।। প্রথম কলকাতা ।।
India United States: ভারতের কাঁধে ভর করেই স্বার্থ হাসিল করতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। মোদীর আসন্ন ওয়াশিংটন সফরে যুক্তরাষ্ট্রের পালে হাওয়া লাগার চান্স কতটা? মোদী-বাইডেন আসন্ন বৈঠক কেন এত গুরুত্বপূর্ণ? দ্বিপাক্ষিক আলোচোনার ক্ষেত্রে কোন কোন বিষয় প্রাধান্য পাবে? কোন কারনে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক মজবুত করতে সর্বশক্তি নিয়ে চেষ্টা চালাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র? কিভাবে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে অপরিহার্য হয়ে উঠলো ভারত? দুই দেশের সম্পর্ক দৃঢ় করতে এই সফরকে ভারতের ‘মাইলস্টোন মোমেন্ট’ বলার কারণ কী? সত্যিই কি ওয়াশিংটন-দিল্লির বন্ধুত্ব অভিন্ন আদর্শের নয়? শুধুই কি স্বার্থের খেলা? চীনকে শায়েস্তা করতে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে তুরুপের তাস “ভারতবর্ষ”।
২১ থেকে ২৩শে জুন, আমেরিকায় নরেন্দ্র মোদীর তিন দিনব্যাপী এই সফরের দিকে শুধু ভারত বা আমেরিকার নয়, নজর গোটা আন্তর্জাতিক বিশ্বেরই। কেন? ইক্যুয়েশনটা বুঝতে হবে। আমেরিকার কাছে ভারত আজ অপরিহার্য। আর তারই প্রতিফলন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ওয়াশিংটন সফর। বিষয়টাকে কিভাবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা? বুঝিয়ে বলছি, যুক্তরাষ্ট্রের ভূরাজনৈতিক শত্রু চীনের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক মোটেই ভালো নয়। তাই, চীনকে ঠেকাতে হলে যুক্তরাষ্ট্রের ভারতকে দরকার। চীনকে প্রতিহত করতে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ভারতের মূল্য অনেক। কারণ, এশিয়ায় ভারত একটি বৃহৎ শক্তি। ভারতের গুরুত্বপূর্ণ নৌপথ রয়েছে, ভারতের সঙ্গে চীনের একটি বিস্তৃত স্থলসীমান্ত রয়েছে। তাই, ভারতকে যুক্তরাষ্ট্র শুধুই স্বার্থ অর্জনের সহযোগী শক্তি হিসেবে দেখছে বলে মত বিশেষজ্ঞদের একাংশের। দ্য ওয়াশিংটন পোস্টও মন্তব্য করেছে, চীনের বিরুদ্ধে একটি ‘প্রতিরোধ’ গড়ে তোলার জন্য ভারত আজ আমেরিকার কাছে যতটা জরুরি, ততটা আগে কখনোই ছিল না। ফলে, মোদির এই সফর ধারে ও ভারে তাঁর আগেকার সফরগুলোর চেয়ে অনেক বেশি ওজনদার ও গুরুত্বপূর্ণ।
শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয়, ভারতের কাছেও এই সফর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটা ফ্যাক্টর। তাই, দিল্লি ও ওয়াশিংটনের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে এই সফরকে ভারত যে একটি ‘মাইলস্টোন মোমেন্ট’ বলে বর্ণনা করছে তাতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। কেন গুরুত্বপূর্ণ? আসলে, চীনকে ঠেকাতে তলে তলে জবরদস্ত প্ল্যানিং চালাচ্ছে ভারত। সে ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের মোটিভ ও অনেকটাই এক। তাছাড়া, ভারতের কাছে যুক্তরাষ্ট্র এমনিতেও গুরুত্বপূর্ণ; কারণ, যুক্তরাষ্ট্র অত্যাধুনিক প্রযুক্তি, শিক্ষা ও বিনিয়োগের একটি বিশাল উৎস। মস্কোর সঙ্গে দিল্লির সম্পর্ক ভালো আছে ঠিকই কিন্তু রাশিয়ার অস্ত্রের গুণমানহীনতা ও তা প্রাপ্তির অনিশ্চয়তার মানে হলো, ভারত অস্ত্র কেনার বিষয়ে আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় এখন অনেক বেশি পশ্চিমাদের স্বাগত জানাতে প্রস্তুত।
সেক্ষেত্রে, দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় এবার যে ৩ টে বিষয় প্রাধান্য পাবে তার মধ্যেও উল্লেখযোগ্য প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে সহযোগিতা এছাড়াও রয়েছে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ এবং প্রযুক্তিগত সহায়তা। কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছেযে সব বিষয়ে সমঝোতা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে, তার মধ্যে একটি ১৮০ কোটি ডলারের ১৮টি প্রিডেটর-বি আর্মড ড্রোন ক্রয় সংক্রান্ত চুক্তি। আমেরিকার তৈরি এই ড্রোনগুলো দুর্গম সীমান্ত বা সামুদ্রিক এলাকায় দূর পাল্লাতেও নিখুঁত লক্ষ্যে আঘাত হানতে পারে এবং নজরদারি চালাতে পারে। পাশাপাশি যৌথভাবে ফাইটার জেট ইঞ্জিন বানানোর জন্য দুই দেশের মধ্যে একটি প্রতিরক্ষা চুক্তিও স্বাক্ষরিত হতে পারে। এই চুক্তি সম্পাদিত হলে ম্যাসাচুসেটসের এ্যারোস্পেস ম্যানুফ্যাকচারিং জায়ান্ট জেনারেল ইলেকট্রিক কোম্পানি ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত হিন্দুস্থান এরোনটিকস লিমিটেডের সঙ্গে মিলে তেজস লাইট এয়ারক্র্যাফটের ইঞ্জিন বানাতে পারবে।
বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, ভারতের সঙ্গে আমেরিকা এই সব প্রতিরক্ষা চুক্তি করতে মরিয়া বলেই ইউক্রেন যুদ্ধে ভারতের ভূমিকা নিয়ে মোদীর সফরে যুক্তরাষ্ট্র নীরব থাকবে। তাছাড়া, ভারত ও আমেরিকার মধ্যে রাজনৈতিক স্তরে ক্রমবর্ধমান ঘনিষ্ঠতার একটা প্রভাব অবশ্যই এই সফরে পড়বে এবং নরেন্দ্র মোদী ও জো বাইডেনের মধ্যে ব্যক্তিগত স্তরেও একটা ‘লিডারশিপ কানেক্ট’ গড়ে উঠবে বলে আশা করা যাচ্ছে। চারিদিকে একটাই কথা বলা বলি হচ্ছে, লেখা লিখি চলছে, এই সফরে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে অবশ্যই সর্বশক্তিতে চেষ্টা করতে হবে। হ্যাঁ, যুক্তরাষ্ট্র তৈরি। জানেন? আগামী ২২শে জুন মোদী আমেরিকায় এমন একটি বিরল সম্মান পেতে চলেছেন, যা তাঁকে প্রবাদপ্রতিম ব্যক্তিত্ব উইনস্টন চার্চিল বা নেলসন ম্যান্ডেলার সঙ্গে এক কাতারে বসিয়ে দেবে। ওই দিনই দুপুরে মার্কিন কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে দ্বিতীয়বারের মতো ভাষণ দেওয়ার কথা প্রধানমন্ত্রী মোদীর। যে গৌরব চার্চিল, ম্যান্ডেলা বা হাল আমলে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ছাড়া আর কেউই পাননি। শুধু তাই নয়, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও ফার্স্ট লেডি জিল বাইডেনের আমন্ত্রণে মোদীর এই সফরে তাঁকে একাধিকবার হোয়াইট হাউসে আপ্যায়িত করা হবে। আপাতত, এতটুকুই। বাকি চিত্রটা সময়ের সাথে সাথে আরও পরিষ্কার হবে।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম