।। প্রথম কলকাতা ।।
Laddu Gopal Bhog: গোপাল শুধু ঈশ্বর রূপে নন, ঘরে ঘরে সন্তান স্নেহেও পূজিত হন। ভক্তরা মনে করেন গোপাল হলেন ঘরের ছেলে। যেমন ভাবে নিজের ছেলেকে মানুষ করা হয় তেমন ভাবেই গোপালের যত্নে কোন খামতি থাকে না। তবে লাড্ডু গোলাপকে ভোগ নিবেদনের ক্ষেত্রে সামান্য কিছু নিয়ম মানতে হয়। দিনের বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রকম ভোগ দেওয়ার রেওয়াজ রয়েছে।
•সকালে ঘুম থেকে উঠার সাথে সাথে গোপালকে প্রথম ভোগ নিবেদন করুন। সকালে ঘুম থেকে ওঠা মানেই ব্রহ্ম মুহুর্ত নয়। আপনি সকাল ৬ থেকে ৭টার মধ্যে ঘুম থেকে উঠে স্নান না করে গোপালকে প্রথম ভোগ দিতে পারেন। সকালের ভোগে দুধ রাখতে পারেন। দুধ নিবেদনের আগে ঘণ্টা বাজিয়ে লাড্ডু গোপালকে প্রথমে ঘুম থেকে তুলবেন। তারপর চামচ দিয়ে দুধ খাওয়াবেন। আপনি লাড্ডু গোপালের কাছে এক গ্লাস দুধ ১০ মিনিটের জন্য রেখে দিতে পারেন।
•স্নান করিয়ে লাড্ডু গোপালকে দ্বিতীয় ভোগ নিবেদন করবেন। এক্ষেত্রে আপনাকে আগে স্নান করতে হবে। লাড্ডু গোপালকে স্নান করার পর অবশ্যই তাকে ভোগ হিসেবে দই নিবেদন করুন। দই, মাখন, মিছরি ও লাড্ডু গোপালের খুব প্রিয়। লাড্ডু গোপালকে নিয়মিত দই প্রসাদ নিবেদন করতে ভুলবেন না, তবে এর সাথে বিভিন্ন ফলের প্রসাদও নিবেদন করতে পারেন।
•আপনি যদি চান, আপনি এক সপ্তাহের জন্য লাড্ডু তৈরি করতে পারেন এবং তারপর গোপালকে প্রতিদিন একটি লাড্ডু দিতে পারেন। মনে রাখবেন, শুধুমাত্র ঘরে তৈরি মাখন লাড্ডু গোপালকে নিবেদন করা উচিত।
•বিকালে আপনার বাড়িতে যা তৈরি করা হয় তাই গোপালকে দিতে পারেন। খাবারে শুধু পিয়াঁজ এবং রসুন রাখবেন না। আপনি যদি পিয়াঁজ এবং রসুন খান তবে গোপালের জন্য আলাদা ভোগ তৈরি করুন
•সন্ধ্যায় গোপালকে পাপড়-চিপস বা মাখন নিবেদন করুন। সেই সঙ্গে রাতে আপনি যে খাবারই খান না কেন, গোপালকে লাড্ডু নিবেদন করতে হবে। গোপালকে রাতে ঘুমানোর আগে দুধ নিবেদন করলে ভালো।
•গোপালকে খাবার দেওয়ার জন্য রূপোর থালা ব্যবহার করার দরকার নেই। আপনি চাইলে স্টিলের বাসনও ব্যবহার করতে পারেন। তবে মনে রাখবেন, গোপালের বাসনগুলি প্রতিদিন পরিষ্কার করা উচিত এবং অন্য কোনও কাজে ব্যবহার করা উচিত নয়।
•যখনই আপনি গোপালকে খাবার দেবেন, অবশ্যই তাতে তুলসী দিন।
•আপনি গোপালকে যে ভোগই অর্পন করুন না কেন, তা অন্তত পাঁচ মিনিটের জন্য রেখে দেবেন। শাস্ত্রে লেখা আছে যে কোন দেবতাকে খাবার দিতে দেখা যাবে না এবং এই সময় ঘণ্টা বাজাতে হবে।
গোপালের প্রিয় খাবার
শ্রীকৃষ্ণকে বা গোপালকে সন্তুষ্ট করতে চান ? হিন্দু পুরাণ অনুযায়ী, শ্রীকৃষ্ণ ছিলেন ভোজনবিলাসী। প্রতিদিন যশোদা মাকে আট রকমের পদ করে খাওয়াতে হত শ্রীকৃষ্ণকে। ৫৬ ভোগের মধ্যে গোপালের প্রিয় খাবারগুলি জেনে নিন।
১. নাড়ু
ছোট্ট শ্রীকৃষ্ণকে ভালোবেসে অনেকে ডাকেন নাড়ুগোপাল বলে। তাই তাঁর প্রিয় খাদ্যতালিকায় অবশ্যই প্রসাদ হিসেবে স্থান করে নেবে নাড়ু। বিভিন্ন জিনিস দিয়ে নাড়ু বানানো গেলেও, নারকেলের নাড়ু সবথেকে বেশি উপাদেয়।
২. তালের বড়া
শ্রীকৃষ্ণ যখন জন্মগ্রহণ করেছিলেন তখন ছিল তাল পাকার সময়। বর্তমানে গ্রামাঞ্চলের দিকে ভাদ্র মাস এলেই গৃহস্থের ঘরে তালের বড়া বানানোর রেওয়াজ রয়েছে। অনেকে তালের বড়া বানিয়ে সবার প্রথমে নিবেদন করেন শ্রীকৃষ্ণকে তারপর পরিবারের সবাই খান। তালের বড়া গোপালের অত্যন্ত প্রিয়।
৩. মালাই ও রাবড়ি
গোপালের প্রিয় খাদ্য তালিকার মধ্যে রয়েছেন মালাই এবং রাবড়ি। অনেকে মনে করেন ,মূলত খাঁটি দুধ দিয়ে এগুলি তৈরি হওয়ার কারণে এগুলি তিনি খেতে ভালোবাসেন।
৪. মোহনভোগ
সুজির হালুয়া ঘিয়ে ভেজে তৈরি করা হয় মোহনভোগ। গোপালের এই পছন্দের খাবারটির সাথে আপনি ইচ্ছা করলে রাখতে পারেন ঘিয়ে ভাজা লুচি।
৫. মালপোয়া
জন্মাষ্টমীর প্রসাদ গুলির মধ্যে অন্যতম একটি হলো মালপোয়া। নাড়ুগোপাল মালপোয়া খুবই পছন্দ করেন।
৬.ক্ষীর
ননীর মতো ক্ষীর গোপালের খুবই পছন্দের। ক্ষীরের পায়েস তাই আপনি চাইলেই রাখতে পারেন ভোগের ডালায়।
৭. শ্রীখন্ড
পশ্চিমবঙ্গে এই খাবারটির বিশেষ চল না থাকলেও ভারতবর্ষের অন্যান্য রাজ্যে জন্মাষ্টমীর দিন ভোগে শ্রীখন্ড অনিবার্য। গোপালের প্রিয় এই সুস্বাদু খাবারটি তৈরি করা হয় দই দিয়ে।
৮. গোপালকলা
গোপালকলা হল গোপালের পছন্দের বিশেষ এক ধরনের ভোগ। এটি তৈরি করা হয় মিষ্টি এবং ফলের সাথে কোরা নারকেল মিশিয়ে।
৯. মাখন মিছরি
গরুর খাঁটি দুধের সঙ্গে মিছরি ও মাখন মিশিয়ে তৈরি করা হয় শ্রীকৃষ্ণের প্রিয় খাবার মাখন মিছরি। জন্মাষ্টমীর দিন শ্রীকৃষ্ণের মুখে মাখন তুলে দেওয়া চাই। ছোট্ট গোপাল গোকুলে গোপী গৃহে চুরি করতেন ননী। যদি বাড়িতে মাখন তৈরি করতে না পারেন তাহলে ছানা ও চিনি একসাথে মিশিয়ে ভোগ তৈরি করতে পারেন।
তবে যদি আপনি ভক্তি ও শ্রদ্ধা ভরে অতি সামান্য কোন খাবার দেন তাহলে ভগবান তাই গ্রহণ করেন। তাই গোপালের ভোগের আয়োজন করুন নিজের সামর্থ্য অনুসারে কিন্তু তাতে যেন নিষ্ঠার কোন খামতি না পরে।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম