।। প্রথম কলকাতা ।।
India-Russia Relationship: বন্ধু আর বন্ধু নেই! রাশিয়ার গলায় অন্য সুর। নেপথ্যে কালপ্রিট তেলের দাম। ভারতকে আর কোন ছাড় দেবে না পুতিন। তেতে উঠবে ভারতের তেলের বাজার। রুপিতে নয়, মস্কো চাইছে ভারত চীনা মুদ্রা ইউয়ানে বাণিজ্য করুক। এমন আবদার কেন? সুযোগ বুঝে নিজের আখের গোছাচ্ছে চীনও। তাহলে কি রাশিয়ার উপর ভরসা করে ভুল করল ভারত?
ইউক্রেনের সাথে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর ইউরোপ সহ আমেরিকা রাশিয়ার উপর চাপিয়ে দেয় একাধিক নিষেধাজ্ঞা। সেই মুহূর্তে রাশিয়া পিঠ বাঁচাতে টার্গেট করেছিল ভারতকে। সেদিন যদি রাশিয়া থেকে ভারত তেল না নিত, তাহলে তেলের ব্যবসায় চরম বিপর্যয় দেখত মস্কো। যুদ্ধের আগে রাশিয়া থেকে ভারতের মোট কেনা তেলের পরিমাণ ছিল মাত্র ২%। যুদ্ধের শুরু হওয়ার পর তা এক লাফে বেড়ে দাঁড়ায় ৪৪ শতাংশে , যা ছাপিয়ে যায় চীনকেও। কিন্তু এখন চাকা ঘুরছে উল্টোদিকে। হঠাৎ রাশিয়া বলছে ভারতকে আর থেকে ছাড় দেবে না। গতবছরের শেষের দিকে ব্যারেল প্রতি ৩০ ডলার অর্থাৎ প্রায় ২৪৭১ টাকা ছাড় পাচ্ছিল ভারত, কিন্তু তা কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৪ ডলারের অর্থাৎ ৩২৯ টাকায়। এখানে মূলত কাজ করছে দুটো কারণ। ভারতের বহু বেসরকারি সংস্থা রাশিয়া থেকে তেল কেনে, কিন্তু একজোট হয়ে নয়। নিজেদের মতো করে ছাড় নিয়ে রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনা করে, চুক্তিও করে। দ্বিতীয়ত, যুদ্ধের নিষেধাজ্ঞা রাশিয়া সামলে উঠেছে, দেশটার তেলের চাহিদাও বাড়ছে। তাই নিজেদের লাভ রাখতে ভারতকে আর বাড়তি ছাড় দিতে চাইছে না। রাশিয়া এখন শুধু নিজের লাভ দেখতেই ব্যস্ত।
বিষয়টা শুধু তেলে ছাড় দেওয়াতেই থেমে নেই। ভারত আর রাশিয়া ঠিক করেছিল রুপিতে বাণিজ্য করবে, কিন্তু সেখানেও ভাঁটা পড়েছে। রাশিয়া রুপিতে বাণিজ্য করতে চাইছে না। উপরন্তু ভারতের বহু কোম্পানি রাশিয়া থেকে তেল কিনছে চীনের মুদ্রা ইউয়ান দিয়ে। শোনা যাচ্ছে, রাশিয়ার কাছে প্রায় ৪০ বিলিয়ন ডলারের সমপরিমাণ ইন্ডিয়ান রুপি জমা পড়ে আছে। যা ব্যবসার কাজে ব্যবহার করতে পারছে না। তাই দেশটা বাণিজ্য করবে ডলার, ইউয়ান আর ইউরোতে। রুপিতে নয়। কিন্তু কেন? আসলে ভারত যে পরিমাণ রাশিয়া থেকে আমদানি করে সেই পরিমাণ রপ্তানি করে না। ভারত প্রায় ৪০ বিলিয়ন ডলারের ক্রুড অয়েল আমদানি করে। কিন্তু রপ্তানি করে ৩ বিলিয়ন ডলারের পণ্য।
প্রশ্নটা এখানেই। ভারতের সঙ্গে রাশিয়ার আমদানি রপ্তানির ক্ষেত্রে ইউয়ান কিভাবে জড়িয়ে? আসলে যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগে চীন আর রাশিয়ার মধ্যে ব্যবসায়িক লেনদেন ৪ শতাংশ ছিল। এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৩ শতাংশে। রাশিয়ার বেশিরভাগ বাণিজ্য এখন চীনের সাথে। তার উপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে ডলার নিয়ে একটু চাপেও রয়েছে। তাই ভরসা রাখছে ইউয়ানের উপর। আর এই সুযোগে নিজেদের মুদ্রাকে উচ্চ স্তরে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে চীন।
এমত পরিস্থিতি ভারতের জন্য একটু অস্বস্তিকর হলেও চাপের নয়। কারণ ২০১৭-১৮ সাল থেকে ভারত সবচেয়ে বেশি পরিমাণ অপরিশোধিত তেল কিনত ইরাক থেকে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ সেই সমীকরণ আমূল বদলে দিয়েছে ঠিকই কিন্তু এখনো ভারত সৌদি আরব ইরাক আমেরিকা থেকে তেল কেনে। হয়ত আমদানি খরচ একটু বেশি পড়বে কিন্তু অর্থনীতি বিপর্যয়ের বড়সড় কারণ হবে না। ভারতের সঙ্গে রাশিয়ার বাণিজ্যিক টানাপোড়েন দেখা দিলেও, বন্ধুত্বে কিন্তু ফাটল ধরেনি।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম