।। প্রথম কলকাতা ।।
Narayan Debnath: তাঁর কারণে ছোটবেলায় অনেক মজার স্মৃতি রয়েছে। ৩৬ ইঞ্চি ছাতির সুপারহিরো বাঁটুল আর নন্টে-ফন্টের দুষ্টুমির সঙ্গে বাঙালিকে পরিচয় করান তিনিই। তাঁদের নিয়েই সারা জীবন কাজ করে গিয়েছেন নারায়ণ দেবনাথ। সাদা কাগজের উপর কালো কালিতে সকলের ছোটবেলাটাকে এক কথায় এঁকেছেন এই মহান শিল্পী। আজও বাঙালির হৃদয় মজে ‘বাঁটুল দি গ্রেট’, ‘নন্টে ফন্টে’তে। আজ, ২৫ নভেম্বর এই বিখ্যাত ভারতীয় বাঙালি কমিকস শিল্পীর জন্মদিন।
তাঁর লেখা ও আঁকা কমিকস ৮ থেকে ৮০ সকলকে মাতিয়ে রেখেছে। ‘শুকতারা’, ‘কিশোর ভারতী’ প্রভৃতি কলকাতা ভিত্তিক পত্রিকায় তাঁর কমিকসগুলিকে ছোট ছোট খণ্ডে প্রকাশ করা হয়েছে। তাঁর জন্ম ও বেড়ে ওঠা পশ্চিমবঙ্গের হাওড়া জেলার শিবপুরে। পারিবারিক আদি বাসস্থান বাংলাদেশের বিক্রমপুরে। তাঁর জন্মের আগেই পরিবার শিবপুরে চলে আসে। অল্প বয়সেই শিল্পকলার প্রতি তাঁর ঝোক ছিল। পারিবারিক পেশা স্বর্ণকার হওয়ায়, বিভিন্ন নকশা করার সুযোগ ছিল তাঁর কাছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় তিনি আর্ট কলেজে পাঁচ বছরের ডিগ্রির জন্য লেখাপড়া শুরু করলেও, শেষ পর্যন্ত আর তা চালিয়ে উঠতে পারেননি। এরপর কিছু বছর বিজ্ঞাপন সংস্থার জন্য কাজ করেছেন।
বাংলা কমিকসের দুনিয়ায় তাঁর আগমন ঘটে ‘দেব সাহিত্য কুটির’-এর সম্পাদক মন্ডলীর উৎসাহে। প্রথম কমিকস ‘হাঁদা ভোঁদা’ নামটিও তাঁদেরই প্রস্তাবে। সেই সময় বাংলা কমিকস বলতে ছিল প্রফুল্ল চন্দ্র লাহিড়ী বা কাফি খাঁ’র আঁকা ‘শেয়াল পণ্ডিত’। যা প্রকাশিত হত যুগান্তরে। এরপর ‘হাঁদা ভোঁদা’ প্রকাশিত হতেই পাঠকদের নজর যায় সেদিকে। নারায়ণ দেবনাথের প্রথম রঙিন কমিক স্ট্রিপ ছিল ‘বাঁটুল দি গ্রেট’। ১৯৬৫-তে তাঁর এই গ্রেটার সৃষ্টি। কলকাতার কলেজস্ট্রিট থেকে ফেরার পথে তিনি বাঁটুলের চরিত্রটির কল্পনা করেন এবং তৎক্ষণাৎ তাঁর প্রতিকৃত এঁকে ফেলেন। পরবর্তীতে ‘কিশোর ভারতী’ পত্রিকা দল নারায়ণ বাবুর কাছে বিশেষ পুজো সংখ্যার ব্যাপারে কথা বলতে আসেন। সেই সময় সম্পাদক ছিলেন প্রেমেন্দ্র মিত্র। পরে দীনেশচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় সম্পাদক হন এবং তাঁকে গোয়েন্দা গল্পের প্রস্তাব দেন।
১৯৬৯-এ সৃষ্টি হয় ‘নন্টে ফন্টে’। ‘কিশোর ভারতী’তে তার আঁকা প্রথম ধারাবাহিক কমিক স্ট্রিপ হল “ম্যাজিশিয়ান পটলচাঁদ’। যার এটি সংখ্যা বেরোয়। এছাড়া ‘বাহাদুর বেড়াল’, ‘ব্ল্যাক ডায়মন্ড ইন্দ্রজিৎ রায়’, ‘পেটুক মাস্টার বটুকলাল’, ‘ডানপিটে খাঁদু আর তার কেমিক্যাল দাদু’র মতো একাধিক কমিক তৈরি করেছেন তিনি। সিরিয়াস গল্পের পাশাপাশি মজার ছবি আঁকতেন খুবই ভালো। ৩০-৪০-এর দশকে আঁকার খুব বেশি বইপত্র না থাকলেও, পড়াশুনা করেছিলেন পেন্টিং নিয়ে।
কমার্শিয়াল আর্টের দিকে যাবেন বলে স্থির করেন। একজন ইলাস্ট্রেটর হিসেবে তিনি ছিলেন বহুমুখী। কখনও হাসি, কখনও গুরু গম্ভীর নানা ছবি মুহূর্তের মধ্যেই এঁকে ফেলতে পারতেন তিনি। একটি ছবিকে আকর্ষণীয় আর বিশ্বাসযোগ্য করে তোলার দিকে তাঁর নজর থাকত সারাক্ষণ, খাটতেও হতো তাঁর জন্য। ধীরে ধীরে সমস্তটাই রপ্ত করেছিলেন। তাঁর তুলির টানে ‘হাঁদা ভোঁদা’, ‘নন্টে ফন্টে’, ‘বাঁটুল দি গ্রেট’-এর মতো চরিত্র ফুটে উঠেছে। চরিত্রগুলি নিয়ে সারাক্ষণ মাথায় খেলা করাতেন। তাঁর মতো প্রতিভা খুব কম জনেরই রয়েছে। জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত নিজের কাজকে ভালোবেসে গিয়েছেন এই প্রতিভাবান ব্যক্তিত্ব। হাসপাতালে শুয়েই পদ্মশ্রী সম্মান হাতে নেন। চলতি বছরের জানুয়ারির ১৮ তারিখ ৯৬ বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন কিংবদন্তি এই চিত্রশিল্পী।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম