।। প্রথম কলকাতা ।।
Killer Robot: যুদ্ধগুলো “কিলার রোবট” এর হাতে চলে যাচ্ছে। বিশ্বজুড়ে আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি হচ্ছে, বিশ্লেষকদের প্যালপিটিশন বাড়ছে। ধ্বংসের ব্যাপকতা বাড়ছে। যুদ্ধে রোবট ব্যবহারের সম্ভাব্য সুবিধা, রিস্ক নিয়ে ভাবার সময় এসে গেছে। জানেন, কীভাবে, কখন, কেন এসব অস্ত্রের উৎপাদন ও ব্যবহার থামানো উচিত? ভবিষ্যতের যুদ্ধগুলো কি আরও বিভীষিকাময় হতে চলেছে? এআইয়ের ভালো দেখেছেন, খারাপ দেখেননি।
প্রথমেই, একটা কথা খোলাখুলি স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেওয়া ভালো। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই নিয়ে চারিদিকে রীতিমতো হুলস্থুল পড়ে গেছে। জানেন নিশ্চয়ই এআইয়ের অভাবনীয় বিকাশের ফলে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এখন এমন সব অস্ত্র তৈরি করতে চাইছে, যেগুলো কোনো মানুষের নির্দেশনা ছাড়াই অটোমেটিক্যালি শত্রুদের চিহ্নিত করবে, এমনকি মেরে ফেলতে পারবে। কি? শুনেই কালঘাম ছুটে যাচ্ছে তো? না, এখানেই শেষ নয়। এটাকে বলছে “স্বয়ংক্রিয় মারণাস্ত্র” পদ্ধতি। কেতাবি নাম ‘লিথ্যাল অটোনোমাস ওয়েপনস সিস্টেম’। কিন্তু, সমালোচকরা বলছেন ‘কিলার রোবট’।
এই ধরনের স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রের ব্যবহারে সাধারণ মানুষ শুধু নয়, আতঙ্কিত বিশ্লেষকরাও। সুবিধা কিছু আছে, কিন্তু কিলার রোবটের নেতিবাচক দিকটাই বেশি গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে। বিশ্লেষকদের যুক্তি কোনো যান্ত্রিক ত্রুটি হলে আন্তর্জাতিক আইন সম্পর্কে গভীরভাবে না জানা কিলার রোবট ভয়াবহ কোনো কাজ করে বসতে পারে। তাছাড়া আবেগ, ইমোশন এসব না থাকা কোনো যন্ত্রকে মানুষের জীবন-মৃত্যুর ফয়সালার ভার দিতেও রাজি নন তাঁরা। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হচ্ছে, স্বয়ংক্রিয় এসব অস্ত্রের জবাবদিহিতা কে করবে এবং কীভাবে তা নিশ্চিত করা হবে? একটা উদাহরণ দিয়ে বোঝালে সুবিধা হবে। ধরুন, যদি কোনো রোবট যুদ্ধাপরাধ করে, তাহলে কি সংশ্লিষ্ট রোবটের কমান্ডিং অফিসারকে এর জন্য দায়ী করা হবে? নাকি তারও উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা, যারা এসব রোবটকে যুদ্ধক্ষেত্রে নিয়োজিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তাদেরকে জবাবদিহির আওতায় আনা হবে? না কি এসব রোবট যারা তৈরি করেছে, তাদের জবাবদিহি করতে হবে? না, ব্যাপারগুলোই স্পষ্ট নয়।
তাছাড়া, আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত কোনো সংজ্ঞাই নেই এই কিলার রোবট এর। যদিও অধিকাংশ দেশ এবিষয়ে একমত যে, এ ক্ষেত্রে সিস্টেমটা মানুষের হস্তক্ষেপ ছাড়াই লক্ষ্যবস্তু শনাক্ত করে, নির্বাচন করে, হামলা করতে পারবে। আর সুবিধা? কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই নির্ভর স্বায়ত্তশাসিত অস্ত্র কিছু ব্যাপারে যুদ্ধক্ষেত্রে বাড়তি সুবিধা দেবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই যেমন, যুদ্ধক্ষেত্রে এসব অস্ত্র ব্যবহারের ফলে সেনা কমানো যাবে, এতে তাঁদের জীবন বাঁচবে যারা এসব অস্ত্রের সমর্থনে কথা বলছেন, তাঁদের যুক্তি এসব জটিল ও সূক্ষ্ম অস্ত্রের সাহায্যে মনুষ্য সৃষ্ট ত্রুটি ও পক্ষপাতিত্ব এড়ানো সম্ভব হবে লক্ষ্যমাত্রায় আরও নিখুঁতভাবে আঘাত হানা গেলে অনিচ্ছাকৃত মৃত্যু এড়ানোও সম্ভব হবে। কিন্তু, বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, যুদ্ধক্ষেত্র পুরোপুরি স্বয়ংক্রিয় রোবটদের দখলে চলে যাওয়ার আগেই এদের থামানো উচিত। তা নাহলে কি হতে পারে? ভবিষ্যতের যুদ্ধগুলো আরও বিভীষিকাময় হয়ে ওঠার চান্স বাড়ছে পাল্লা দিয়ে। ক্ষয়ক্ষতি কমানোর নামে ধ্বংসের ব্যাপকতা বাড়ছে। মানব জীবন হুমকির মুখে পড়বে, পড়ছে। দিনে দিনে এই পরিস্থিতি হাতের বাইরে বেরিয়ে যাওয়ার চান্স থাকছে।
যদিও, গবেষকদের একাংশের মতে একটা সম্ভাব্য ক্ষমতা সম্পর্কে কথা হচ্ছে, একটা ফাংশনের কথা হচ্ছে, যা বিভিন্ন ধরনের অস্ত্র ব্যবস্থায় ব্যবহার করা যেতে পারে, যা বিভিন্ন আকারে ব্যবহৃত হতে পারে এবং বিভিন্ন ধরনের মিশনে ব্যবহার করা যেতে পারে। সেক্ষেত্রে যদি নিষিদ্ধ করতে হয়, তবে ঠিক সেই ধরনের অস্ত্র নির্দিষ্ট করে শনাক্ত করতে হবে, যা নিয়ে সমস্যা তৈরি হচ্ছে। সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞার পরিবর্তে, দ্বি-স্তরের নীতি প্রণয়ন করা গেলে সেটা অবশ্যই বাস্তবসম্মত সমাধান হতে পারে। এখন কোটি টাকার প্রশ্ন হলো, সেই নীতিগুলো কেমন হবে, যা কিলার রোবট এর সম্ভাব্য ক্ষতি কমাতে বা বন্ধ করতে পারে?
আবার, মাথায় রাখতে হবে দেশগুলোকে সেই নীতিমালার সঙ্গে একমতও হতে হবে। যদিও, এসব চিন্তা ভাবনা দূরে সরিয়ে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে যুক্তরাষ্ট্র, চীন, যুক্তরাজ্য, ভারত, ইরান, ইসরাইল, দক্ষিণ কোরিয়া, রাশিয়া ও তুরস্ক এ ধরনের প্রাণঘাতী অস্ত্রের উন্নয়নে বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগ করছে। লিবিয়া থেকে শুরু করে রাশিয়াই উক্রেন যুদ্ধ, সবক্ষেত্রেই লিথ্যাল অটোনোমাস ওয়েপনস সিস্টেম ব্যবহৃত হচ্ছে। রিস্ক বাড়ছে।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম