।। প্রথম কলকাতা ।।
Aarey Forest : চারিদিকে কংক্রিটের জঙ্গল, আর তার মাঝে এক টুকরো স্বর্গরাজ্য। যাকে বাঁচাতে বছরের পর বছর লড়াই চালাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। এই দৃশ্য মনে করিয়ে দেয় চিপকো আন্দোলনের কথা। তবে সমস্যা হল বিশ্ব নগরায়নের প্রতিযোগিতায় এই স্বর্গরাজ্য কোথাও যেন অপ্রয়োজনীয় হয়ে পড়েছে। এটি রয়েছে ভারতের মেগাসিটি মুম্বাইতে। যাকে সবাই চেনে আরে জঙ্গল নামে। এটি আয়তনে নিউইয়র্কের সেন্ট্রাল পার্কের প্রায় চার গুণ। এখানে রয়েছে আদিবাসী সম্প্রদায়ের বাড়ি। এই বনে চিতা বাঘের পাশাপাশি রয়েছে প্রায় ৩০০ প্রজাতির নানান প্রাণী।
বিতর্কের সূত্রপাত
আরে জঙ্গলকে কেন্দ্র করে তুমুল বিতর্ক শুরু হয়েছিল ২০১৯ সালে, যা আজও পর্যন্ত অব্যাহত রয়েছে। তৎকালীন সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মানুষের প্রয়োজন মেটাতে এই স্থানে জঙ্গল পরিষ্কার করে তৈরি হবে মেট্রোরেলের ডিপো। কিন্তু এই জঙ্গলের গাছ যাদের কাছে মায়ের মত তারা তীব্র বিরোধিতা করেন। আন্দোলন চারিদিকে দাবানলের মতো ছড়িয়ে যায়। মুম্বাই মেট্রোর জন্য শেড তৈরি করতে প্রায় আড়াই হাজার মত গাছ কাটা হতে পারে। এই বিতর্কে জল গড়ায় বোম্বে হাইকোর্টে। সেই সময় পরিবেশবিদ থেকে শুরু করে সেলিব্রেটিরা বিষয়টির বিরোধিতা করেছিলেন। গাছ কাটার প্রতিবাদে রাস্তায় নেমেছিল প্রচুর মানুষ। প্রতিবাদ রুখতে থেকে পুলিশ বহু আন্দোলনকারীকে আটক করে। পাশাপাশি কলোনির আশেপাশের এলাকায় ১৪৪ নম্বর ধারা জারি করা হয়। এসব করেও প্রতিবাদ দমানো যায়নি।
আরে কলোনি : মুম্বাইয়ের ফুসফুস
মুম্বাইয়ে মেট্রো সম্প্রসারণের কাজ চলছে। ২০১৪ সালে শুরু হওয়া মেট্রো প্রকল্পের প্রথম অংশ সম্পূর্ণ হলেও একটি পার্কিং শেডের প্রয়োজন ছিল। প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত সংস্থার সেই স্থান হিসেবে বেছে নেয় আরে কলোনিকে। প্রাকৃতিক সবুজই এই কলোনির পরিচয়। মেট্রো রেল কর্পোরেশনের প্রস্তাব অনুযায়ী, প্রায় ২৭০২ টি গাছের মধ্যে ২২৩৮ টি গাছ কাটার কথা ছিল এবং বাকি গাছগুলি স্থানান্তর করা সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। যদিও গাছের সংখ্যা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। মুম্বাইয়ের মানুষ এই সিদ্ধান্তের কথা জানতে পেরে বিরোধিতা করতে শুরু করেন। কারণ আরে কলোনি শুধুমাত্র একটি জায়গা নয়, মুম্বাইয়ের মতো কংক্রিটের জঙ্গলের মাঝে এটি ফুসফুসের মতো । চরম ব্যস্ততা আর দূষণের মাঝে এখানে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলা যায়। গাছ কাঠের প্রতিবাদে চিপকো আন্দোলনের মতো বহু মানুষ এখানে জড়ো হয়েছিলেন। প্রসঙ্গ উঠে, গাছ কাটা শুধু পরিবেশের জন্যই বিপ্পজনক হবে না। উপরন্তু মুম্বাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাছে বন্যার মতো বিপদ হতে পারে। পরিবেশবিদরা যুক্তি দিয়েছিলেন, এই গাছ না থাকলে ওই এলাকায় বন্যার ঝুঁকি তৈরি হতে পারে। গাছের সংখ্যা নিয়েও নানান বিভ্রান্তি তৈরি হয়। সেই সময় দাঁড়িয়ে মুম্বাইয়ের প্রচুর সেলিব্রেটি গাছ কাটার বিরুদ্ধে টুইট করেছিলেন। স্বাভাবিকভাবেই বিষয়টি গণ আন্দোলনের রূপ নেয়। ভারতের স্বাধীনতার পর ১৯৫১ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী আরে কলোনির ভিত্তি স্থাপন করে নিজের হাতে গাছের চারা রোপণ করে। প্রধানমন্ত্রীর চারা রোপনের পর এই কাজের সঙ্গে যুক্ত হন বহু মানুষ। যার ফলে কয়েক বছরের মধ্যেই ওই এলাকায একটি বনে পরিণত হয়। ওই পুরো এলাকাটি প্রায় ৩১৬৬ একর জুড়ে বিস্তৃত। যার মধ্যে জঙ্গলের পরিমাণ প্রায় এক ১৮০০ একর। এখানে চিতাবাঘ ছাড়াও রয়েছে প্রায় ৩০০ প্রজাতির প্রাণী।
সম্প্রতি এই জঙ্গলকে বাঁচাতে পরিবেশ প্রেমীরা এবং স্থানীয় মানুষরা নতুন করে প্রতিবাদ তীব্র করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। গত আড়াই বছর বিষয়টি রীতিমত ধামাচাপা পড়েছিল। আবার নতুন করে মেট্রোর কাজ শুরু হয়েছে। মেট্রো রেল কর্পোরেশনের দাবি অনুযায়ী, মুম্বাইয়ের মানুষের জন্য আধুনিক পরিবহন ব্যবস্থার ক্ষেত্রে ওই মেট্রো শেডের প্রয়োজন রয়েছে। ২০১৯ সালে মুম্বাই ভিত্তিক কিছু পরিবেশবাদী সংগঠন বোম্বে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়ে ভারতীয় বন আইনের অধীনে আরে কলোনিকে সংরক্ষিত বনের মর্যাদা দেওয়ার দাবি করেছিল। তারা জানিয়েছিল, জীববৈচিত্র্য নিয়ে এমন খেলা করা যাবে না। এক্ষেত্রে মুম্বাইবাসীর স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রেও বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে। একদিকে আইনি লড়াই আর অপরদিকে প্রকৃতির প্রতি মানুষের ভালোবাসা, জয় কার হয় এবার শুধু তাই দেখার।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম