাবত সেই দেশেও কিন্তু ইজরায়েল এখন কাঠগড়ায়। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কে সামান্য হলেও চিড় ধরেছে। যার প্রমাণ গোটা যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে চলা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসরায়েল বিরোধী বিক্ষোভ। যুক্তরাষ্ট্রের বহু বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ শুরু করেছে ফিলিস্তিনি পন্থীরা। তাদেরকে গ্রেফতার করতে রীতিমত নাজেহাল যুক্তরাষ্ট্র পুলিশ। আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছে অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়েও। বুঝতে পারছেন, এই পুরো গন্ডগোলের সূত্রপাতে কেন রয়েছে গাজা?স্বাভাবিকভাবেই, তার প্রভাব পড়ছে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের অন্দরমহলেও। ইসরায়েল তার বিপদে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যোগাযোগ করছে বলে শোনা যাচ্ছে। নেতানিয়াহু যুক্তরাষ্ট্রে ফোন করে গ্রেফতারি পরোয়ানা থেকে বাঁচতে পথ খুঁজছেন। কিন্তু সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে, যুক্তরাষ্ট্র কতটা সাহায্য করতে পারবে, এটা একটা বড় প্রশ্ন। কারণ এখানে মানবাধিকারের বিষয় জড়িয়ে রয়েছে। তার উপর আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত বলে কথা। এখনো পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র অফিশিয়ালি এই নিয়ে কোনো বিবৃতি জারি করেনি। এমত পরিস্থিতিতে যে ইসরায়েলের পাশে আছে কিংবা ইসরায়েলকে সমর্থন করছে সেই বিষয়ে কোন বিবৃতি দিতে দেখা যায়নি জো বাইডেনকে। কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন , হয়তো বা যুক্তরাষ্ট্র একটু ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। কারণ যে দেশ বারংবার বহু দেশকে মানবাধিকারের পাঠ শেখায়, সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে যদি ইসরায়েলকে সাপোর্ট করে তাহলে বিরোধিতা আরো বাড়বে।
গুঞ্জন বলছে, এই মুহূর্তে আইসিসি গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের কর্মকাণ্ডের তদন্ত করছে। যার কারণে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি নিয়ে প্রচণ্ড চাপে রয়েছেন নেতানিয়াহু। বাঁচতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নেমেছেন কূটনৈতিক যুদ্ধে। আর এই বৈশ্বিক চাপের মধ্যেও গাজার একমাত্র নিরাপদ অঞ্চল অর্থাৎ রাফায় ইসরাইল সেনারা এখনো হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। যা আরো বড় বিপদ খাঁড়া করতে পারে ইসরায়েলের সামনে। যদিও ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়ে দিয়েছেন, হামাস যদি জিম্মি মুক্তি চুক্তি করে, তাহলে গাজায় শেষ নিরাপদ স্থলে অর্থাৎ রাফায় ইসরাইলি সেনারা আর হামলা চালাবে না। তবে নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে কবে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হবে, তা এখনো পর্যন্ত স্পষ্ট নয়। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের পক্ষ থেকে এই সংক্রান্ত কোন তথ্য প্রকাশ করা হয়নি। ইসরায়েলের বহু কূটনৈতিকরা মনে করছে, হয়তো কিছুদিনের মধ্যে ওয়ারেন্ট জারি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে নেতানিয়াহুকে দ্রুত বিচারের মুখোমুখি হতে হবে না। কিন্তু এই পদক্ষেপ ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীর জন্য বিশ্বমঞ্চে একটা বড়সড় ধাক্কা। ইসরায়েলের মিত্র এবং আইসিসির সদস্যের উপর কাজ করার জন্য নতুন চাপ সৃষ্টি করতে পারে।
https://youtu.be/rvAsWNATlHw?si=ocPqm0XOK21OqmMR
আজ যে মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধের দামামা বেঁধেছে, যদি বলা হয় তার মূল সূত্রপাতটা কোথায় বা তার গোড়াটা কোথায়? তাহলে গাজা উপত্যকার নাম নিলে খুব একটা ভুল হবে না। দেখুন, এই গাজা হামলার পর থেকেই কিন্তু ইসরায়েলের উপর বেশ ক্ষেপেছে লেবাননের হিজবুল্লাহ, ওদিকে ইয়েমেনের হুতির মতো বহু সশস্ত্র সংগঠন। যারা সরাসরি ভাবে যুক্ত রয়েছে ইরানের সাথে। ইরান থেকে সামরিক এবং অর্থনৈতিক সাহায্য পায়। এই সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো এখনো পর্যন্ত ইসরায়েলের উপর হামলা চালাচ্ছে। ইসরায়েলকে গাজা উপত্যকার পাশাপাশি সামলাতে হচ্ছে সশস্ত্র গোষ্ঠীর হামলাকে। সাথে ইরান তো রয়েইছে। সাম্প্রতিক সময়ে, ইরান যেভাবে কৌশলে মধ্যপ্রাচ্যের সহ বিশ্বের বহু দেশের সাথে কৌশলগত অংশীদারিত্বের সম্পর্ক বাড়াচ্ছে, তাতেও বেশ চাপে পড়েছে ইসরায়েল। এই মুহূর্তে যুদ্ধ যদি বাঁধে, তাহলে ইসরায়েল বলুন আর ইরান, এদের অন্যান্য দেশের সাপোর্টের যথেষ্ট প্রয়োজন। কিন্তু মধ্যপ্রাচ্যের একটা বড় অংশের সাপোর্ট পেয়ে বসে আছে ইরান। তাই পশ্চিমী দুনিয়ার দিকে একটু বেশি ঝুঁকছে ইসরায়েল। মরার উপর খাঁড়ার ঘা এর মত নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানার আশঙ্কা। কূটনৈতিক সমালোচকরা মনে করছেন, যত দিন যাচ্ছে ইসরায়েল যেন আটকে পড়েছে শত্রু দেশগুলোর মাঝে। বাঁচতে গেলে হয়তো বা গাজায় হামলা বন্ধ করতে হবে, হামাসের সাথে বসে একটা সুষ্ঠু আলোচনায় আসতে হবে। না হলে, যদি এমনটাই হতে থাকে তাহলে পরিণতি অত্যন্ত ভয়ঙ্কর। দাম দিতে হতে পারে গোটা বিশ্বকে।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম