।। প্রথম কলকাতা ।।
FIR: আপনার সাথে কোন ভুল কাজ হয়েছে কিংবা চোখের সামনেই ঘটে গেছে জলজ্যান্ত গুরুতর অপরাধ। আপনি সেই বিষয়ে থানায় এফআইআর করতে চান, কিন্তু এফআইআর জানানোর আগে কয়েকটি বিষয় না জানলে মুশকিলে পড়বেন। আপনারই FIR থানায় নাও নেওয়া হতে পারে। আপনার ভুলে গন্ডগোল হয়ে যেতে পারে সবকিছু। এফআইআর করার সময় আপনাকে কোন টাকা দিতে হচ্ছে না তো? আপনি এফআইআর এর একটা কপি পাচ্ছেন তো? যদি এই বিষয়গুলি না জেনে থাকেন তাহলে এফআইআর সংক্রান্ত খুঁটিনাটি তথ্য জেনে রাখুন, বিপদে কাজে আসবে।
বর্তমান সমাজে বেঁচে থাকার জন্য আইনগত বিষয়গুলি ভালোভাবে জেনে নেওয়া প্রয়োজন। সেখানে নিজের অধিকার আপনি সহজে প্রয়োগ করতে পারবেন। সাধারণত থানায় লিখিত রূপে কোন অপরাধের ব্যাপারে যখন তথ্য দায়ের করবেন তাকে বলা হয় এফআইআর। অনেকেই আছেন ফোন করে অপরাধের ব্যাপারে তথ্য দেন কিন্তু থানায় এসে সেই অভিযোগ লিখিতভাবে করা উচিত, না হলে সেটা এফআইআর হবে না।
- এফআইআর দায়ের করার অর্থ হল আইনের পরিপন্থী কোন ঘটনা ঘটার বিষয়ে পুলিশের কাছে অভিযোগ করা। এক্ষেত্রে ভুক্তভোগী বা তার পক্ষে যে কেউ পুলিশের কাছে এফআইআর করতে পারেন। পুলিশ এফআইআর প্রত্যাখ্যান করতে পারেন না। এফআইআর অর্থাৎ ফার্স্ট ইনফরমেশন রিপোর্ট যেটি থানায় লিখিতভাবে দায়ের করা হয়। ফৌজদারি কার্যবিধি ১৯৭৩ এর ধারায় ১৫৪ এর অধীনে এফআইআর এর বিষয়টি বিশদে বর্ণনা করা হয়েছে। যেখানে বলা হয়েছে, এফআইআর করার জন্য সঠিকভাবে জানাতে হবে
- অভিযোগকারীর নাম ও ঠিকানা।
- ঘটনা যেখানে ঘটেছে তার তারিখ, সময় এবং অবস্থান।
- ঘটনাটি সত্যতা এবং সেই ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের নাম এবং বিবরণ।
এই তথ্যগুলি দেওয়ার পর কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ রয়েছে। একবার তথ্য দেওয়া হলে পুলিশ অফিসারের দায়িত্ব তা লিখে রাখা। দ্বিতীয়ত অভিযোগ লেখার পর ওই পুলিশ অফিসারকে আপনাকে সেই কথাটা শোনাতে হবে। তৃতীয়ত অভিযোগে আপনার দেওয়া বিষয়টি যাচাই করার পর এটি যথাযথভাবে স্বাক্ষর করা উচিত বা যারা পড়তে পারেন না, লিখতে পারেন না তাদের বুড়ো আঙুলের ছাপ দিতে হবে।
আমলযোগ্য অপরাধের ক্ষেত্রে পুলিশ অফিসার ফৌজদারি কার্যবিধির ১৯৭৩ ধারা ১৫৪(৩) অধীনে আঞ্চলিক এক্তিয়ারের অধীনে আসা অভিযোগটি লিখতে অস্বীকার করেন তাহলে অভিযোগকারী বা তথ্য দাতা পুলিশ সুপার বা উচ্চতর কর্মকর্তার কাছে যেতে পারেন। যদি দেখেন এতেও কোন প্রতিকার হচ্ছেন না তাহলে আঞ্চলিক এখতিয়ারে থাকা জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে একটি ব্যক্তিগত অভিযোগ দায়ের করতে পারেন। যদি দেখেন পুলিশ আধিকারিকরা এফআইআর নথিভুক্ত করছেন না বা নিরপেক্ষভাবে কাজ করছেন না তাহলে বিষয়টি নিয়ে অভিযোগ দায়ের করতে পারেন রাজ্য মানবাধিকার কমিশন বা জাতীয় মানবাধিকার কমিশনে।
যদি এফআইআর নথিভুক্ত হয় তাহলে বিষয়টি ওই এলাকার পুলিশের এখতিয়ারের অধীনে আসে এবং পুলিশ তদন্ত করার ক্ষমতা রাখে। পুলিশ অফিসার বিষয়টি বিবেচনা করেন, যে ওই মামলার তদন্তের প্রয়োজনীয়তা কতটা। তদন্তের সময় কোন ব্যক্তির দেওয়া কোন বিবৃতিতে স্বাক্ষর করা যাবে না। তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়ার পর ম্যাজিস্ট্রেট এফআইআর এর ফলাফলে সন্তুষ্ট হলে আদালতের সমন জারি হবে।
আমি যখনই এফআইআর করবেন বা থানায় রিপোর্ট লেখাবেন দেখবেন আপনার সঙ্গে ঘটা অপরাধের যাবতীয় তথ্য পুলিশ জানতে চাইছে, আর সেই তথ্য লেখা হয় থানার ডেইলি ডায়েরিতে। যাকে বলা হয় রোজনামচা। কিন্তু এটি এফআইআর নয়। ওই রোজনামচায় ওঠা মানে আপনার অপরাধের তদন্ত নাও হতে পারে, তাই এফআইআর করা অবশ্যই জরুরি। শুধু তাই নয় এফআইআর করার পর একটা কপি প্রমাণ হিসেবে নিজের কাছে রেখে দেবেন। এই কপি নেওয়া আপনার আইনত অধিকার। যদি দেখেন এফআইআর করার পরেও পুলিশ সেভাবে কোন পদক্ষেপ নিচ্ছে না তাহলে আপনি সংশ্লিষ্ট আধিকারিকের বিরুদ্ধে অভিযোগও জানাতে পারেন। জেনে রাখা ভালো, এফআইআর করার জন্য কোন টাকা লাগে না। আপনি বিনামূল্যে পুলিশের কাছে FIR করতে পারবেন। যদি আপনার কাছে পুলিশ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কোনরকম টাকা চায় আপনি তার বিরুদ্ধে অভিযোগ জানাতে পারেন।
পুলিশের কাছে এফআইআর লেখানোর আগে অবশ্যই কয়েকটি বিষয় মাথায় রাখুন। পুলিশকে ডাইরেক্ট অ্যাপ্রোচ করার আগে অবশ্যই ১১২ নম্বরে ফোন করবেন। কারণ প্রত্যেক কল পুলিশ কন্ট্রোল রুমে রেকর্ড হয়। যদি পুলিশ কোন অ্যাকশন না নেয় তাহলে সেই ডিটেলস কোর্ট পর্যন্ত পাঠানো যায়। পুলিশের কাছে আপনার কমপ্লেন যে কোনো ভাষায় লিখিত হিসেবে দিতে পারবেন। পুলিশের ডিউটি সেটি রেজিস্টার করা। আপনি যদি লিখতে না পারেন তাহলে মৌখিকভাবে পুলিশকে বলতে পারবেন। কোন অপরাধ, কোথায় ঘটেছে কিংবা কিভাবে ঘটেছে। পুলিশের দায়িত্ব সেই বিবরণ রেজিস্টারে এন্ট্রি করা। ১৫৪ সেকশন অনুযায়ী পুলিশের ডিউটি এফআইআর এর একটি কপি বিনামূল্যে আপনাকে দেবে। যদি এক্ষেত্রে পুলিশ আপনার কাছে পয়সা চায় তাহলে ওই পুলিশের নাম, ডেজিগনেশন এবং পুলিশ স্টেশনের নাম নোট করে আপনি অফিসারদের কাছে অভিযোগ জানাতে পারেন। যদি দেখেন কগনিজেবেল অফেন্স হয়েছে অথচ পুলিশ রেজিস্টার করছে না তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ১৬৬(এ) অধীনে অভিযোগ জানানোর অধিকার রয়েছে।
জিরো FIR
অনেকে মনে আবার প্রশ্ন ঘুরপাক খায়, জিরো এফআইআর নিয়ে। একটা সময় ছিল যখন এক জায়গায় ঘটা অপরাধের অভিযোগ অন্য কোন থানায় দায়ের করতে গেলে বেশ ভোগান্তিতে পড়তে হত। এই জিরো এফআইআর আসার পর মানুষ স্বস্তি পেয়েছে। ঘটনা যে জায়গার হোক না কেন যে কোনো পুলিশ স্টেশনে আপনি এফআইআর দায়ের করতে পারবেন। যাকে বলা হয় জিরো এফআইআর। পরে সংশ্লিষ্ট থানায় সেই এফআইআর এর কপি পাঠিয়ে দেওয়া হয়। জিরো এফআইআর চালু হবার পর থেকে বহু মানুষ তার চুরি যাওয়া জিনিস খুঁজে পেয়েছেন। আসলে আগে যে থানায় এফআইআর হত সেখানকার পুলিশ বিষয়টি তদন্ত করত। অভিযোগকারীর বয়ান অনুযায়ী যদি ভিন রাজ্যের কোন থানা এলাকায় জিনিস হারিয়ে যেত সেক্ষেত্রে সেখানকার পুলিশের সাহায্য নেওয়া হত। কিন্তু এখন সেটা হয় না। এফআইআর যে থানাতেই হোক না কেন তার একটা কপি যে থানা এলাকায় জিনিস হারিয়ে গিয়েছে সেখানে পাঠিয়ে দেখা হয়। তারই পোশাকি নাম জিরো এফআইআর।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম