।। প্রথম কলকাতা ।।
চন্দ্রযান ৩ মিশন সাকসেসফুল। ভারতের স্বপ্নপূরণ, হাতের মুঠোয় চাঁদ। চাঁদের বুকে পালকের মত নামলো ল্যান্ডার বিক্রম। কোন টোটকায়, কোন মন্ত্রে সফল হলো ইসরো? কোটি কোটি টাকা খরচ করে রাশিয়া যা পারলো না, তা করে দেখালো ভারত। ২৩ এর সন্ধ্যায় চাঁদে ইতিহাস গড়লো আমাদের ভারতবর্ষ। ৬ জুলাই থেকে ২৩ অগাস্ট। দেড় মাসের কঠিন লড়াই, প্রযুক্তি আর কনফিডেন্স চাঁদের দেশে আলো নিয়ে নামলো চন্দ্রযান ৩।
ল্যান্ডার বিক্রমের উপরেই ছিল বড় দায়িত্ব। ঝুঁকিহীন জায়গা বুঝে সফট ল্যান্ড করা সহজ কথা ছিল না। তার গতি নিয়ন্ত্রণে কখনও রাফ ব্রেকিং, কখনও কন্ট্রোলড ব্রেকিং করা হয়েছে। মাটি ছোঁয়ার পর সৌরচালিত রোভার প্রজ্ঞানের কাজ শুরু। এই পর্যায়েই সমস্যা হয়েছিল গত বার। এবার তেমন কিছু হবে না বলেই স্থির বিশ্বাস ছিল। চাঁদের মাটির চরিত্র, বিভিন্ন খনিজ পদার্থের উপস্থিতিসংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করবে। পাশাপাশি, যে অঞ্চল দিয়ে প্রজ্ঞান চলাচল করবে সেখানকার চাঁদের জমিতে অশোকস্তম্ভ এবং ইসরোর প্রতীক আঁকা হবে কিন্তু কেন এতো কনফিডেন্ট ছিলেন বিজ্ঞানীরা? চন্দ্রযান ২ এর মতো এক ভুলের রিপিটেশন যাতে না ঘটে, তাই চন্দ্রযান ৩ এর জন্য ৬ টি “সিগমা বাউন্ড” ডিজাইন করা হয়েছিল! ফলে এটা আরও পাওয়ারফুল। তাছাড়া বিক্রম ল্যান্ডার অবতরণের স্থান অনুসন্ধানের জন্য বিপদ সনাক্তকরণে কাজ করতে পেরেছে। ‘বিক্রম’ ল্যান্ডারে দুটি অন-বোর্ড কম্পিউটার রয়েছে।
চন্দ্রযান-২-এ শুধুমাত্র একটি অন-বোর্ড কম্পিউটার ছিল। তাই সফট ল্যান্ডিং এর আগে থেকেই বিজ্ঞানীরা ৯৯.৯% আত্মবিশ্বাসী ছিল। তবে, একটা কথা খুব ইম্পরট্যান্ট প্রজ্ঞান চাঁদের বুকে ‘বেঁচে’ থাকবে ১৪ দিন। ১৪ দিন অবশ্য পৃথিবীর হিসাবে। চাঁদের হিসাবে মাত্র এক দিন। এর পরেই ‘মৃত্যু’ হবে প্রজ্ঞানের। তারপর ধাপে ধাপে কোন পথে এগিয়েছে এই কাজ? চন্দ্রযান-৩ অভিযানের টাইমলাইন টান টান উত্তেজনায় ভরপুর। চলতি বছরের ৬ জুলাই আনুষ্ঠানিক ভাবে চন্দ্রযান-৩ অভিযানের ঘোষণা করে ইসরো।
৭ জুলাই : চন্দ্রযান-৩ মহাকাশযানের বৈদ্যুতিক সরঞ্জামের পরীক্ষা সফল হয়।
১১ জুলাই : পৃথিবী থেকে মহাকাশযান উৎক্ষেপণের আগে, ২৪ ঘণ্টাব্যাপী চলে রিহার্সাল।
১৪ জুলাই : অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীহরিকোটার সতীশ ধওয়ান স্পেস সেন্টার থেকে চন্দ্রযান-৩ মহাকাশযানের সফল উৎক্ষেপণ হয় এবং নির্দিষ্ট কক্ষপথে প্রবেশ করে।
১৫ জুলাই : পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তি ছাড়িয়ে চাঁদের দিকে আরও কয়েক ধাপ এগিয়ে যায়, কক্ষপথ পরিবর্তন করে উপরে ওঠে চন্দ্রযান-৩।
১৭ জুলাই : আবারও কক্ষপথ বদল চন্দ্রযান-৩ মহাকাশযানের, গতি বাড়িয়ে আরও উপরে ওঠে।
২২ জুলাই : ফের গতিবৃদ্ধি এবং কক্ষপথ বদলে করে উঁচুতে পৌঁছায়।
২৫ জুলাই : আবারও গতিবৃদ্ধি এবং সফল ভাবে কক্ষপথ বদল চন্দ্রযান ৩ মহাকাশযানের।
১ অগাস্ট: মহাশূন্যে মাইলফলক গড়ে ভারতের চন্দ্রযান-৩, আরও উপরে উঠে, চাঁদের বহিরাবরণের মধ্য ঢুকতে সক্ষম হয়।
৫ অগাস্ট : আরও উপরে উঠে চাঁদের কক্ষপথে প্রবেশ করে চন্দ্রযান-৩ মহাকাশযান।
৬ অগাস্ট : চাঁদ থেকে ক্রমশ দূরত্ব কমিয়ে আনার প্রক্রিয়া শুরু হয়।
৯ অগাস্ট : আবারও গতি শ্লথ করা হয়।
১৪ অগাস্ট : ডিম্বাকার কক্ষপথ ছেড়ে, বৃত্তাকারে চাঁদকে প্রদক্ষিণ করতে শুরু করে চন্দ্রযান-৩।
১৭ অগাস্ট : প্রোপালসন মডিউল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় ল্যান্ডার ‘বিক্রম’ এবং রোভার ‘প্রজ্ঞান’।
১৮ অগাস্ট : আবারও গতি কম করা হয় বেশ খানিকটা।
২০ অগাস্ট : চাঁদের আরও কাছাকাছি পৌঁছয় চন্দ্রযান-৩।
২১ অগাস্ট : ল্যান্ডার ‘বিক্রমে’র সঙ্গে চন্দ্রযান-২ মহাকাশযানের অরবিটারের সংযোগস্থাপন হয়, ‘বিক্রম’কে স্বাগত জানায় চন্দ্রযান-২।
২৩ অগাস্ট : সন্ধ্যায় চাঁদের বুকে নামে চন্দ্রযান ৩।
তবে এদিন বিকেল থেকেই বাড়ছিল বুক ঢিপঢিপ। চাঁদের নিকষ ‘কালো অন্ধকার পিঠে’ ল্যান্ডার বিক্রমের অবতরণ নিয়ে ইসরোর অন্দরে উত্তেজনার পারদ ছিল চরমে। অধীর আগ্রহে সেই ঐতিহাসিক মুহূর্তের অপেক্ষায় ছিল গোটা দেশ। গোটা বিশ্বের নজর ছিল ভারতের এই মিশনের দিকে। চাঁদের মাটি ছুঁতেই সেই স্বপ্নপূরণ হলো।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম