।। প্রথম কলকাতা ।।
ভারত মহাসাগরে সেফ খেলতে চাইছে শ্রীলংকা। ভারতের সঙ্গে দফারফা? চীনের দিকে ঝুঁকলেই প্রফিট? ভারত মহাসাগর নিয়ে দড়ি টানাটানিতে শ্রীলঙ্কার নিউট্রাল পজিশন কী শুধুই দিখাবা? দেশের নিরাপত্তা কৌশলে বড় বদলের সিদ্ধান্ত। সবটাই কী চীনা ঋণের এফেক্ট? শ্রীলঙ্কাকে ফ্রন্ট লাইনে রেখে ঘুঁটি সাজাচ্ছে চীন? পাল্টা চালে খেলা ঘোরাবে ভারত। ভারত মহাসাগরে ক্রমশ ডুবোজাহাজ এবং নজরদার জাহাজের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাহলে কি ভয় পাচ্ছে শ্রীলঙ্কা? চীনকে শায়েস্তা করতে যে ছক সাজাচ্ছে ভারত যুক্তরাষ্ট্র তাতে শ্রীলঙ্কার ভূমিকা কী? খারাপ সময় ভারতের করা সাহায্যের কথা এতো তাড়াতাড়ি ভুলে গেল দেশটা?
কূটনৈতিক মানচিত্রে গুরুত্বপূর্ণ স্থান ভারত মহাসাগর। বড় ইম্পরট্যান্ট বাণিজ্য রুট! পেট্রোলিয়াম ও জ্বালানিবাহী বাল্ক-এর বেশির ভাগই ভারত মহাসাগরের মধ্য দিয়ে বিশ্বের কাছে যায়। ভারত মহাসাগরের মধ্য দিয়ে বিপুল পরিমাণ শিপিং কার্যক্রম চলে। যেখানে প্রভাব বিস্তারের লড়াইয়ে নেমেছে চীন-আমেরিকা। রাশিয়াও যাতে ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে নাক না গলাতে পারে, কড়া নজর রাখছে পশ্চিমা বিশ্ব। ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে চীনের একাধিপত্য কমাতেই আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, জাপান ও ভারত নিয়ে তৈরি হয়েছে ‘কোয়াড’ গোষ্ঠী। বিষয়টা কিছুটা এরকম, একদিকে চীন ভার্সেস অন্যদিকে বিশ্বের তাবড় তাবড় দেশ। যখন চীনকে রুখতে সব দেশ একাট্টা, তখন শ্রীলঙ্কা জানিয়ে দিল ভারত মহাসাগরের এই ‘লড়াইয়ে’ একেবারেই নিউট্রাল পজিশন নেবে তারা। দ্বীপরাষ্ট্রটি শুধুই নিজেদের নিরাপত্তা এবং উন্নতির দিকেই মন দেবে।
অর্থাৎ নিজেদের স্বার্থের বাইরে শ্রীলংকা কিছু ভাবছে না, এটা একেবারে স্পষ্ট। একইসঙ্গে দেশের জাতীয় নিরাপত্তা সংক্রান্ত কৌশল বদলের কথা জানিয়ে দিয়েছেন শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট। বর্তমান ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে এবং জলবায়ু পরিস্থিতির নিরিখে এই নিরাপত্তা সংক্রান্ত কৌশল পুনর্বিবেচনা করা প্রয়োজন বলে মনে করছে শ্রীলঙ্কা। বুঝতে হবে, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে এই ভারত মহাসাগর বড় ভূমিকা পালন করে। আর দ্বীপরাষ্ট্র হিসাবে এই সাগরে বড় ভূমিকা রয়েছে শ্রীলঙ্কারও। তাই, ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চল নিয়ে চীন আমেরিকার টানাপোড়েনের বিষয়টিকেও ভালো চোখে দেখছে না এই ছোট দ্বীপ রাষ্ট্রটি। আগেভাগেই দেশটা নিজেদের নিরাপত্তা বলয়কে আরও বেশি পাওয়ারফুল করতে চাইছে। ভারত মহাসাগর দিয়ে ঘেরা শ্রীলঙ্কার নিরাপত্তা কৌশল ঠিক করতে এক অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেলের নেতৃত্বে টিম গঠন করেছে শ্রীলঙ্কা। যে টিম রিপোর্ট দেবে শ্রীলঙ্কার জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থাকে।
যদিও, শ্রীলঙ্কার এই নিরপেক্ষ অবস্থান ঘোষণার নেপথ্যে চিনের হাত দেখছেন কেউ কেউ তাঁদের ধারণা, আপাত নিরপেক্ষতার কথা বলে আদতে ভারত মহাসাগরে চীনের একাধিপত্যকেই সুনিশ্চিত করতে চাইছে শ্রীলঙ্কা কারণ, অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক সঙ্কটে ভোগা শ্রীলঙ্কার উপরে চীনের প্রভাবের কথা কে না জানে? টেক্সট ইন দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অনেক দেশের মতো শ্রীলঙ্কাও চীনের ঋণের ফাঁদে আটকে পড়েছেন বলে মনে করছেন আন্তর্জাতিক রাজনীতির পর্যবেক্ষকদের একাংশ। তাহলে কি নিরপেক্ষতার নামে ভেতরে ভেতরে চীনের দিকেই ঝুঁকছে শ্রীলংকা? কিন্তু অর্থনৈতিক ভাবে দেউলিয়া হয়ে যাওয়া শ্রীলঙ্কার পাশে ভারতের দাঁড়ানো? সেসব কী অতীত? না, তেমনভাবে বলতে গেলে অনেকটাই কাছাকাছি এসেছে নয়াদিল্লি এবং কলম্বো। উষ্ণ হয়েছে দুই প্রতিবেশীর সম্পর্ক। কিন্তু ভারত মহাসাগরে চীনের প্রভাব এবং প্রসার কমাতে শ্রীলঙ্কাকে ভারত নিজের অনুকূলে আনতে পারবে কি না, সেটাই এখন দেখার।
সেক্ষেত্রেও বুঝে পা ফেলতে হবে ভারতকে। কারণ ২০২২ এর শেষের দিকেও শ্রীলংকা জানিয়েছিল। ভারত মহাসাগরে কোনো সঙ্ঘাত চায় না তারা। তাই কোনো বড় শক্তির সঙ্গে যোগ দেবে না তারা। কারণ, শ্রীলঙ্কা এই বাণিজ্য রুটকে সংঘাত বা যুদ্ধের মতো এলাকা হতে দিতে চায় না। তারা ভারত মহাসাগরে বড় বিরোধী শক্তিগুলোর মধ্যে বিরোধ দেখতে চায় না। কারণ, এই বিরোধিতা সবার ওপর প্রতিফলিত হতে পারে সেটা তারা জানে বোঝে। এখন ভারত মহাসাগর নিয়ে দড়ি টানাটানিতে শ্রীলংকা কতটা নিউট্রাল পজিশনে থাকতে পারে সেটাই দেখার বিষয়।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম