।। প্রথম কলকাতা ।।
এবার ন্যাটোর টার্গেটে এশিয়া প্যাসিফিক? ঘুরপথে চীনের সঙ্গে কোন খেলায় জড়াচ্ছে ন্যাটো? কোন লাভের আশায় এশিয়া প্যাসিফিকে ন্যাটোর আধিপত্য বিস্তারের স্বপ্ন? শুধু ন্যাটো নয়, পৃথিবীর জন্য রিস্ক ফ্যাক্টর চীন। চীনকে ঘিরে বড় আশঙ্কা দানা বাঁধছে। শত্রুদেশের সঙ্গে ন্যাটোর দহরম মহরম কে কোন চোখে দেখছে বেইজিং? ন্যাটোর নজরে সায় যুক্তরাষ্ট্রের। কিন্তু ইউরোপ কেন মত দিচ্ছে না? ইউরোপের আধিপত্য মজবুত করে এবার ন্যাটোর চোখ এশিয়া প্যাসিফিকে। এই অঞ্চলের দেশ জাপান, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে ন্যাটো সম্পর্ক পোক্ত করছে, কিন্তু কেন?
অধিকাংশ পর্যবেক্ষক মনে করছেন এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে আমেরিকা ও ন্যাটোর নজরের প্রধান কারণ এখন চীন গত বছরের ন্যাটো শীর্ষ বৈঠকে মহাসচিব স্পষ্ট ইঙ্গিত দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন যে চীন দিনে দিনে কিভাবে ন্যাটোর জন্যেও রিস্ক ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়াচ্ছে। তাছাড়ারা শিয়ার সঙ্গে চীনের ঘনিষ্ঠতা যেভাবে বাড়ছে তাতে ন্যাটো জোটের অনেকেই এখন মনে করছে চীন, ইউরোপীয় নিরাপত্তায় যথেষ্ট প্রাসঙ্গিক হয়ে পড়েছে। আবার কারও কারও মতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান মনোযোগ এখন ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের দিকে, ফলে ন্যাটোর প্রায়োরিটিতে সেই এফেক্টই কাজ করবে, এটাই স্বাভাবিক, কিন্তু, চীনের প্রতি ন্যাটোর নজর নিয়ে ইউরোপের মাথা ব্যাথা কেন? জানা যাচ্ছে, টোকিওতে ন্যাটোর লিয়াজো কার্যালয় খোলা হোক এমনটাই চাইছে জাপান। কিন্তু এই ভাবনার বিরোধিতা এসেছে ন্যাটোর ভেতর থেকেই। আপত্তি তুলেছে ফ্রান্স। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট বলেছেন নর্থ আটলান্টিক ট্রিটি অর্গানাইজেশন বা ন্যাটোর মূল লক্ষ্য উত্তর আটলান্টিক অঞ্চলকে নিয়েই থাকা উচিত। এমনকি ইউরোপের অধিকাংশ দেশ তাইওয়ান ইস্যুর মত ইউরোপ যুক্তরাষ্ট্র বহির্ভূত ইস্যুতে জড়াতে আগ্রহী নয়।
মোদ্দা কথা ন্যাটোর সদস্য ফ্রান্স চাইছে না যে উত্তর আটলান্টিকের বাইরে ন্যাটোর খবরদারি বাড়ুক। সম্প্রতি ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট বলেছেন যে লড়াই ইউরোপের নয় ষ সেই লড়াইয়ে ইউরোপ জড়াবে না। যে কথাটা ছিল তাইওয়ান ইস্যুকে ইঙ্গিত করে। এদিকে জাপানে ন্যাটোর অফিস খুলতে হলে জোটটির সকল সদস্যের অনুমোদন প্রয়োজন। তাই মার্কিন প্রেসিডেন্ট এবং বাকি ন্যাটোর সদস্যদের পক্ষে টানতে তৎপরতা চালানো হচ্ছে। কারণ, ন্যাটো মহাসচিব নিজেই তো বলেছেন, এশিয়া প্যাসিফিকে সহযোগিতা বাড়ালে ন্যাটো লাভবান হবে যেমন, সাইবার সিকিউরিটি তে পৃথিবীকে নিরাপত্তা দিচ্ছে দক্ষিণ কোরিয়া, সেক্ষেত্রে দেশটির সঙ্গে বন্ধুত্ব বাড়ালে ন্যাটো জোটের দেশগুলোর সাইবার নিরাপত্তা আরও জোরদার করা যাবে। সেক্ষেত্রে ইউরোপ রাজি হলেই হয়। তাহলে ফ্রান্স কী চাইছে?
তাইওয়ানের পক্ষে ন্যাটোর থাকা উচিৎ বলে মনে করছে ফ্রান্স। কিন্তু এরজন্য সেখানেই ন্যটোর বিস্তৃতি ঘটালে পরবর্তীতে চীনের আক্রোশ আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে, আর সেটা মোকাবেলা সহজ হবে কী? ফ্রান্সের আশঙ্কা, চীনকে ফাঁদে ফেললে দেশটি যদি রাশিয়ার সামরিক মিত্র হয়ে যায় তাহলে চলমান ইউক্রেন যুদ্ধে বিপদ হবে। যা ইউরোপ সামাল দিতে পারবেনা। তাই শুধু চীনকে ঠেকাতে এশিয়া প্যাসিফিকে ন্যাটোকে নিয়ে যেতে চাইছে না ইউরোপ। ন্যাটোর নজরকে ভালো চোখে দেখছে না চীনও। শত্রুদেশ জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে ন্যাটো সামরিক জোটের এই দহরম মহরমে প্রচণ্ড ক্ষিপ্ত চীন। তারা মনে করছে তাদের কোণঠাসা করতে আমেরিকা ন্যাটো জোটকে এশিয়ায় সম্প্রসারিত করার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। এরপরেও ন্যাটো যদি এশিয়া প্যাসিফিকে আধিপত্য বিস্তার করে তাহলে পরিণতি কী হতে পারে? বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে এশিয়ার তাদের বৈরি ভাবাপন্ন দেশগুলোর সঙ্গে ন্যাটো জোটের সহযোগিতা চুক্তি চীনের ওপর গভীর প্রভাব ফেলবে। এশিয়ায় অস্ত্র প্রতিযোগিতা বাড়বে, ভূ-রাজনৈতিক “ফল্ট লাইন” বা ফাটল আরও চওড়া হবে পরিণতি হবে মারাত্মক।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম