।। প্রথম কলকাতা ।।
Bangladesh: বাংলাদেশকে ভোগাবে লোডশেডিং। ডলার সংকটে প্রায় এক মাস বন্ধ থাকবে পায়রা বিদ্যুৎ কেন্দ্র। কয়লা নেই, পায়রায় একের পর এক ইউনিট বন্ধ হচ্ছে। ভ্যাপসা গরমে কি করে টিকবে মানুষগুলো? কিভাবে তৈরি হলো এই পরিস্থিতি? সংকটের সমাধানে ঠিক কি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে? হাল ফিরতে কতদিন সময় লাগবে? বৃষ্টি না হলে পরিস্থিতি জটিল হবে। কঠিন ধৈর্য্যের পরীক্ষা বাংলাদেশের। চালু হওয়ার পর ৩ বছরে একদিনের জন্যেও বন্ধ হয়নি পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র। প্রতিদিনই পূর্ণ সক্ষমতায় বিদ্যুৎ উৎপাদন করেছে। তাই এই কেন্দ্রটি বন্ধ থাকলে ঠিক কি হতে পারে আন্দাজ করতে পারছেন তো?
বিবিসির রিপোর্ট অনুযায়ী, লোডশেডিংয়ের মাত্রা বাড়তে পারে, আশঙ্কা বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড পিডিবির। যদি আবহাওয়া পরিষ্কার থাকে, তাপমাত্রা ৩৫ ডিগ্রির ওপর থাকে, তাহলে লোডশেডিংয়ের মাত্রা কিন্তু আরও বাড়বে।
কাদেরকে ভুক্তভোগী হতে হবে?
লোডশেডিং এর কারণে বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের মানুষকে বেশ ভুগতে হবে। পায়রা বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে যেসব অঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়, সেইসব এলাকায় বেশি চাপ পড়তে পারে। ব্যালেন্স করতে গিয়ে সারা দেশেও লোডশেডিংয়ের মাত্রা বাড়তে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। অতএব এফেক্ট পড়বে বেশ ভালো মতোই। বিবিসির রিপোর্ট অনুযায়ী, একেবারে তথ্য-প্রমাণ সমেত হিসেবটা বুঝে নিন। এই মূহুর্তে বাংলাদেশে প্রতিদিন গড় বিদ্যুতের চাহিদা ১৩ থেকে সাড়ে ১৩ হাজার মেগাওয়াট। অথচ, গড়ে প্রতিদিন ১২ থেকে সাড়ে ১২ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয়।
তাছাড়া, ট্রান্সমিশন, ডিস্ট্রিবিউশন লাইনের অভাব থাকায় গ্রাহকদের কাছে ঠিকমতো বিদ্যুৎ সরবরাহ করা যায় না। ফলে, এমনিতেই বাংলাদেশের অধিকাংশ এলাকার গ্রাহকরা বিদ্যুৎ পরিষেবা ঠিকমতো পান না। তার মধ্যে ডলার সংকটের কারণে কয়লার দাম দিতে না পারায় সাময়িকভাবে বন্ধ হতে যাচ্ছে বাংলাদেশের বৃহত্তম বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র, পায়রা বিদ্যুৎ কেন্দ্র। কয়লা না থাকায় এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের দু’টি ইউনিটের একটাতে বিদ্যুৎ উৎপাদন অলরেডি বন্ধ হয়ে গেছে। আরেকটা ইউনিটও কয়লা স্বল্পতার জন্য বন্ধের মুখে। জুন মাসে অন্তত তিন সপ্তাহ বন্ধ থাকতে পারে বলে অনুমান।
কিভাবে তৈরি হলো এই পরিস্থিতি?
বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি নির্মাণের কাজ করেছে বাংলাদেশ-চায়না পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড। পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে বিসিপিসিএল। এদিকে, শুরু থেকেই পায়রার জন্য কয়লা কেনার দায়িত্ব বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির চীনা অংশীদার চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট কোম্পানি মানে সিএমসির ওপর ছিল। তারা কয়লা কেনার জন্য টাকা দেয়, আর প্রতি ছ মাস পরপর কয়লার টাকা আদায় করে। কিন্তু, এখন কয়লা আমদানির বকেয়া বিল না দিতে পারার কারণে নতুন করে কয়লা কেনা যাচ্ছে না। এপ্রিল মাস পর্যন্ত প্রায় ৩৯০ মিলিয়ন ডলার প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা বকেয়া। গত বছরের নভেম্বরে সিএমসি যে পেমেন্ট করেছে, সেটা শোধ করার কথা ছিল এই এপ্রিলে। কিন্তু এপ্রিলে ওই টাকা শোধ করা যায়নি। আর, বকেয়া বিল শোধ না করা হলে সিএমসি আর কয়লা কেনার জন্য টাকা দেবে না। ফলে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য কয়লাও কেনা সম্ভব হবে না।
মূলত, ডলার সংকটের কারণেই কয়লার বকেয়া বিল দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। সপ্তাহ দুয়েক আগেও আশা করা গেছিল সপ্তাহখানেক এর মধ্যে পরিস্থিতি বদলাবে। কিন্তু তা হয়নি। যদিও, সমস্যা সমাধানে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। সিএমসিকে ১০০ মিলিয়ন ডলার ফেরত দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। বিসিপিসিএল মনে করছে কয়েকদিনের মধ্যেই সিএমসিকে কয়লা কেনার টাকা দিতে রাজি করাতে পারবে। সিএমসির সাথে এই বিষয়ে আলোচনা শেষে কয়েক দিনের মধ্যেই বিসিপিসিএল এলসি খুলতে পারবে।
সময় লাগবে কতদিন?
এলসি খোলার পর জাহাজ যাবে, কয়লা লোড হবে, তারপর আসবে, আনলোড হবে, সব মিলিয়ে কমপক্ষে ২৫ দিন লাগবে। তাই, সেই দিনগুলোতে বাংলাদেশকে লোডশেডিং এর কারণে ভ্যাপসা গরমে যথেষ্ট ভুগতে হবে। তবে, বৃষ্টি হলে অন্য কথা, কারণ বৃষ্টির সময় বিদ্যুতের চাহিদা কম থাকে।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম