।। প্রথম কলকাতা ।।
বিশ্ব জুড়ে একের পর এক যুদ্ধে অস্ত্র ব্যবসায়ীদের পোয়াবারো। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে অস্ত্র বিক্রি। যুদ্ধ মানে শুধু ক্ষয়ক্ষতি নয়, ভুল ধারণা বদলান। পুরো পরিস্থিতিটাই কি তৈরি করা? লাভটা জানেন? কারা তৈরি করছে এই সংকট? মদতদাতা কারা? যুদ্ধ বাধিয়ে লাভ টা কি? ব্যাক টু ব্যাক যুদ্ধ, কীসের ইঙ্গিত দিচ্ছে? কোন ভয়ঙ্কর পরিণতির দিকে এগিয়ে চলেছে গোটা বিশ্ব? যুদ্ধ-সংঘাত আদৌ কি শেষ হবে কখনও? কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা?
গত সাত বছর ধরে বিশ্বজুড়ে অস্ত্র বিক্রি বেড়েছে দেখার মতো। প্রথমেই ভুলটা ভেঙে দিই। যুদ্ধ মান শুধু ক্ষয়ক্ষতি, প্রাণহানি নয়। যুদ্ধ মানে মুনাফাও, যুদ্ধ মানে কারোর পৌষ মাস তো কারো সর্বনাশ। বছরের পর বছর ধরে চলতে থাকা যুদ্ধে, সংঘাতে, কোনো কোনো দেশ দেউলিয়া হয়েছে, কেউ তলিয়ে গেছে রাজনৈতিক অস্থিরতায়, গোটা বিশ্বে এর এফেক্ট পড়েছে। কিন্তু এসবের মধ্যেও একটা বিশেষ শ্রেণী বিরাট মুনাফা লুটেছে, এখনও লুটছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ফুলেফেঁপে উঠেছে অস্ত্র নির্মাতা কোম্পানিগুলো। করোনা মহামারির মতো সংকটকালে লোকসান তো দূরের কথা, এসব কোম্পানির মুনাফা বেড়েছে কয়েকগুণ। বিশ্লেষকরা কি বলছেন? তাঁদের মতে, বিশ্বজুড়ে সশস্ত্র সব যুদ্ধের নেপথ্যে রয়েছে এই বড় বড় অস্ত্র কোম্পানিগুলোই। জানেন মুনাফা লাভ এর আশায় এরা কতটা খতরনাক হয়ে উঠেছে?
বিলিয়ন ডলার বাণিজ্যের সামনে মানবিক বিপর্যয়ের তোয়াক্কা করে না এই অস্ত্র কোম্পানিগুলো। বরং নিজেদের অস্ত্র ব্যবসা বাড়াতে গিয়ে যুদ্ধ পরিস্থিতি উস্কে দেওয়া তাদের কাছে একরকম রোমান্টিসিজম। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যুদ্ধের প্রেমে পড়ে গেছে অস্ত্র কোম্পানিগুলো। টার্গেট একটাই যত বেশি যুদ্ধ, যত বেশি সংঘাত, তত বেশি ব্যবসা। আর ঠিক এই কারণেই বিশ্বব্যাপী প্রতিরক্ষা খাতে উল্লেখযোগ্য হারে বাজেট বাড়ছে। বিভিন্ন দেশ তাদের সামরিক বাজেট বাড়াচ্ছে। বলা যায় রীতিমতো কম্পিটিশনে। গত বছর মানে ২০২২ সালে বিশ্বজুড়ে সামরিক ব্যয় অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। সামরিক খাতে ব্যয় পৌঁছেছে ২ হাজার ২৪০ বিলিয়ন ডলারে, যা পৃথিবীর ইতিহাসে সর্বোচ্চ এই তথ্য জানিয়েছে সিপ্রি। হিসাবটা আরো ভালোভাবে বুঝিয়ে দিচ্ছি, ২০২২ সালে রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু। ফলে, বিশ্বের সম্মিলিত সামরিক বাজেটের এক তৃতীয়াংশেরও বেশি একাই ব্যয় করেছে যুক্তরাষ্ট্র। শতাংশের হিসাবে যা বিশ্বের মোট সামরিক ব্যয়ের ৩৯ শতাংশ। না কম নয়। এর মানে একটাই, অস্ত্র নির্মাতা কোম্পানিগুলোর আরও মুনাফা বৃদ্ধি।
বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের কারণ, বিশ্বের শীর্ষ ২৫টি অস্ত্র উৎপাদক ও বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে প্রথম ৫টিই যুক্তরাষ্ট্রের। তাছাড়া বিশ্বে অস্ত্র বিক্রির ৩৭ শতাংশ যুক্তরাষ্ট্রের দখলে। ২০১৬ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র বিক্রির ৪৭ শতাংশ হয়েছে মধ্যপ্রাচ্যে। যেখানে বিশ্বের ৩৩ শতাংশ অস্ত্র বিক্রি হয়। ফলে খুব স্বাভাবিকভাবেই, মার্কিন প্রতিরক্ষা সংস্থাগুলোর আয় বেড়েছে। তবে শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয়, রাশিয়াও তাদের সামরিক ব্যয় বাড়িয়েছে। শুধু রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ তো নয়। একটা যুদ্ধ শেষ না হতেই আরেকটি যুদ্ধ শুরু হচ্ছে। আর সেই সুবিধাকে কাজে লাগিয়েই নিজেদের ব্যবসা বাড়াচ্ছে অস্ত্র নির্মাতা কোম্পানিগুলো। স্ট্র্যাটেজিটা মারাত্মক।
- গত প্রায় সাত দশক ধরে ফিলিস্তিন ও ইসরাইল সংঘাত চলছে।
- এশিয়া, আফ্রিকা, ইউরোপের বিভিন্ন দেশ ও অঞ্চলে সংঘাত অব্যাহত।
- সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধের নাম দিয়ে একুশ শতকের প্রথমে সংঘাতের শুরু আফগানিস্তানে।
- আফগানিস্তানে আগ্রাসনের পর থেকে প্রায় প্রতি বছরই সংঘাতপূর্ণ দেশের তালিকায় যোগ হয়েছে নতুন নতুন দেশের নাম।
- ২০০৩ সালে ইরাক, ২০০৬ এ লিবিয়া, ২০১১ তে সিরিয়া, ২০১৫ সালে ইয়েমেন একের পর এক চলছেই।
ইরাক ও আফগানিস্তানে কয়েক লক্ষ মানুষ এর প্রাণ গেছে, আফগানিস্তানের প্রায় চল্লিশ লক্ষ মানুষ উদ্বাস্তু। ইরাক ও আফগানিস্তোনে সংঘাত কিছুটা কমে এলেও লিবিয়া, সিরিয়া ও ইয়েমেনে গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে যুদ্ধ চলছে। মিয়ানমারে যা চলছে তা প্রায় গৃহযুদ্ধ বলা যায়।মিয়ানমারের পর তালিকায় যোগ হয়েছে রাশিয়া ইউক্রেন সংঘাত, সুদানের গৃহযুদ্ধ। সবমিলিয়ে তটস্থ গোটা বিশ্ব। পর্যবেক্ষকরা বলছেন এতো যুদ্ধ, লড়াই, বিশ্বকে ধ্বংসের পথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। এসব যুদ্ধের শেষ কোথায়? কেউ জানে না। তাঁদের মতে, ভবিষ্যতে এই যুদ্ধের ভয়াবহতা আরো বাড়বে বই কমবে না। যুদ্ধ না থাকলে যারা অস্ত্র তৈরি করছে তাদের ভান্ডার পরিপূর্ণ হবে কি করে? আর এটাতো মানতেই হবে, এই শিল্পে বিনিয়োগে যত লাভ হয় তত লাভ অন্য কোনও খাতে হয় না। তাই, যুদ্ধ হবে, মানুষের প্রাণ যাবে, সব হারিয়ে কিছু মানুষ উদ্বাস্তু হবে, আর মদতদাতাদের প্রাণ জুড়াবে
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম