।। প্রথম কলকাতা ।।
Bangladesh: ২০২২ এর ২৯শে নভেম্বর বাংলাদেশে চালু হয়েছে দুই আর পাঁচ টাকার নতুন নোট। যেখানে আছে সিনিয়ার অর্থ সচিব ফাতিমা ইয়াসমিনের স্বাক্ষর। এই নোট প্রথমে ইস্যু করা হয় বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিল অফিস থেকে। বাংলাদেশে নোট ছাপাতে কত খরচ পড়ে জানা আছে? ১০০,৫০০,১০০০ টাকার নোটগুলি ছাপাতে কত খরচ করতে হয় বাংলাদেশ সরকারকে? জালিয়াতির যুগে কোনটা আসন নোট আর কোনটা নকল নোট বুঝবেন কিভাবে?
২৯শে নভেম্বর বাংলাদেশের বাজারে এসেছে নতুন ২ এবং ৫ টাকার নোট। নতুন নোটের রং, পরিমাপ, ডিজাইন, জলছাপ এবং অন্যান্য নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য বর্তমান প্রচলিত নোটের মতই একই থাকবে। এই নতুন মুদ্রিত নোটের পাশাপাশি প্রচলিত থাকবে বর্তমানে প্রচলিত দুই ও পাঁচ টাকার মূল্য মানের কাগজের নোট এবং ধাতব মুদ্রা।
বাংলাদেশে মূলত দুই ধরনের নোট পাওয়া যায়, একটি সরকারি নোট অপরটি ব্যাংক নোট। অর্থ মন্ত্রণালয় কর্তৃক ইস্যু করা নোটকে বলা হয় সরকারি নোট। অপরদিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্তৃক ইস্যুকৃত নোট হল ব্যাংক নোট। বাংলাদেশের ১, ২ এবং ৫ টাকার নোট সরকারি নোট। অপরদিকে ১০, ২০, ৫০, ১০০, ৫০০ এবং ১০০০ টাকার নোট ব্যাংক নোট। সরকারি নোটের ক্ষেত্রে অর্থ সচিবের স্বাক্ষর থাকে। ব্যাংক নোটে কেন্দ্রীয ব্যাংকের গভর্নরের স্বাক্ষর থাকে।
স্বাধীনতার পর বাংলাদেশে ১৯৭৩ সালের ১৮ই ডিসেম্বর সর্বপ্রথম এক টাকার নোট বাজারে এসেছিল। ১৯৭৯ সালে ফের পুনরায় এই নোটের নকশা পরিবর্তন করা হয়। তারপর ১৯৮৮ সালের ২৯শে ডিসেম্বর সর্বপ্রথম বাজারে আসে দুই টাকার নোট। বাংলাদেশের টাকশাল অর্থাৎ দ্য সিকিউরিটি প্রিন্টিং কর্পোরেশন রয়েছে গাজীপুরে। এটি ১৯৮৯ সালে প্রায় ৬৬ একর জায়গা নিয়ে তৈরি হয় । বাংলাদেশে টাকা ছাপানোর আগে ভারত, জার্মানি, সুইজারল্যান্ড, দক্ষিণ কোরিয়া, ইংল্যান্ড থেকে টাকা প্রিন্ট করে নিয়ে আসা হত। বাংলাদেশে টাকা ছাপানোর ধাপ গুলি অত্যন্ত গোপনীয়। এক্ষেত্রে প্রায় ১২ টি ধাপ পেরোতে হয়। এই কারখানায় যে কর্মচারীরা কাজ করেন, কাজের সময় মোবাইল ফোন কিংবা যে কোন ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার নিষিদ্ধ। বাংলাদেশের নোট বানাতে ব্যবহার করা হয় তুলার কাগজের সঙ্গে লিনেন আর জিলেটিন বা পলিভিনাল অ্যালকোহল। এছাড়াও টেকসই করতে ব্যবহার করা হয় নাইলন এবং অন্যান্য উপাদান। তবে ঠিক কি রং ব্যবহার করা হয়, তা নিরাপত্তা জনিত কারণে গোপন রাখা হয়েছে।
নোট ছাপাতে সরকারের খরচ
বাংলাদেশে টাকার কয়েন বা টাকা ছাপাতে কত খরচ পরে জানলে একটু অবাক হবেন। ২০১৯ এর তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসেবে ১ টাকার একটি কয়েন তৈরি করতে খরচ পড়ে ৯৫ পয়সা। ২ টাকার কয়েনে খরচ পড়ে ১ টাকা ২০ পয়সা। বাংলাদেশ বাজারে প্রচলিত সবথেকে বড় নোট হলো ১০০০ টাকা যা ছাপাতে খরচ পড়ে ৭ টাকা। ৫০০ টাকার নোট ছাপাতে খরচ পরে ৬ টাকা। ১০০ টাকার নোট ছাপাতে খরচ পরে প্রায় সাড়ে ৪ টাকা। ২০ আর ৫০ টাকার নোট ছাপাতে খরচ পড়ে আড়াই টাকা। ১০ টাকার নোট ছাপাতে খরচ হয় ২ টাকা ২০ পয়সা, ৫ টাকার নোট ছাপাতে ২ টাকা, আর ২ টাকার নোট ছাপাতে খরচ পরে দেড় টাকা।
আসল নকল নোটের ফারাক বুঝবেন কীভাবে ?
বর্তমানে বাজারে জাল নোটের রমরমা। এর মাঝে আপনি খুব সহজেই বুঝতে পারবেন কোনটি আসল নোট আর কোনটি নকল। সাধারণত ইউভি লাইট যুক্ত জাল নোট সনাক্তকারী মেশিন দিয়ে সহজেই নোট পরীক্ষা করা যায়। কিন্তু সেটি সবার বাড়িতে থাকা সম্ভব নয়। তাই চোখের দেখাতেই কিভাবে জাল নোট ধরতে পারবেন, এক ঝলকে দেখে নিন।
- ২০০ টাকার নোটের একদম ডান কোনায় সোনালী থেকে সবুজ রঙের স্পার্ক দ্বারা ২০০ লেখা আছে। নোটটি একটু নাড়ালেই সোনালী থেকে সবুজ রঙের পরিবর্তন হবে।
- ১০০ এবং ১০০০ টাকার নোটে ব্যবহার করা হয়েছে রং পরিবর্তনশীল কালি। এর ফলে কালিতে মুদ্রিত অংশটি সোনালী থেকে সবুজ হবে। অপরদিকে ৫০০ টাকার নোটের ৫০০ সংখ্যাটি মেজেন্টা থেকে সবুজ রঙে পরিবর্তন হবে।
- হাজার টাকা নোটের পিছন দিকের বাম দিকে রয়েছে নীল রংয়ের বাংলাদেশ ব্যাংক লেখা। নোটটি একটু নাড়ালেই সেখানেও রং পরিবর্তন চোখে পড়বে।
- ১০০,৫০০,১০০০ টাকা নোটের পিছনে অতি সূক্ষ্ম ভাবে লেখা আছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আতশ কাঁচ এবং উন্নতমানের স্মার্ট মোবাইল ফোনের ক্যামেরা দিয়ে এই অংশটি দেখতে পাবেন। এছাড়াও এই নোটগুলির নিরাপত্তা সুতোয় বাংলাদেশ ব্যাংকের লোগো এবং নোটের মূল্যমান মুদ্রিত আছে। নোটটি একটু এদিক-ওদিক করলেই আপনি তা দেখতে পাবেন।