।। প্রথম কলকাতা ।।
তেল-গ্যাস-শস্যে চীনকে ভরিয়ে দিচ্ছে রাশিয়া। রেল সেতুর পাশে ট্রান্সশিপমেন্ট অয়েল কমপ্লেক্স, ঘুরে যাচ্ছে বাণিজ্য। আরও বেশি জুড়ে যাচ্ছে বেজিং-মস্কো। ইউরোপের সাবস্টিটিউট হয়ে উঠছে চীন? বড় সম্ভাবনা দেখলেন পুতিন। চীনের কাছে ফেইল করছে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞাও। এমনিতেই এত দেওয়া নেওয়া, পুতিন – শি বাণিজ্য ডিলে আরও কী জানবে গোটা বিশ্ব? শি-পুতিন জোট শুধু অস্ত্রে নয় বাণিজ্যেও তাক লাগাচ্ছে দুনিয়াকে।প্রায় দু বছর ধরে রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ চলছে। মস্কো অর্থনৈতিক সহায়তার জন্য বন্ধুদেশ চীনের ওপর আরও নির্ভরশীল হচ্ছে। পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও দুই দেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরও বেশি জোরালো হচ্ছে। দুই দেশ এখন আরো কাছাকাছি। তেল-গ্যাসের পাশাপাশি চীনের শস্যের চাহিদাও পূরণ করছে রাশিয়া। পশ্চিমাদের নিষেধাজ্ঞা চীনের কাছে ফেইল করছে। বেইজিং বলছে তারা কোনো আন্তর্জাতিক নিয়মনীতির লঙ্ঘন করেনি, চীন চাইলে যেকোনো দেশকে সহযোগিতা করতেই পারে যেমন কথা, তেমন কাজ।
গত সপ্তাহে রাশিয়ার ইউনাইটেড অয়েল অ্যান্ড গ্যাস কেমিক্যাল কোং, চীনের জুয়ান ইউয়ান ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডেভেলপমেন্টের সঙ্গে আলোচনা সেরে ফেলেছে। রেল সেতুর ঠিক পাশে ট্রান্সশিপমেন্ট অয়েল কমপ্লেক্স নির্মাণের বিষয়ে দুই দেশ একমত হয়েছে। ওই রেল সেতু রুশ শহর নিঝনেলেনিনস্কোয়েকে চীনের টংজিয়াংয়ের সঙ্গে যুক্ত করেছে। এতে দুই দেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরও উন্নত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। রপ্তানির জন্য ইউরোপ–নির্ভরতা কাটিয়ে উঠতে চীনের উপর ভরসা করছে রাশিয়া, বহুমুখী হওয়ার চেষ্টা করছে মস্কো। তার অংশ হিসেবে এই ট্রান্সশিপমেন্ট অয়েল কমপ্লেক্স, মানে এই তেল পরিবহনের কেন্দ্র বনভূমিকা পালন করবে বলে মনে করা হচ্ছে। রয়টার্স বলছে, ইউক্রেনের সাথে যুদ্ধের কারণে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার অধীনে থাকা রাশিয়া তার অর্থনৈতিক সহায়তার জন্য ঘনিষ্ঠ বন্ধু বেইজিংয়ের দিকে ঝুঁকছে। তথ্য বলছে, চলতি বছরের প্রথম পাঁচ মাসে চীন ও রাশিয়ার বাণিজ্যিক লেনদেন বেড়েছে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৪০ শতাংশেরও বেশি। চীনের জেনারেল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অব কাস্টমস-এর ডেটা বলছে, ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত দুই দেশের বাণিজ্য দাঁড়িয়েছে ৯৩.৮ বিলিয়ন ডলারে। এর মধ্যে শুধু মে মাসেই দুদেশের মধ্যে বাণিজ্য হয়েছে ২০.৫ বিলিয়ন ডলারের। মে মাসেও চীন রাশিয়া থেকে আমদানি করেছে ১১.৩ বিলিয়ন ডলারের পণ্য। পাশাপাশি রাশিয়ায় দিন দিন বাড়ছে চীনের রফতানি! জানুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত দেশটিতে বেইজিংয়ের রফতানি দাঁড়িয়েছে ৪২.৯৬ বিলিয়ন ডলারে। যা ২০২২ সালের একই সময়ের তুলনায় ৭৫.৬ শতাংশ বেশি।
শুধুই কী তেল-গ্যাস? শস্যের ক্ষেত্রেও চীনা চাহিদা পূরণ করছে মস্কো বৈশ্বিক খাদ্য ঘাটতির কারণে চীন ও রাশিয়ার মধ্যে শস্য ব্যবসা বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তা তৈরি হয়েছে। চীনা বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, চীনের উত্তর–পূর্বাঞ্চলের রুটির ঝুড়ি হিসেবে খ্যাত হেইলংজিয়াংয়ের সঙ্গে রাশিয়ার শস্য করিডর নির্মাণ হলে চীনের খাদ্য নিরাপত্তা আরও বেশি সুরক্ষিত হবে। ওটা এক্ষেত্র চীন মস্কোর উপর আস্থা রাখছে। তাছাড়া রাশিয়ান দূরপ্রাচ্য থেকে চীনে সামুদ্রিক পণ্য রপ্তানি বাড়ানোর আশাও করছে মস্কো। মূলত ওই অঞ্চলে রাশিয়ার প্রায় ৭০ শতাংশ সামুদ্রিক মাছ ধরা পড়ে। সামুদ্রিক খাদ্য উৎপাদিত হয়। সম্প্রতি ধ্বংসপ্রাপ্ত ফুকুশিমা প্ল্যান্ট থেকে তেজস্ক্রিয় জল সমুদ্রে ছাড়ার কারণে বেইজিং জাপান থেকে সামুদ্রিক খাবার আমদানি নিষিদ্ধ করেছে। আর, এই সুযোগকেই বড় করে কাজে লাগাতে চাইছে রাশিয়া।
চীন আগেই বলেছিল, হেইলংজিয়াং প্রদেশ হওয়া উচিত উত্তরের সঙ্গে যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম্যযা জাতীয় প্রতিরক্ষা, খাদ্য ও জ্বালানি সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে বলে মত বিশেষজ্ঞদের একাংশের। মোদ্দা কথা, চীন-রাশিয়ার বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরো বেশি জোরালো হচ্ছে। ইনভেস্ট এর গভীরতা বাড়ছে। দুই দেশের মধ্যে ব্যাক টু ব্যাক আলোচনা চলছে। বেইজিংয়ে চীনা বাণিজ্য মন্ত্রের সঙ্গে রাশিয়ার অর্থমন্ত্রীর বৈঠক হয়ে গেছে। এবার রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বেইজিং সফরে যাবেন। সবমিলিয়ে চীন-রাশিয়ার অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য সহযোগিতা আরও গভীর, আরও দৃঢ় হচ্ছে। আর এই দিন দিন বাড়তে থাকা মস্কো ও বেইজিংয়ের বাণিজ্যিক সম্পর্ক চিন্তায় ফেলে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র সহ পশ্চিমা বিশ্বকে। জানিয়ে রাখি, মস্কোর পাশে দাঁড়ানোয় বাণিজ্যিকভাবে বেইজিংকে কিন্তু অলরেডি নানাভাবে হেনস্তার চেষ্টা করছে পশ্চিমা বিশ্ব।
যার প্রভাব পড়তে শুরু করেছে চীনের অর্থনীতিতেও। পশ্চিমা দেশগুলোর পাশাপাশি পশ্চিমা প্রভাবিত প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গেও দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য আশঙ্কাজনক হারে কমতে শুরু করেছে বেইজিংয়ের। ২০২২ সালের তুলনায় চলতি বছরের প্রথম পাঁচ মাসে তাইওয়ানের সঙ্গে চীনের বাণিজ্য হ্রাস পেয়েছে ২৫ শতাংশ। অন্যদিকে শীর্ষ বাণিজ্য সহযোগী যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গেও চীনের বাণিজ্য হ্রাস পেয়েছে ১২.৩ শতাংশ। পুতিনের সঙ্গে জোট বাঁধতে গিয়ে কী তাহলে বিপদে পড়ে যাচ্ছে বেইজিং? বিশেষজ্ঞরা বলছেন মস্কোর সঙ্গে ক্রমেই বাড়তে থাকা বাণিজ্যিক লেনদেনের মাধ্যমে বেইজিং ওই ঘাটতি ঠিক পুষিয়ে নেবে। আর আগামী মাসে পুতিন শি মুখোমুখি বৈঠকে এই বাণিজ্যেই জোয়ার আসতে পারে। ভেতরে ভেতরে তলে তলে চীন রাশিয়া কোন কোন চুক্তিতে আবদ্ধ হবে ঘুণাক্ষরেও টের পাবে কি আমেরিকা?
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম