।। প্রথম কলকাতা ।।
Indian Railway: আরও মডার্ন টেকনোলজি, জার্মানি চীনের সঙ্গে টেক্কা দেবে ভারত। বন্দে ভারতের পর ভারতীয় রেলের আরও এক চোখ ধাঁধানো চমক। এবার ছুটবে পরিবেশবান্ধব হাইড্রোজেন ট্রেন। এই ট্রেন কেমন? হাইড্রোজেন ট্রেনের লাভ কি? কত বড়? এতো পরিমাণ হাইড্রোজেন কোথা থেকে আসবে? কবে থেকে পাওয়া যাবে এই পরিষেবা? কোন রুটে চলবে? কি বলছে রেল কর্তৃপক্ষ? দেশের প্রথম হাইড্রোজেন ট্রেন নিয়ে বড় আপডেট প্রথম কলকাতায় এরপর বুলেট ট্রেন ছুটবে। এ তো বিরাট প্রযুক্তিগত অগ্রগতি।
ভারতীয় রেল বলছে, দেশের প্রথম হাইড্রোজেন ট্রেন তৈরির কাজ চলছে দ্রুতগতিতে। কাজ যে অনেকদূর এগিয়েছে তা স্পষ্ট কারণ, চলতি আর্থিক বছরেই এর পরীক্ষা শুরু করার প্রাণপণ চেষ্টা চলছে। কিন্তু যে হাইড্রোজেন ট্রেন নিয়ে এতো আলোচনা, এতো আগ্রহ, সেটা সম্পর্কে কতটুকু জানেন? এক্ষেত্রে প্রথমেই একটা কথা মনে করিয়ে দিই, ভারতীয় রেল কিন্তু বারংবার দূষণ নিয়ন্ত্রণে নানা উদ্যোগ নিয়েছে। আর তাই, ডিজেল চালিত ইঞ্জিনের পরিবর্তে সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি পরিবেশবান্ধব হাইড্রোজেন ট্রেন চালানোর সিদ্ধান্ত এবার। কিন্তু কোথা থেকে আসবে এতো পরিমাণ হাইড্রোজেন? সমুদ্রের জল থেকে সহজেই তৈরি করা যাবে হাইড্রোজেন, যার জোগান অফুরন্ত। ট্রেনের ক্ষেত্রে হাইড্রোজেন প্রযুক্তির ব্যবহার অবশ্যই একটা নতুন বিষয়।
কিভাবে হাইড্রোজেনে চলবে ট্রেন?
হাইড্রেল যানবাহনগুলো হাইড্রোজেনের রাসায়নিক শক্তিকে চালনার জন্য ব্যবহার করা হয়। হাইড্রোজেন ট্যাঙ্ক থাকবে ট্রেনের সঙ্গে আর এর ছাদে থাকবে জ্বালানি কোষ। ইঞ্জিনে হাইড্রোজেন জ্বালিয়ে বা বৈদ্যুতিক মোটর চালানোর জন্য জ্বালানী কোষে অক্সিজেনের সঙ্গে হাইড্রোজেনের বিক্রিয়া করে শক্তি উৎপাদন করা হয়। এই শক্তিই সেই যানটিকে চলতে সাহায্য করে। এই ট্রেনের জ্বালানি পুনর্বার ব্যবহার করা যায়। অতিক্ষমতা সম্পন্ন ইওন ব্যাটারি থাকে।অতিরিক্ত জ্বালানি সংরক্ষণ করা হয় ব্যাটারিতে। হাইড্রোজেন ইঞ্জিন থেকে ধোঁয়ার পরিবর্তে বাষ্প আর জল বের হয় এতে, পরিবেশ দূষণ রোধ হয়, শব্দদূষণ নেই বললেই চলে।
প্রস্তাবিত হাইড্রোজেন অর্থনীতির একটি মূল বিষয় হল রেল। পরিবহনে জ্বালানির জন্য হাইড্রোজেনের ব্যাপক ব্যবহার। হাইড্রোজেন ট্রেনের ট্যাঙ্ক যদি সম্পূর্ণ ভরতি থাকে, তাহলে তা এক হাজার কিলোমিটার পর্যন্ত যাত্রা করতে পারে। তবে, হাইড্রোজেন ট্রেন অন্যান্য ট্রেনের মতো বড় হয় না। বগির সংখ্যা বড় জোর ছয় থেকে আটটা। ঘণ্টায় এই ট্রেন দৌড়বে সর্বাধিক ১৪০ কিলোমিটার বেগে। বিরাট বড় পরিকল্পনা নিয়েছে ভারতীয় রেল। কেন বললাম জার্মানি চীনের সঙ্গে টেক্কা দেবে ভারত?
বিশ্বের প্রথম হাইড্রোজেন ইঞ্জিনচালিত পরিবেশবান্ধব ট্রেন চালু হয় জার্মানিতে। কিন্তু জার্মানি কেন এই উদ্যোগ নিয়েছিল? ২০৫০ সালের মধ্যে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বাড়ানোর জন্যই এ প্রকল্পের আওতায় হাইড্রোজেন ট্রেন চালানো শুরু করে জার্মানি। হাইড্রোজেন ট্রেনের যাত্রা শুরুর সময় জার্মানি জানিয়েছিল, ‘ডিজেল ইঞ্জিনচালিত ট্রেনের চেয়ে হাইড্রোজেন ট্রেনের দাম অনেক বেশি হলেও পরিচালনা খরচ তুলনামূলকভাবে অনেক কম’। জার্মানিতে হাইড্রোজেন ট্রেন এর কারণে প্রতি বছর দেশটার প্রায় ১৬ লক্ষ লিটার ডিজেল বেঁচে যায় বলে জানা গিয়েছে। চীনেও চলে পরিবেশবান্ধব এই ‘গ্রীন ট্রেন’। এটাই, এখন পৃথিবীর নতুন পরিবহন প্রযুক্তি।
রেলওয়ে বোর্ডের চেয়ারম্যান অনিল কুমার লাহোতির মন্তব্য, হাইড্রোজেনে ট্রেন চালানো ভারতের জন্য একটা বিশাল “প্রযুক্তিগত অগ্রগতি” ভারতীয় রেল চাইছে আর্থিক বছরে দেশে হাইড্রোজেন ট্রেনের পরীক্ষা শুরু হোক”। জানা গেছে, এই ট্রেন কালকা-সিমলা রুটে প্রথম চালানো হতে পারে। তার আগে শোনপত থেকে ৮৯ কিমির রুটে ট্রায়াল রান হতে পারে। কিন্তু, শুধুমাত্র আধুনিক প্রযুক্তির ট্রেন তৈরি নয়, ট্র্যাক ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম নিয়েও ভারত কাজ করছে। যাতে সেমি হাইস্পিড ট্রেনগুলো সহজেই চলতে পারে।এককথায়, হলফ করে বলতে পারি প্রযুক্তিগত আরও উন্নয়ন আসছে ভারতীয় রেলে।
ইতালি, কানাডা, ডেনমার্ক, ব্রিটেন, নেদারল্যান্ডস যে হাইড্রোজেন ট্রেন চালু করার পরিকল্পনা করছে। তার আগেই হয়তো ভারতের উপর দিয়ে চলবে হাইড্রোজেন ট্রেন। এই, হাইড্রোজেন ট্রেন রাজ্যের বেশ কিছু জায়গায় পর্যটনমুখী করে চালালে প্রচুর মানুষ উপকৃত হবে। অতি দ্রুতগতিযুক্ত বুলেট ট্রেনেরও কাজ চলছে। আগামী কয়ক বছরের মধ্যেই দেশে বুলেট ট্রেনও চলতে শুরু করবে।