।। প্রথম কলকাতা ।।
এ জিলিপি যেমন তেমন জিলিপি নয় একেবারে জাম্বো সাইজ। একেকটি জিলিপি একজন মানুষ তো নয়ই পাঁচজন মিলে খেতে পারবে কিনা সন্দেহ রয়েছে। ভাদ্রের শেষে বাঁকুড়ায় এক বিশেষ জায়গার মানুষ জিলিপি নিয়ে মাতামাতি শুরু করে দেন। এই শাহী মিষ্টির ইতিহাস জানেন? কেন বছর বছর জিলিপির উৎসব হয়ে আসছে? বিশ্বকর্মা পুজো মানেই কেঞ্জাকুড়ার মেগা জিলিপি। কার তৈরি জিলিপি কত বড় সে নিয়ে বিক্রেতাদের মধ্যে চলতে থাকে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই। বাঁকুড়ার কেঞ্জাকুড়া মেগা জিলিপি নিয়ে রেডি। একটা জিলিপির দামই তিনশো থেকে সাতশো টাকা। বিউলির বেসন, চাল গুঁড়ো, ময়দায় তৈরি বনস্পতিতে ভাজা। জিলিপির এক একটির ওজন কম করে তিন থেকে চার কেজি। অনেকেই আত্মীয়দের উপহারও দেন এই জিলিপি। এই জাম্বো সাইজের মিষ্টির বানানোর পিছনে কারণটা ঠিক কী?
শোনা যায়,পঞ্চকোট রাজ নীলমনি সিংহ দেও-র তৃতীয়া কন্যা ভদ্রাবতীর অকালমৃত্যুর পর তাঁর স্মৃতিতেই রাঢ়বাংলায় ভাদু পুজোর সূচনা করেছিল রাজ পরিবার। সেই সময় দ্বারকেশ্বর নদের তীরে থাকা বাঁকুড়ার প্রাচীন গ্রাম কেঞ্জাকুড়ায় রীতিমতো জাঁকজমকের সঙ্গে পুজো করা হত। সারা ভাদ্র জুড়ে ঘরে ঘরে লোকগানের মাধ্যমে ভাদু আরাধনার পাশাপাশি সংক্রান্তিতে হত ভাদুর জাগরণ। এই জাগরণে রাতভর বাড়িতে বাড়িতে চলত হুল্লোড়, নাচ গান আর দেদার খাওয়া দাওয়া আয়োজন। উপাচারে প্রতিবেশীর ভাদু পুজোকে টপকে যাওয়ার প্রতিযোগিতাও চলত। সেই প্রতিযোগিতাতে ভাদুর সামনে জিলিপি দেওয়া হত। জিলিপির আকারে অন্যের ভাদু পুজোকে টেক্কা দিতে সকলেই বড়, আরও বড় জিলিপির বরাত দিতে থাকেন। কেঞ্জাকুড়ার মিষ্টি ব্যবসায়ীদের এভাবেই ধীরে ধীরে কেঞ্জাকুড়ার জাম্বো জিলিপি আসে সময়ের সঙ্গে পুজোর জনপ্রিয়তায় এখন ভাঁটার টান এসেছে ঠিক কিন্তু জাম্বো জিলিপি নিয়ে মাতামাতি কমেনি একচুলও কমেনি।
ভাদ্র সংক্রান্তি মানেই ভোরে স্নান সেরে পাত্রে ফুল নিয়ে বা গোবরের উপর ধান ছড়িয়ে ভাদুর রূপ কল্পনা করে তাঁর আরাধনা। মানভূম অঞ্চলে ঐতিহ্য মেনে এ আরাধনায় সামিল হন মূলত কুমারীরাই। ভাদুকে নিয়ে বহু লোককথাও প্রচলিত রয়েছে এই এলাকায়। এই লোক উৎসবকে ঘিরেই বাঁকুড়ার কেঞ্জাকুড়া মেতে ওঠে জিলিপির উৎসবে।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম