।। প্রথম কলকাতা ।।
Flood: বর্ষা নামতেই বাংলাদেশে বন্যার আশঙ্কা। গত বছরের মতো পরিস্থিতি ভয়ঙ্কর হবে না তো? বন্যা মানেই মানবিক বিপর্যয়। এবছর কতটা রিস্কে বাংলাদেশ? বন্ধু রাষ্ট্র হয়ে ভারত কি পারে না বাংলাদেশের বন্যা আটকাতে? এত আলোচনা পরিকল্পনা করেও কেন বন্যার সাথে পেরে উঠছে না দুই দেশ? গলদটা ঠিক কোথায়?
ভারত আর বাংলাদেশের বন্যার প্রসঙ্গ এত ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে কেন? বাংলাদেশের বন্যার প্রসঙ্গে কেন ভারতের কথা উঠে আসে? আসলে ভারত আর বাংলাদেশ একে অপরের সঙ্গে সীমান্ত ভাগ করছে প্রায় চার হাজার কিলোমিটারের বেশি। যার মধ্যে বাংলাদেশ আসামের সঙ্গে ২৬২ কিলোমিটার, ত্রিপুরার সঙ্গে ৮৫৬ কিলোমিটার, মিজোরামের সঙ্গে ৩১৮ কিলোমিটার, মেঘালয়ের সঙ্গে ৪৪৩ কিলোমিটার এবং পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে ২১৭ কিলোমিটার সীমান্ত ভাগ করে। বর্ষায় আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরার জল বাংলাদেশের সিলেট সুনামগঞ্জ হয়ে নিম্ন অঞ্চলে প্রবাহিত হয়। প্রতিবছর বন্যার আশঙ্কা তৈরি হয় বাংলাদেশে রংপুর কুড়িগ্রাম নীলফামারীসহ অন্তত ১৭টি জেলায়। ডুবে যায় রাস্তাঘাট, বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে রেল যোগাযোগ। সবথেকে বেশি বৃষ্টি হয়ে থাকে ভারতের চেরাপুঞ্জিতে। যার শুরুটা হয়েছে সুনামগঞ্জ জেলার সীমান্ত থেকে। এই জল প্রথমে যায় বাংলাদেশের হাওরে, তারপর ভৈরব কিংবা মেঘনা হয়ে চলে যায় সাগরে। বাংলাদেশে প্রচুর নদী আছে কিন্তু অতিরিক্ত জল নেওয়ার ক্ষমতা নেই। বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির ফলে জলবায়ুর বড়সড় পরিবর্তন ঘটেছে। বাঙলাদেশের নদী গুলোর নাব্যতাও কমেছে। প্রতি বছর উজান থেকে জলের সাথে নেমে আসে বলি আর পাথর, যা ভরাট করে ফেলে নদীর তলদেশ। পাশাপাশি সিলেট সুনামগঞ্জ কিশোরগঞ্জ কিংবা নেত্রকোনার হাওর এলাকার বেশিরভাগ জনপদে বাঁধ নেই।
এছাড়াও বন্যার পিছনে তিনটি বিষয়কে দায়ী করা যেতে পারে। জলবায়ু পরিবর্তন, আন্তদেশীয় উদ্যোগের অভাব, আর অব্যবস্থাপনা। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বন্যা হচ্ছে অবশ্যই ঠিক। কিন্তু মানুষের দায় এড়ানো যাবে না। সীমান্তের নদী গুলোর জল আর বলি ব্যবস্থাপনার জন্য দুই দেশের মধ্যে যৌথভাবে পোক্ত কোনো চুক্তি হয়নি। দুই দেশের রাস্তাঘাট, অবকাঠামো নির্মাণ আর বাঁধ বন্যাকে বেশি প্রভাবিত করে। যত দিন যাচ্ছে ততই ভরাট হচ্ছে হাওর আর নদীর তলদেশ গুলো। New age এর প্রতিবেদন বলছে, শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশের বহু নদী প্রায় মৃত অবস্থায় পরিণত হয়। কিন্তু বর্ষাকালে অতিরিক্ত জল থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য ভারত ব্যারেজের ফ্লাডগেট খুলে দিলে প্রচুর পরিমাণে জল প্রবেশ করে বাংলাদেশে। যার ভার সইতে পারে না মৃতপ্রায় নদী গুলো।
ভারত সরকার যে বিষয়টিকে একেবারেই আমল দিচ্ছে না, তা কিন্তু একেবারেই নয়। কোন দেশই চায়না প্রতিবেশী দেশ বন্যায় ডুবে যাক। শুধু বাংলাদেশ নয় প্রতিবছর বন্যায় মারাত্মক ক্ষতি হয় ভারতেরও। সাম্প্রতিক সময় ভারত সরকার দেশের সমস্ত নদীকে একত্রে যুক্ত করার জন্য কাজ করছে। উদ্দেশ্যে, অতিরিক্ত বৃষ্টির পর বন্যা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা। যেসব রাজ্যে বৃষ্টিপাত কম সেখানে জল পৌঁছে যাবে নদীর মাধ্যমে। তাই উত্তর পূর্ব থেকে পশ্চিমে এবং দক্ষিণ থেকে উত্তর ভারতের নদীগুলোকে সংযুক্ত করার কাজ চলছে। বন্যা নিয়ন্ত্রণে দুই দেশ বহুবার নিজেদের মধ্যে আলোচনাও করেছে। কিন্তু প্রকৃতির সাথে লড়াই করা অতটাও সহজ নয়।
স্বাভাবিক ভাবে, প্রশ্ন উঠছে গতবছরের মতো এবছরেও কি বাংলাদেশে বন্যা হবে? বিবিসির রিপোর্ট বলছে, আগামী কয়েকদিন উত্তর পূর্বাঞ্চল এবং উজানে ভারি থেকে অতি ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। যার কারণে বাড়তে পারে সুরমা, যাদুকাটা, সারিগোয়াইন সোমেশ্বরী নদীর জল। স্বল্প মেয়াদে বন্যা দেখা দিতে পারে সিলেট সুনামগঞ্জ এবং নেত্রকোনার কিছু অংশে। গত বছরের মতো তীব্র বন্যার আশঙ্কা আপাতত নেই, তবে মাঝারি বন্যা হতে পারে।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম