।। প্রথম কলকাতা।।
Bangladesh: মূল্যস্ফীতির নাগপাশে বাংলাদেশ। নাভিশ্বাস উঠছে সাধারণ মানুষের। এমন হাল কেন? গোটা বিশ্ব মূল্যস্ফীতি থেকে রেহাই পেলেও, মুক্তি মিলছে না বাংলাদেশের। বাড়ছে পণ্য আর ডলারের দাম। তার উপর ভারত চাল রপ্তানি বন্ধ করেছে। নতুন বিপদে দেশটা। বাংলাদেশের মূল্যস্ফীতিতে কোনভাবে কি ভারতের হাত রয়েছে? ভারতের বাজারে আকাল দেখা দিলে তার প্রভাব পড়ে বাংলাদেশের বাজারে। কিন্তু কেন?
গত এক বছরের হিসেবে, বিশ্ব জুড়ে মূল্যস্ফীতি কমেছে, কিন্তু বেড়েই চলেছে বাংলাদেশে। এক্কেবারে উল্টো। কোনোভাবেই লাগাম টানা যাচ্ছে না। অর্থনৈতিক ভাবে একসময় বিপর্যয় দেখেছিল শ্রীলঙ্কা, সেখানেও আজ মূল্যস্ফীতি তুলনামূলক কম। কিন্তু বাংলাদেশ পারেনি। গত অর্থবছরে ভোগান্তির শেষ ছিল না। গড় মূল্যস্ফীতির লক্ষ্য ৫.৬ শতাংশ থাকলেও, বছরের শেষে তা দাঁড়ায় ৯.০২ শতাংশে। মূল্যস্ফীতির এত চাপ দেশটাতে আগে দেখা যায়নি। যা ছিল এক যুগের মধ্যে সর্বোচ্চ।
অপরদিকে ভারতে গত পাঁচ মাসে মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশ থেকে ৪ শতাংশ নেমেছে। যুক্তরাজ্যে গত সাত মাসে মূল্যস্ফীতি ১১.১ শতাংশ থেকে নেমেছে ৮.৭ শতাংশে। যুক্তরাষ্ট্রে গত পাঁচ মাসে ৬.৭ শতাংশ থেকে কমে দাঁড়িয়েছে ৪.৫ শতাংশে। বাংলাদেশের এই অস্থিতিশীলতার জন্য অনেকেই, রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধ, বিশ্ব বাজারে মূল্য বৃদ্ধি, আমদানি খরচ বৃদ্ধি, জ্বালানির দাম বেড়ে যাওয়ার মতো কারণ গুলোকে দায়ী করে। কিন্তু এই সমস্ত সমস্যা অন্যান্য দেশেও রয়েছে। তারা সামাল দিতে পারলেও, বাংলাদেশ কেন পারছে না? গত কয়েক দশকে বাংলাদেশের খাদ্যশস্য উৎপাদন অনেকটা বেড়েছে, কিন্তু তাও দেশটার আমদানি কমেনি। উল্টে বেড়েছে। বাংলাদেশ অধিকাংশ খাদ্যশস্য আমদানি করে ভারত থেকে। খাদ্য নিরাপত্তা কিছুটা হলেও নির্ভর করে ভারতের উপর। ভারতের বাজারে সামান্যতম অস্থিরতা বাংলাদেশের চালের বাজারকে ব্যাপক অস্থিতিশীল করে তোলে। পেঁয়াজ টমেটো কাঁচা লঙ্কার ক্ষেত্রেও একই অবস্থা। সম্প্রতি ভারত চাল রপ্তানি বন্ধ করায় বাড়তি চাপে রয়েছে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ ভারত থেকে চালের পাশাপাশি গম, সয়াবিন তেল, সহ অনেকগুলো জিনিস আমদানি করে। এগুলোর দাম বাড়লে ডলার বাজারে সংকট আরো প্রকট হবে। আরো বাড়বে মূল্যস্ফীতি। অপরদিকে আবার রাশিয়া ইউক্রেনের শস্য চুক্তি বাতিল হওয়ায় নতুন অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। ইউক্রেনের গমের অন্যতম ক্রেতা বাংলাদেশ। যদিও এই মুহূর্তে সংকট হবে না, পর্যাপ্ত খাদ্য মজুত রয়েছে। ইউক্রেন থেকে খাদ্য আমদানি সম্ভব না হলে বিকল্প উৎস হিসেবে অন্যান্য দেশ থেকে আমদানি করতে হবে। কিন্তু সেই বিকল্প দেশ কে? ভারত নয় তো? বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বর্তমানে বাংলাদেশের মূল্যস্ফীতির হার নিয়ন্ত্রণ করা বড্ড কঠিন। এসবের নেপথ্যে আবার ইন্ধন দিচ্ছে জ্বালানি, গ্যাস, বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি। পরিবহন খরচ বাড়ছে, পণ্যেরও দাম বাড়ছে।
এই মুহূর্তে দেশটার খাদ্য নিরাপত্তা জোরদার করতে অভ্যন্তরীণ খাদ্য উৎপাদন বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। বাজারে টাকার প্রবাহ আর কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের টাকার যোগান বৃদ্ধিও খুব দরকার। সাম্প্রতিক সময়, দেশটাতে সেভাবে টাকার প্রবাহ বাড়েনি। অথচ বিশ্ববাজারে পণ্যের হাহাকার থাকলেও দেশটার অভ্যন্তরীণ বাজারে চাহিদা বেড়েছে। আমদানি পণ্যের দামে এই মুহূর্তে রাশ টানা না গেলে পরিস্থিতি আরো খারাপ হবে আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম