।। প্রথম কলকাতা ।।
India Bangladesh: ফেনীর জল নিয়ে ভারত বাংলাদেশের জট কাটছে না। ফেনী নদীর জল তোলার পদ্ধতি নিয়েই দুই দেশের মধ্যে তুমুল মতবিরোধ। ভারতের দেওয়া প্রস্তাবে কি ভুল দেখছে বাংলাদেশ? রিস্ক কোথায়? কেন ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের চাওয়া মিলছে না? কোথায় ফারাক? কি বলছেন বিশেষজ্ঞরা? বাংলাদেশ-ভারত আন্তঃসীমান্ত। ফেনী নদীর মাঝখানে গভীরে কূপ খনন করে পাইপের মাধ্যমে জল উত্তোলন করার প্ল্যান ভারতের। কিন্তু, এতে সায় নেই বাংলাদেশের। বরং, নদীর পাড়ে কূপ খনন করে জল প্রত্যাহার করতে চাইছে ঢাকা। আর, এই জল উত্তোলনের পদ্ধতি নিয়েই দুই দেশের মতবিরোধ।
ভারত কি বলছে?
আসলে ভারতের দাবি, খাল কেটে পাম্প দিয়ে জল প্রত্যাহার করলে বার বার পলি জমে যাবে। কিন্তু নদী থেকে সরাসরি জল তুললে সেই আশঙ্কা থাকে না। সেইসাথে খাল খনন করা বা রক্ষণাবেক্ষণের ঝক্কিও থাকবে না। তবে, বাংলাদেশের পাল্টা যুক্তি, এই ধরণের পলি প্রতিরোধে আধুনিক ব্যবস্থাও তো রয়েছে। না শুধু মুখের কথাতেই বিষয়টা আটকে নেই। ১২ই জুন, ভারতের যে প্রস্তাব তার যথার্থতা খতিয়ে দেখতে এবং কূপ খননের সম্ভাব্য স্থান নির্ধারণ করতে সেখানে গিয়েছিলেন দুই দেশের যৌথ কারিগরি কমিটির সদস্যরা।
লাভ হলো কোথায়?
পরিদর্শন শেষে ‘নদীতে কূপ খনন’ আর ‘নদীর পাড়ে কূপ খনন’ নিয়ে দু পক্ষের অনড় অবস্থানের কারণে শেষ পর্যন্ত চূড়ান্ত কোন সিদ্ধান্তই হলো না। ভারত বলছে, বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সবুজ সংকেত পেলেই কাজ শুরু হবে। আর বাংলাদেশ বলছে, য়কংক্রিটের বেষ্টনী দিয়ে পলি আটকে দেওয়া যাবে। বলতেই হচ্ছে এক্ষেত্রে যৌথ নদী কমিশন ভারতের সিদ্ধান্তে ভুল দেখছে। কিরকম? তারা বলছে নদীর মাঝখানে কূপ খনন করা হলে নদী ভাঙনের ঝুঁকি থাকছে।
বাংলাদেশ এর বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নদীর গতিপথ, বাঁক এবং এর গভীরতা ক্রমশ পরিবর্তনশীল। তাই বাংলাদেশ এর প্রস্তাব অনুযায়ী ভারত পাড়ে খাল কেটে জল উত্তোলন করলে ১০ বছর পর তা অগভীর হয়ে যেতে পারে। কিন্তু ভারতের প্রস্তাব অনুযায়ী নদীর গভীরে মাঝখান থেকে জল তুললে নদীর আচরণে পরিবর্তন হবে, এর প্রভাবে পাড় ভাঙতে শুরু হবে। এমনকি, নদী প্রবাহ ও নদীর নাব্যতায় প্রভাব পড়ারও আশঙ্কা রয়েছে।
কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে ফেনী নদী এমনিতেই সংকীর্ণ, ফলে জলের অভাবে সহজেই শুকিয়ে যাওয়ার চান্স আছে। এছাড়া, ভারতের বিরুদ্ধে আরও মারাত্মক অভিযোগ রয়েছে ঢাকার। বলা হচ্ছে, ২০১৯ সালে বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে সই হওয়া সমঝোতা স্মারক অনুযায়ী ফেনী নদী থেকে ১.৮২ কিউসেক জল ত্রিপুরার সাব্রুম শহরে সরবরাহ করা হবে, যাতে সেখানে পানীয় জলের প্রয়োজন মেটানো যায়। কিন্তু, সমঝোতা স্মারক সই হওয়ার কয়েক দশক আগে থেকেই ভারত নাকি এই নদী থেকে অবৈধভাবে জল তুলে আসছে বলে অভিযোগ করা হয়। আর এই অবৈধভাবে জল উত্তোলনের কারণেই শুষ্ক মৌসুমে নদীর বিভিন্ন স্থানে বালুচর জেগে ওঠার পাশাপাশি দুই তীরে চাষাবাদ ব্যাহত হচ্ছে বলে অভিযোগ বাংলাদেশের বিশেষজ্ঞদের।
ফেনী নিয়ে কীসের এতো মাথা ব্যাথা বাংলাদেশের?
কারণ আছে বৈকি! বাংলাপিডিয়ার তথ্য মতে, ১১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ ফেনী নদী, ত্রিপুরার পূর্বাঞ্চলীয় পর্বতে উৎপন্ন হয়ে খাগড়াছড়ি জেলার মাটিরাঙ্গা উপজেলার বেলছড়ি দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। বাংলাদেশের পার্বত্য অঞ্চল এবং সমতলে ফেনী জেলার দুই পাড়ের মানুষদের জীবনের উপর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব রয়েছে এই ফেনী নদীর। বেশ কয়েকটি উপনদী এসে ফেনীর সাথে মিশেছে। তাই ফেনী নদীর জল কমে গেলে এই উপনদীগুলোতেও জল প্রবাহ কমে যাবে। এতে নদীর জীব-বৈচিত্র্য এবং নদীর তীর সংলগ্ন বাসিন্দারা রিস্কে পড়বে বলে মত বিশেষজ্ঞদের। তবে, আন্তঃসীমান্ত ফেনী নদীর অন্তর্বর্তীকালীন জল বণ্টন চুক্তি দ্রুত স্বাক্ষরের জন্য বাংলাদেশকে কিন্তু তাড়া দিয়েছে ভারত। আর, ভারত কিন্তু উভয় দেশের মানুষের কথাই ভেবেছে। বাংলাদেশ এর সুবিধা অসুবিধার কথাও ভেবেছে ভারত সরকার। কিন্তু, তারপরেও ফেনীর জল উত্তোলন এর পদ্ধতি নিয়ে ভারত বাংলাদেশ তরজা চলছেই। নিজ নিজ স্বার্থ রক্ষার্থে দুই দেশই নিজের স্ট্যান্ড পয়েন্টে অনড়। এরপর এই ফেনীর জল কোথা থেকে কোথায় গড়ায়, সেটাই দেখার অপেক্ষা।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম