।। প্রথম কলকাতা ।।
গতবছর ইউরো কাপে ফিনল্যান্ডের বিরুদ্ধে গ্রুপ পর্বের ম্যাচে নেমেছিল ডেনমার্ক। ম্যাচ চলাকালীন হঠাৎই মাটিতে লুটিয়ে পড়েন ডেনমার্কের মিডিও ক্রিশ্চিয়ান এরিকসন। হাড় হিম করা সেই ঘটনা আজও ফুটবলপ্রেমীদের মনে তাজা। ক্রিশ্চিয়ান এরিকসন যেন সেইদিন গোটা বিশ্ব ফুটবলকে এক সুতোয় বেঁধেছিলেন। মাঠে উপস্থিত ডেনমার্ক ও ফিনল্যান্ডের ফুটবলার-সমর্থকদের প্রার্থনায় ফিরে এসেছিলেন এরিকসন। হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছিল ফুটবলপ্রেমীরা।
বিশ্বকাপের মঞ্চ মাতাতে সেই এরিকসন এখন কাতারে। ইউরো কাপের অধরা স্বপ্নপূরণ করতে কাতারে পা রেখেছিলেন ক্রিশ্চিয়ান এরিকসন। ডেনমার্ক বিশ্বকাপের অভিযানে তিউনিশিয়ার সঙ্গে ড্র করে। এবং দ্বিতীয় ম্যাচে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্সের কাছে হেরে খাদের কিনারায় চলে যায়। শেষ ষোলোয় পৌঁছাতে শেষ ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে জয় ছাড়া অন্য কোন উপায় নেই ড্যানিশদের। দুই ম্যাচেই পুরো নব্বই মিনিট খেলেছেন ক্রিশ্চিয়ান এরিকসন। দুই ম্যাচেই ডেনমার্কের মাঝমাঠের অন্যতম ভরসা হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের এই মিডফিল্ডার।
বিশ্বকাপে জাতীয় দলে ডাক পেয়ে ক্রিশ্চিয়ান এরিকসন জানিয়েছিলেন, “জাতীয় দলের হয়ে বিশ্বকাপে খেলতে পারাটা অত্যন্ত স্পেশাল একটা মুহূর্ত। আমি ফিরে আসতে পেরে খুব খুশি। ওই ঘটনা আমাকে একটা সুযোগ করে দিয়েছে যেন নতুনভাবে ফিরে আসার। নতুনভাবে বেঁচে থাকার।”
ডেনমার্কের বিশ্বকাপ দলে এরিকসনের ঢুকে যাওয়াটা কোনও রূপকথার চেয়ে কম নয়। ইউরো কাপের সেই ঘটনার পর এরিকসনের ফুটবল ক্যারিয়ার নিয়ে উঠেছিল প্রশ্ন। অতি বড় ফুটবল ভক্তও ভাবতে পারেননি এরিকসন মাঠে ফিরবেন। তবে তাকে সুস্থ হতে করতে হয়েছে কঠিন লড়াই। বুকে বসেছে পেস মেকার। এক মাসেরও বেশি সময় ধরে কাটাতে হয়েছে হাসপাতালে। এই সব দেখে তাঁর তৎকালীন ক্লাব ইন্টার মিলান নিয়ম দেখিয়ে এরিকসনের সঙ্গে চুক্তি বাতিল করে। ইতালিয়ান ক্লাব ইন্টার মিলান জানায় পেসমেকার নিয়ে কোন ফুটবলারের খেলা সম্ভব নয়। এটা ইতালিয়ান লিগের নিয়মের মধ্যে পড়ে। কিন্তু এরিকসন অন্য ধাতুর তৈরি।
অদম্য ইচ্ছাশক্তির জেরে প্রথমে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ ক্লাব ব্রেন্টফোর্ডের হয়ে ফুটবলে ফেরা, আর সেখানে ভালো পারফর্ম করে জাতীয় দলে প্রত্যাবর্তন করেন এরিকসন। আমস্টারডামে নেদারল্যান্ডসের বিরুদ্ধে ডেনমার্কের প্রীতি ম্যাচে পরিবর্ত হিসেবে নামেন ক্রিশ্চিয়ান এরিকসন। আর এরিকসন মাঠে নামার পর স্টেডিয়ামে উপস্থিত সকল দর্শক উঠে দাঁড়িয়ে অভিবাদন দেন ডেনমার্কের মিডফিল্ডারকে। শুধু মাঠে নামাই নয়, মাঠে নেমে দুই মিনিটের মধ্যে গোল করেন এরিকসন। যদিও এই ম্যাচে নেদারল্যান্ডসের কাছে পরাজিত হয় ডেনমার্ক।
ভাগ্য খুলে যায় এরিকসনের। চলতি মরসুমের শুরুতেই তিন বছরের জন্য ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড সই করায় ডেনমার্কের এই তারকাকে। নিজের ক্যারিয়ারে রূপকথার গল্প লিখে বিশ্বকাপের মঞ্চ রাঙাতে এসেছেন ক্রিশ্চিয়ান এরিকসন। এখন অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে জাতীয় দলের জার্সিতে নিজেকে কতটা রাঙাতে পারবেন, সেটাই দেখার।