।। প্রথম কলকাতা ।।
কৃষ্ণনগরের জগদ্ধাত্রী পুজোর আড়ম্বরের কথা তো আপনার জানা। কিন্তু এখানের এক পুজোর আজব প্রথার কথা আপনার জানা আছে কি! এই দেখুন শাড়ি গয়নায় সেজে শাঁখ বাজিয়ে উলু দিয়ে মা জগদ্ধাত্রীর ঘট ভরতে যাওয়া হচ্ছে। মাথায় ঘোমটা,কপালে টিপ, নাকে নথ।আপনি বলবেন, সধবা মহিলারা দল বেঁধে জল ভরতে যাবেন, এ আর নতুন কথা কি! শাড়ি গয়নায় সেজেছেন যাঁরা তাঁরা কেউ মহিলা নন, সকলেই পুরুষ। এবার আপনি নিশ্চয়ই অবাক হচ্ছেন। জানতে চাইছেন কোন পুজোর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে এমন আজব প্রথা! কেনই বা এমন নিয়ম?
কেউ পরেছেন বেনারসী, কারও পরনে লাল পেড়ে সাদা তাঁত। কেউ কেউ আবার সেজে ওঠেন সোনার গয়না, সিঁদুর আলতায়। মাথায় ঘোমটা। লজ্জা জড়ানো হাসি।সবই ঠিক ছিল। কিন্তু ওই দেখুন, ঘোমটা টানা মুখে দেখা যাচ্ছে কালো গোঁফ! এবার নিশ্চয়ই বুঝেছেন, এই মহিলাবেশীদের অধিকাংশই পুরুষ। কৃষ্ণনগরের মালোপাড়ায় পুজোর সূচনা লগ্ন থেকেই চলে আসছে এই মজার প্রথা। শেষ রাতে অধিবাসের পর শুরু হয় জল ভরার পালা। তার আগে মাঝরাত থেকেই পুরুষদের নারীরূপে সাজিয়ে তোলেন বাড়ির মহিলারাই। নারীর সাজে জল সইতে যান পুরুষরা। কেন এই রীতি জানার আগে দেখে নেওয়া যাক কিভাবে শুরু হল এই পুজো।
বঙ্গের গদিতে তখন রাজ করছেন নবাব আলিবর্দি খাঁ।তাঁর রাজত্বকালে নদীয়ার রাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায়ের কাছ থেকে ১২ লাখা টাকা নজরানা দাবি করা হয়। কৃষ্ণচন্দ্র রায় তা দিতে অস্বীকার করলে তাঁকে বন্দি করে নিয়ে যাওয়া হয় মুর্শিদাবাদে। ছাড়া পেয়ে রাজা যখন নদীপথে কৃষ্ণনগরে ফিরছেন, তখনই তাঁর কানে আসে মা দুর্গার বিসর্জনের বাজনা। দুর্গাপুজো করতে না পারায় অত্যন্ত দুঃখ পান তিনি। এরপর তিনি শুরু করেন জগদ্ধাত্রী পুজো। তা সার্বিক রূপ দিতে কাছের লোকদের জগদ্ধাত্রী পুজো করার উৎসাহ দেন। সেই পুজো করতে অনুদানেরও ব্যবস্হা করেন তিনি। তেমনই রাজ অনুদান পেয়ে পুজো শুরু হয়েছিল মালোপাড়ায়। এখনও রাজবাড়ি থেকে আসে অনুদান।
এখানে ধর্মরাজ শিব হিসেবে পূজিত হন। শিব অর্ধনারীশ্বর। তাঁর শরীর থেকে নারীর সৃষ্টি। দেবতাকে তুষ্ট করার জন্য সেই সময়ের নিম্নবর্গের মানুষরা নারী সাজার প্রথা চালু করেন। আজও সেই প্রথা চলে আসছে। এখানে দেবী জগদ্ধাত্রীকে জলেশ্বরী রূপে পুজো করা হয়। ঢাকের বাজনার সঙ্গে শাড়ি পরে ছেলেরা। জল ভরার সময় রাস্তায় তিন দেবতার মন্দিরে গিয়ে আমন্ত্রণ জানান। সেই আমন্ত্রণের মধ্যে দিয়েই করা হয় মা জলেশ্বরীর পুজোর সূচনা। এভাবেই বছরের পর বছর ধরে নিয়ম নিষ্ঠার সঙ্গে হয়ে আসছে মা জলেশ্বরীর পুজো। রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের রাজবাড়ির পুজোর পর কৃষ্ণনগরের সব থেকে পুরনো পুজোর তালিকায় সবার ওপরে মালোপাড়া বারোয়ারির নাম।
এই পুজোর বিশেষ আকর্ষণ হল ধুনো পোড়ানো। কেউ মাথায় নিয়ে বা দুই হাতে ধুনো পোড়ান এই পুজোয়।লেলিহান শিখা ছুঁয়ে যায় মন্দিরের ছাদ। মালো পাড়ার মা জলেশ্বরীর বিসর্জন কৃষ্ণনগরের ঐতিহ্যশালী সাঙের মাধ্যমে হয় না। অর্থাৎ কাঁধে করে এই প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয় না। গাড়িতে করে নিয়ে যাওয়া হয় দেবী প্রতিমা ।মায়ের মূর্তির সামনে জ্বলে কার্বাইট গ্যাসের বাতি। তবে সবকিছুকেই ছাপিয়ে যায় নারীবেশী পুরুষদের মাধ্যমে মায়ের অভিষেক।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম