।। প্রথম কলকাতা ।।
ভারত-পাকিস্তানের তুমুল অশান্তি গুপ্ত সীমান্ত নিয়ে। এই সীমান্তের নীচে আছে টন টন গ্যাসের সম্ভার। এমন এক সীমান্ত যেখানে কোনও কাঁটাতারের বেড়া নেই। এই নালায় একবার ভুলেও ঢুকলে সোজা জেল ইংরেজ আমলের কোনও চোরা টানেল নাকি? এমন একটুকরো এলাকা যার দখল পেলে সত্যিই মালামাল হওয়া সম্ভব। LOC, সিয়াচেন, লাদাখ, কাশ্মীর নয় তাহলে পাকিস্তানের নজর ভারতের অন্য কোন গুপ্ত এলাকায়? কেন এই এলাকা নিয়ে খুব বেশি সুর চড়ায় না ইসলামাবাদ, কোনওদিনও কি সেটলমেন্ট হওয়া সম্ভব? একেবারে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর রাজ্য গুজরাত সেখানেই রয়েছে স্যর ক্রিক। আর এই স্যর ক্রিক নিয়েই বহু বছর ধরে বিবাদ দুদেশের মধ্যে। নিয়ন্ত্রণরেখা (এলওসি) যেমন কাশ্মীর থেকে পাক অধিকৃত কাশ্মীরকে আলাদা করে রেখেছে সেই রকমই দক্ষিণ-পশ্চিমে ভারতের গুজরাত এবং পাকিস্তানের সিন্ধ প্রদেশকে আলাদা করে রেখেছে ‘স্যর ক্রিক’ এর গুরুত্ব মারাত্মক।
আন্তর্জাতিক মহল বলে এই স্যর ক্রিক কোনওদিনও পাকিস্তানের দখলে চলে গেলে অর্থনৈতিক দুর্দশা নিয়ে অ্যাটলিস্ট ভাবতে হবে না ইসলামাবাদকে। সীমান্ত বা বর্ডার মানেই যে ছবি ভেসে ওঠে এটা কিন্তু একেবারেই তেমন নয়। ‘ক্রিক’ হল এক রকমের কম গভীরতাযুক্ত জলের প্রবাহ একে দেখতে নদীর মতো মনে হলেও এগুলি আসলে নদী নয়। ভারত পাকিস্তান-সহ বহু দেশে এধরণের জলের প্রবাহ দেখতে পাওয়া যায়। তবে এর তলাতেই আছে আসল সম্ভার। ব্রিটিশ আমলে কোনও এক ইংরেজের নামে রাখা স্যর ক্রিকের দৈর্ঘ্য প্রায় ৯৬ কিলোমিটার। যাত্রাপথের শেষেটা মিশেছে আরব সাগরে। কেউ আপনাকে না বললে হয়ত আপনি বুঝতেও পারবেন না এটাই সেই সীমান্ত। যার জন্য ভারতের ওপর হামলাও করেছিল পাকিস্তান। সিন্ধু নদের ব-দ্বীপে তৈরি হয়েছে এই ক্রিক। এই অঞ্চলটি ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে অবস্থিত একটি বিতর্কিত ভূখণ্ড এটি ভারতের কচ্ছের রণের ঠিক পশ্চিমে অবস্থিত কচ্ছ এলাকাকে পাকিস্তানের সিন্ধ প্রদেশ থেকে আলাদা করে রেখেছে স্যর ক্রিক। ভারতে একে আগে ‘বান গঙ্গা’ বলে ডাকা হত।
এবার আসি মেন ফ্যাক্টরে। ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে অবস্থিত এই স্যর ক্রিক অঞ্চলের জমি ভেজা হওয়ায় এই জমিতে টহল দেওয়া বেশ কঠিন। এখানে কোনও কাঁটাতারের বেড়াও নেই। কৌশলগত এবং সামরিক দিক থেকে এর কাশ্মীরের মতো গুরুত্ব না থাকলেও এই জলপ্রবাহে প্রচুর মাছের সম্ভার রয়েছে। এই অঞ্চলকে এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ মৎস্যভান্ডার বলে মনে করা হয়। দুই দেশের মৎস্যজীবীরা এখানে মাছ ধরতে এসে প্রায়শই সীমা লঙ্ঘন করে ফেলেন তারপরই জেলবন্দি। এখানেই শেষ নয় মনে করা হয় এই অঞ্চলের মাটির নীচে বিপুল পরিমাণে গ্যাস এবং হাইড্রোকার্বন রয়েছে যে দেশই এর পুরো দখল নিতে পারবে তাদেরই জ্বালানির চাহিদা মেটানোর ক্ষমতা থাকবে। ১৯৯৯ সালে কার্গিল যুদ্ধের ঠিক পর ঘটে এক বড় ঘটনা পাকিস্তানি বায়ুসেনার বিমান আকাশসীমা লঙ্ঘন করে এই এলাকা দিয়ে ভারতের আকাশে ঢুকে পড়ে। সেসময় ভারতীয় বায়ুসেনার মিগ-২১ বিমান পাকিস্তানি বিমানটিকে কচ্ছের রণের কাছে ধ্বংস করে। সেই ঘটনায় ১৬ জন পাক সেনা নিহত হন।
পাকিস্তান মনে করে সীমান্ত নির্ধারণের ২৪তম সমান্তরাল রেখা অনুযায়ী গুজরাটের কচ্ছের রণের অর্ধেক অংশ তাদের। ভারত তাদের এই দাবি নস্যাৎ করে। ১৯৬৮-তে ট্রাইবুনাল তাদের রায়ে জানিয়ে দেয় রণের ৯০ শতাংশ ভারতের মধ্যে পড়ে এবং ১০ শতাংশ পাকিস্তানের। এর পর পাকিস্তান দাবি করে স্যর ক্রিক সিন্ধ প্রদেশের মধ্যে অবস্থিত। শেষমেষ ১৯২৫ সালে আন্তর্জাতিক সীমার থালউইগ প্রিন্সিপালের উপর ভিত্তি করে একটি মানচিত্র প্রকাশিত হয়। সেই ম্যাপ অনুযায়ী স্যর ক্রিকের মাঝামাঝি খুঁটিও বসানো হয়। যদিও পাকিস্তান সেই ম্যাপও মানে না। তবে পাকিস্তান কাশ্মীর নিয়েই এত ব্যস্ত যে স্যর ক্রিক নিয়ে খুব বেশি মাথা ঘামাতে দেখা যায় না তাদের। তবে কবে কোন দ্বন্দ্ব মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে তা কেই বা বলতে পারে।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম