।। প্রথম কলকাতা ।।
umbrella: রোদ-জলে ছাতার মত সঙ্গী আর নেই। ছাতা মানেই ভরসা। কিন্তু জানেন কি? ছাতার আবিষ্কার কীভাবে হয়েছিল? একসময় সোনা, রুপো দিয়ে তৈরি ছাতা নিজের চোখে দেখেছেন? বহু হাজার বছর আগে এটি ছিল শুধু রাজাদের জন্যই। সময়ের সঙ্গে বদলেছে তার আকার-ওজন। বৃষ্টি নয় এই অদ্ভুত কারণের জন্যই ছাতার ব্যবহার প্রথম শুরু হয়। কোথায় এবং কারা প্রথম ছাতা আবিষ্কার করেছিল এই নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। ছাতার ব্যবহার যে কত প্রাচীন তা বলা কঠিন। রাজাদের ব্যবহৃত ছাতা কীভাবে আপনার ঘরে এল? জানতে ইচ্ছে করছে নিশ্চই।
একসময় চিনা রাজদরবারগুলোতে ছাতার ছবি আঁকা থাকত। চিন থেকেই রাজছত্রের ব্যবহার জাপান এবং কোরিয়ায় চালু হয়। প্রথমে কেবল রাজারাই ছাতা ব্যবহার করতে পারতেন। চিনে বিয়ের প্রস্তাব পাঠাতে ছেলের বাড়ি থেকে তত্ত্বে যেত লাল টুকটুকে একটি ছাতা। বিয়েতে রাজি হলে কনেপক্ষ সেই ছাতাকে উঁচু জায়গায় টাঙিয়ে দিত যাতে দূর থেকে চোখে পড়ে। এরপর একে একে নানা দেশে শুরু হয় ছাতার ব্যবহার।
পারস্যের পর্যটক ও লেখক জোনাস হ্যানওয়ে পর্তুগাল থেকে প্রথম ইংল্যান্ডে ছাতা নিয়ে আসেন। ছাতা সঙ্গে নিয়ে ঘুরতেন বলে লোকে ঠাট্টা করত। কিন্তু তিনি তাদের বোঝাতেন বর্ষার দিনে ঘোড়ার গাড়ি ভাড়া করার চেয়ে একটি ছাতা ব্যবহার করা অনেক সহজ। ইউরোপে ছাতার ব্যবহার শুরু হয় ফ্যাশন হিসেবে। অভিজাত ঘরের মহিলারা প্যারিস থেকে সিল্ক ও দামি ঝালর বসানো লেসের ছাতা ব্যবহার করতেন। বিশ্বের প্রথম ছাতার দোকান জেমস স্মিথ অ্যান্ড সন্স চালু হয় ১৮৩০ সালে। সময়ের সাথে সাথে বদলালো ছাতার আকার সঙ্গে ওজনও।
কাঠের বা তিমি মাছের কাঁটা দিয়ে তৈরি হত রড। কখনো সোনা, রুপা, চামড়া, বিভিন্ন প্রাণীর শিং আবার বেত ও হাতির দাঁত দিয়ে তৈরি হত হাতল। এরকম একটি ছাতার গড় ওজন হত প্রায় চার-পাঁচ কেজি। ইংল্যান্ড, বিশেষ করে লন্ডনে খুব বৃষ্টি হত হালকা রড দিয়ে শুধুমাত্র রানি ভিক্টোরিয়ার জন্য ছাতা তৈরি হয়েছিল। কেবল বৃষ্টি বা রোদ থেকে বাঁচতে নয়, ফ্যাশন অনুষঙ্গ হিসেবেও এখন ব্যবহৃত হচ্ছে নানা রং, নকশা ও কাপড়ের ছাতা। বিভিন্ন অঞ্চলের বাজারের উপর নির্ভর করে ছাতার দাম।
পলিয়েস্টার কাপড়ের ছাতা পৃথিবীজুড়ে ব্যাপক হৈ চৈ ফেলে দিয়েছিল। এটি এমন একটি কাপড় যা সূর্যের আলোর প্রতিরোধী উপহার হিসাবেও ছাতা এই সময় ভীষণ জনপ্রিয় হয়ে উঠে। কয়েক বছর আগে কুমিরের চামড়া দিয়ে ছাতা বানিয়ে সারা বিশ্বে তাক লাগিয়ে দিয়েছিল ইটালির একটি সংস্থা। এই ছাতার দাম ঠিক করা হয়েছিল ৪০ লক্ষ টাকা। এরপর ছাতার কাপড়, রং, সাইজ ও ডিজাইনে এসেছে অনেক ধরনের পরিবর্তন। একসময় বিশ্বের অনেক দেশ বৃটিশদের কলোনি ছিল। আর সেই কারণে তারা বিভিন্ন দেশ থেকে কাঁচামাল সংগ্রহ করে অনেক কম খরচে ছাতা তৈরি করতে পারতো। প্রাচীনকালে মানভূম অঞ্চলের রাজারা ইন্দ্রদেবের আরাধনায় ছাতা পরবের আয়োজন করতেন। প্রাচীন প্রথা মেনে পঞ্চকোট রাজপরিবারের সদস্যদের হাতে এক বিশাল সাদা ছাতা খোলার মধ্যে দিয়ে আজও এই উৎসবের সূচনা হয়। ছাতাপরবে যে ছাতাটি রাজা উত্তোলন করেন তা ইন্দ্রদেবের ছাতা। ছাতার যে এরকম কত ইতিহাস! তা এখনও অজানা অনেকেরই।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম