।। প্রথম কলকাতা ।।
“ডেথ ক্রল” এর মধ্য দিয়ে যায় ভারতের সবচেয়ে ভয়ংকর কমান্ডো। ভোগ করে তীব্র নরক যন্ত্রণা। মার্কোস, গড়ুর, কোবরা, ব্ল্যআক ক্যাট্সের নাম শুনেছেন? কয়েক সেকেন্ডেই করতে পারে তোলপাড়। এই স্পেশাল ফোর্স এর নামে ভয়ে কাঁপে শত্রুরা। পার করে কঠিন প্রশিক্ষণ, হাতে থাকে খতরনাক অস্ত্রশস্ত্র। দ্বিতীয় বর্ষ বিশ্বযুদ্ধের পরেই তলে তলে প্ল্যান সাজিয়েছিল ভারত। সুরক্ষা বলয়ে মুড়ে ফেলছে নিজেকে, কোন পদ্ধতিতে ভারতের ক্ষমতা জাহির করে এই তুখোর যোদ্ধারা? দেশে অনেক সময় এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়, যার জন্য বিশেষ অভিযানে কড়া প্রশিক্ষণের দরকার।
শুধু সেনা সদস্যদের সংখ্যায় নয়, বিশ্বে সামরিক দিক থেকে এগিয়ে থাকা অন্যান্য দেশের মতো ভারতের হাতেও আছে এরকম প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত বিশেষ বাহিনী। স্পেশাল ফোর্স পৃথিবীর অন্যতম সেরা বাহিনীগুলির মধ্যে রয়েছে ভারতের এই সেনাদলগুলো। প্রথমেই বলবো, ভারতের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর, সবচেয়ে বিপজ্জনক বিশেষ বাহিনী মার্কোস বা মেরিন কমান্ডোসের কথা। পাহাড়-মরুভূমি-জঙ্গল, স্থলভাগের যে কোন জায়গায় যুদ্ধের জন্য এই বাহিনী প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। সামুদ্রিক যুদ্ধের ক্ষেত্রে সুপার এক্সপার্ট কঠিনতম শারীরিক পরীক্ষা দিয়ে তবেই এই বাহিনীর অংশ হওয়া যায়। যারা ওই তিনটে দিন পার করতে পারেন, তাঁদের পাঁচ সপ্তাহের একটা লম্বা প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়, যাকে বলা হয় ‘নরকের সপ্তাহ’।
এই সময়ে দীর্ঘ কয়েকদিন না ঘুমিয়ে অনুশীলন করানো হয়। শুয়ে, দাঁড়িয়ে, দৌড়তে দৌড়তে, পিছন ফিরে এবং আয়নায় দেখেও সঠিক নিশানায় গুলি ছুঁড়তে সক্ষম করে তোলা হয় কমান্ডোদের। নিশানা চোখে পড়ার পর গুলি ছুঁড়তে সময় লাগে মাত্র ০.২৭ সেকেন্ড। প্রশিক্ষণের চূড়ান্ত পর্যায়ে কাদামাটির মধ্য দিয়ে, হামাগুড়ি দিয়ে যেতে হয় কমান্ডোদের। যে প্রশিক্ষণের নাম ‘ডেথ ক্রল’। শরীরে বাঁধা থাকে ২৫ কেজি ওজনের বন্দুক ও অন্যান্য সামরিক সরঞ্জাম। ওই অবস্থায় ৮০০ মিটার গিয়ে ২৫ মিটার দূরের এক লক্ষ্যবস্তুতে গুলি করতে হয়। যে লক্ষ্যের ঠিক পাশেই দাঁড়িয়ে থাকেন একজন মানুষ। এই বাহিনীর পোশাকও তৈরি হয় বিশেষভাবে। মাথায় থাকে বুলেটপ্রুফ হেলমেট, গায়ে বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট। ইউনিফর্মটি জলে ভেজে না, আগুনে পোড়ে না। প্রত্যেক কমান্ডোর সঙ্গে থাকে উচ্চপ্রযুক্তির বেতার যোগাযোগ ব্যবস্থা। কম যায়না ঘাতক বাহিনীও! এই বাহিনী শত্রু শিবিরে অতর্কিতে হামলা চালানোর পাশাপাশি সেনাবাহিনীর বাকি সদস্যরা এসে পৌঁছনোর আগে সরাসরি ম্যান-টু-ম্যান আক্রমণ চালায়। তারা শত্রুপক্ষের কামানের অবস্থানে, এয়ারফিল্ডে, সরবরাহ ক্ষেত্রে এবং কৌশলগত সদর দফতরে অভিযান চালাতে পারদর্শী! শত্রু পক্ষের কবলে থাকা এলাকার অনেক গভীরে গিয়ে লক্ষ্যবস্তুতে তোপ দাগতে এবং বিমান হামলা চালানোর বিষয়ে বিশেষজ্ঞও। শারীরিক ও মানসিকভাবে সবচেয়ে সুস্থ সৈন্যদের পক্ষেই ঘাতক বাহিনীর সদস্য হওয়া সম্ভব। সাধারণত ২০ জন সেনা নিয়ে তৈরি হয় এই বাহিনী। হেলিকপ্টারের মাধ্যমে হামলা, পর্বতারোহন, পর্বতে যুদ্ধ, শত্রুঘাঁটি ধ্বংস করা, উন্নত মানের অস্ত্রচালনা, ছোট এলাকার মধ্যে যুদ্ধ এবং পদাতিক বাহিনীর সবরকম কৌশলের প্রশিক্ষণ নিতে হয় এই বাহিনীর সদস্যদের।
পাকিস্তানের সাথে একাত্তরের যুদ্ধ, ১৯৯৯ সালের কারগিল যুদ্ধ, ১৯৮৪ র কুখ্যাত ‘অপারেশন ব্লুস্টার’ মানেই প্যারা কমান্ডো। ভারতীয় সেনাবাহিনীর অন্যতম উচ্চ প্রশিক্ষিত বিশেষ বাহিনী শারীরিকভাবে সবচেয়ে সুস্থ, মানসিকভাবে সবচেয়ে মজবুত, প্রখর বুদ্ধিমান এবং উদ্দিপনায় ভরপুর সেনা সদস্যরাই এই বাহিনীর সদস্য হতে পারেন। প্যারা কমান্ডোদের বিশ্বের সবচেয়ে কঠিনতম কমান্ডো প্রশিক্ষণ ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে যেতে হয়! দৈনিক বন্দুক ও সাজসরঞ্জামের বোঝা নিয়ে ২০ কিলোমিটার দৌড়তে হয়! প্রতিদিনই চলে সরাসরি যুদ্ধের অনুশীলন। প্রশিক্ষণের এক পর্যায়ে তাদের প্রায় ৩৩,৫০০ ফুট উচ্চতা থেকে প্যারাসুট না খুলে ঝাঁপ মারতে হয়।ভূতলে যেকোনও পরিবেশে যুদ্ধের বিষয়ে এবং গভীর সমুদ্র ডাইভ দেওয়ার বিষয়েও উচ্চ প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় তাদের। ভারতীয় বায়ুসেনার আরেকটি বিশেষ বাহিনী গরুড় কমান্ডো ফোর্স। এই বাহিনীর হাতে ২০০০-এরও বেশি কমান্ডো রয়েছে। কোনও এয়ারফিল্ড দখল করা বা পুনরুদ্ধার করা, আকাশপথে যে কোনও অভিযান, হানা, য়ুদ্ধের সময় বিশেষ অনুসন্ধান ও উদ্ধার অভিযান, বিদ্রোহ মোকাবিলায় তুখোড় এই বাহিনী। এছাড়াও গরুড় কমান্ডোরা হাইজ্যাকিং-এর মতো পরিস্থিতির মোকাবিলায় দক্ষ। জঙ্গল এবং তুষারাবৃত এলাকায় দীর্ঘদিন টিকে থাকার কৌশল জানা তারা। বিশেষ বিশেষ অস্ত্রচালনার প্রশিক্ষণও পান গড়ুর-রা! একইসঙ্গে ড্রাইভিং-এও প্রত্যেকে অত্যন্ত পারদর্শী হন।
গরুড় বাহিনীর সদস্য হওয়া মুখের কথা নয়। পুরোদস্তুর গরুড় সদস্য হয়ে উঠতে ৩ বছর পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। ন্যাশনাল সিকিওরিটি গার্ড মানে ব্ল্যাক ক্যাটস! নাম শুনেছেন? ১৯৮৬ সালে তৈরি হয়েছিল এই বিশেষ বাহিনী। বাহিনীটি তৈরি করা হয় ভারতীয় সেনা এবং সশস্ত্র পুলিশ বাহিনীর কমান্ডোদের মিশ্রণে। পুলিশ বিভাগের একজন ডিজি এই বাহিনীর নেতৃত্ব দেন। ব্ল্যাক ক্যাটসদের দুটো ইউনিট রয়েছে – স্পেশাল অ্যাকশন গ্রুপ বা এসএজি এবং স্পেশাল রেঞ্জার গ্রুপ বা এসআরজি।এসএজি তৈরি হয় পুরোপুরি সেনা সদস্যদের নিয়ে, আর সন্ত্রাসবাদ বিরোধী কার্যকলাপের মোকাবিলার জন্য কাজে লাগানো হয় পুলিশ ও সেনার সমন্বয়ে গঠিত এসআরজি-কে। এনএসজি সদস্যদের হাতে থাকে বিশ্বের সর্বাধিক উন্নত অস্ত্রশস্ত্র। তবে বাছাই প্রক্রিয়াটি এতটাই কড়া যে ৭০ থেকে ৮০ শতাংশই হাল ছেড়ে দেন। যারা সেই পর্ব পার করতে পারেন, তাদের আরও ৯ মাসের জন্য ফ্যান্টম এনএসজি কমান্ডো হওয়ার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এছাড়াও তালিকায় রয়েছে কমান্ডো ব্যাটালিয়ন ফর রেজোলিউট অ্যাকশন বা কোবরা, স্পেশাল ফ্রন্টিয়ার ফোর্স, মহারাষ্ট্র পুলিশ ফোর্স ওয়ান। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরপরই বিশ্বের প্রায় সবকটি শক্তিশালী দেশই যখন উচ্চ প্রশিক্ষিত সেনা সদস্যের প্রয়োজন বোধ করেছিল, ঠিক তখনই ভারত নিজেকে তৈরি করেছে কঠিনভাবে মনে রাখবেন দেশের সেনাবাহিনীর স্পেশাল ফোর্স হলো অন্যতম শক্তি। যে শক্তির মুখোমুখি হতে ভয় পায় ভারতের চরম শত্রুরাও।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম