।। প্রথম কলকাতা ।।
Success Story: সারাদিন মাথার ঘাম পায়ে ফেলে জমিতে মজুরের কাজ। মাথায় সংসারের দায়িত্ব। তারপরেও রসায়নে পিএইচডি। ভাবতে পারছেন? ঠিক কতটা পরিশ্রম করলে, একজন স্ত্রী কিংবা একজন মায়ের পক্ষে এতটা করা সম্ভব? ভারতের এই মেয়ের জীবন যুদ্ধ আমাদের অনুপ্রেরণা। জীবনে হেরে যাওয়ার গল্পকে জিতিয়ে দিয়েছেন সাকে ভারতী।
বিয়ের পর সংসারের জাঁতাকল মানেই কিন্তু সবকিছু শেষ হয়ে যাওয়া নয়। অন্ধ্রপ্রদেশের অনন্তপুরের নাগুলাগুরুম গ্রামের বাসিন্দা সাকে ভারতী। বড় হয়েছেন অত্যন্ত অভাবের সঙ্গে। যে বয়সে পড়াশোনা করার কথা, সেই বয়সে পায়ে পড়েছিল বিয়ের শিকল। দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনার পর যখন বিয়ে হয়ে যায়, তখন ভাবেননি পড়াশোনা বন্ধ করে দেবেন।
কাঁধে এসে পড়ে এক বোঝা সংসারের দায়িত্ব। কিন্তু মন থেকে দমে যাননি। বাঁচিয়ে রেখেছিলেন পড়াশোনার স্বপ্ন। চাষের জমিতে শ্রমিক হিসেবে কাজ করেছেন। সাথে ছিল সংসারের একগাদা কাজ, আর ছোট্ট শিশুর দায়িত্ব। এসবের মাঝে কলেজে গিয়েছেন, মাস্টার্স কমপ্লিট করেছেন। অনন্তপুর এসএসবিএন ডিগ্রি ও পিজি কলেজে রসায়নে পড়াশোনা করেছেন। পিএইচডি করেছেন শ্রীকৃষ্ণ দেবরাজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। তবে হ্যাঁ, পাশে পেয়েছিলেন স্বামীকে। সংসারে অভাব থাকলেও স্ত্রীয়ের পড়াশোনার কোন গাফিলতি হতে দেননি। ভারতীর স্বামীও ভূমিহীন কৃষি মজুর।
অথচ তার তার স্বপ্ন পূরণের সাধ্য সংসারের ছিল না। শ্বশুরবাড়িতেও নুন আনতে পান্তা ফুরোয় অবস্থা। তাই নিজেই পড়াশোনার খরচের জন্য চাষের মাঠে শ্রমিকের কাজ করতেন। কিন্তু ভুলে যাননি, তিনি একজন স্ত্রী এবং একজন মা। সেই দায়িত্ব পালনেও কোন ফাঁক রাখেননি। রোজ কাক ভোরে ঘুম থেকে উঠে বাড়ির সব কাজ সেরে নিতেন। বাড়ি থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার গেলে তবেই মিলত কলেজ যাওয়ার বাস। পথশ্রম ছিল তার নিত্য সঙ্গী। মাইলের পর মাইল হেঁটেছেন। তার হার না মানে পরিশ্রম দেখে এগিয়ে এসেছিলেন শিক্ষকরা। অনেকেই সহযোগিতা করতেন। কষ্টটাকে কষ্ট বলে মনেই করেননি ভারতী। পিএইচডির শংসাপত্র হাতে পেতেই সব কষ্ট যেন খুশি হয়ে ঝরে পড়েছে।
ভারতীর এই জয় সংকল্পের জয়। মনের জোর আর কঠোর পরিশ্রম করলে কেউ হারাতে পারে না। তখন অসংখ্য চ্যালেঞ্জও জল ভাতের মতো। সাকে ভারতী নিজের জীবনের সীমিত সুযোগকেই কাজে লাগিয়েছেন। ভারতীর স্বপ্ন, তিনি ভবিষ্যতে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হবেন। তার মতে, শিক্ষাই সমাজকে এগিয়ে নিয়ে যায়। তা।উপলব্ধি করেছিলেন বহু আগেই। তাই তো শত চ্যালেঞ্জ থাকা সত্ত্বেও উচ্চ শিক্ষা অর্জনকেই জীবনের মূল ব্রতী করেছেন। এমনটা কজন পারে বলুন তো?
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম