।। প্রথম কলকাতা ।।
ফুঁসছে তিস্তা। তছনছ হয়ে যাচ্ছে চারিদিক। বন্যার আশঙ্কায় কাঁপছে বাংলাদেশ। এই বুঝি সব কিছু ভাসিয়ে নিয়ে গেল। এক যুগ কেটে গেলেও শত আলাপ আলোচনা সব ব্যর্থ। সমাধান হয়নি তিস্তা চুক্তির। আর ফল ভুগছে তিস্তা পাড়ের সাধারণ মানুষ। ভারত নিরুপায় হয়ে ছাড়ছে হাজার হাজার কিউসেক জল। এবছর যেন সব লিমিট ক্রস করল। নজিরবিহীন ভাবে ছাড়া হচ্ছে জল। রেহাই পাবে না বাংলাদেশ। ক্ষতি হবে ডাবল ডাবল। ভীষণ খারাপ অবস্থায় মৌসুমী বায়ু। সাবধান হন এখনই।
একদিকে মেঘ ভাঙা বৃষ্টি, অপরদিকে হরপা বান। তছনছ হয়ে যাচ্ছে ভারতের সিকিম। তার এফেক্ট সরাসরি গিয়ে পড়ছে বাংলাদেশে। ফুঁসছে তিস্তা, আর ভয় ধরছে দুই বাংলার । ইতিমধ্যেই ভারতে ডুবেছে বহু এলাকা। জলের তলায় জাতীয় সড়ক। মারা যাচ্ছে মানুষ। উত্তরবঙ্গেও বন্যার তীব্র আশঙ্কা। নড়েচড়ে বসেছে রাজ্য সরকার। খোলা হয়েছে কন্ট্রোল রুম। বারংবার মাইকিং চালিয়ে তিস্তা পাড়ের মানুষকে সতর্ক করা হচ্ছে। এক কথায়, তিস্তার জলে ডুবছে ভারতের বহু অঞ্চল আর তার থেকে বাঁচতে হু হু করে জল ছাড়া হচ্ছে ডিভিসি থেকে।
এ কথা তো সবাই জানে। তিস্তা ব্যারাজের জল ছাড়া মানেই সেই জল গিয়ে বানভাসি ঘটাবে বাংলাদেশে। তার উপর জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের ড্যাম ভেঙে যাওয়ায় দুকুল ছাপিয়ে পরিস্থিতি আরো বেসামাল। এখানে ভারতও অসহায়। কোনো দেশই চায় না প্রতিবেশী দেশের মারাত্মক ক্ষতি হোক। কিন্তু কিচ্ছু করার নেই। প্রকৃতির কাছে সবাই ক্ষুদ্র।
এমত অবস্থায়, বাংলাদেশে আবার মরার উপর খাঁড়ার ঘা। দেশটার আবহাওয়া দপ্তর ইতিমধ্যেই সতর্ক করেছে, ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিতে ভিজবে রংপুর রাজশাহী ঢাকা ময়মনসিংহ খুলনা বরিশাল চট্টগ্রাম সিলেট বিভাগের বহু জায়গা। আবহাওয়ার বারংবার উলটপালটের কারণ একটাই। লঘুচাপ। লঘুচাপের কেন্দ্রস্থল পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চল হয়ে আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত। এই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশের উপর ভীষণ সক্রিয় মৌসুমী বায়ু। প্রবল অবস্থায় রয়েছে উত্তর বঙ্গোপসাগরে।
এই মুহূর্তে জল যদি বিপদ সীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়, তাও বাংলাদেশের রংপুর লালমনিরহাট জেলা সহ উত্তর অঞ্চল অতিক্রম করে প্লাবিত হবে নিম্নাঞ্চল। বাংলাদেশের তিস্তা পাড়ের মানুষ ইতিমধ্যেই আতঙ্কিত। অনেকেই সতর্ক হয়ে নিজেদের মালামালসহ গবাদি পশু নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিচ্ছেন। চলছে সর্বক্ষণ মনিটরিং।
পরিস্থিতি এতটা খারাপ হত না। আসলে কয়েক দিনে পর পর ভারি বৃষ্টি, তার উপর সিকিমের তিস্তা নদীতে হঠাৎ বন্যা দেখা দিয়েছে। সিকিম এবং পশ্চিমবঙ্গের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে তিস্তা নদী প্রবেশ করেছে বাংলাদেশে। জলের চাপ সামলাতে দফায় দফায় ব্যারেজের গেট খুলে দেওয়া হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বন্যা পরিস্থিতিতে এভাবে জল ছাড়ার ঘটনা খুবই স্বাভাবিক। কিন্তু বিগত বছরের তুলনায় এ বছরটা যেন নজিরবিহীন। যার জেরে ক্ষতিগ্রস্ত হবে গাজলডোবা, দোমোহনী, মেখলিগঞ্জ, সহ বাংলাদেশের নিচু এলাকাগুলো।
খুব বেশি দিন হয়নি বাংলাদেশ সবে একটু বন্যা সামলে উঠেছে। ভারতের উজানে ভারী বৃষ্টি হলেই তিস্তার জল ভাসিয়ে নিয়ে যায় বাংলাদেশের নীলফামারী, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, রংপুরের নিম্নাঞ্চল। বেশি বৃষ্টিপাত হলে, ফুঁসতে থাকে তিস্তা সহ ধরলা, দুধকুমার, বহ্মপুত্র । তাই তীব্র উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠার মধ্যে রংপুরের গঙ্গাছড়া উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নের মানুষ।
সোজা কথায়, যতদিন না তিস্তার জলের সুষ্ঠু সমাধান হচ্ছে ততদিনই এমন হবে। ভুগবে দুই দেশেরই মানুষ। সম্প্রতি ভারতের তরফ থেকেও তিস্তা চুক্তি নিয়ে আগ্রহ প্রকাশ করা হয়েছে। কিন্তু তা এখনো ফলপ্রসূ হয়নি। রয়েছে আলাপ আলোচনা স্তরে। এই মুহূর্তে সুষ্ঠু পরিকল্পনা আর চুক্তি ছাড়া কোন পথ নেই। বর্ষার এই কটা দিন একটু সাবধান। সতর্ক থাকুন। নিরাপদে থাকুন।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম