।। প্রথম কলকাতা ।।
Dawood Ibrahim History: আন্ডারওয়ার্ল্ড মাফিয়া ডন দাউদ ইব্রাহিম। মাথার দাম ২৫ লক্ষ টাকা। পুলিশের মোস্ট ওয়ান্টেড সন্ত্রাসী তালিকায় যার নাম। বাবা সৎ পুলিশ কনস্টেবল ছেলেকে শোধরাতে বেল্ট দিয়ে চাপকেছেন, মা শাসন করেছেন। বাবা নিজে তার দুই অপরাধী ছেলেকে টানতে টানতে মুম্বাই পুলিশের ক্রাইম ব্রাঞ্চের দপ্তরে নিয়ে গিয়েছিলেন। ছেলেরদের কুকীর্তি বলার সময় অঝোরে কাঁদতে কাঁদতে ক্ষমা চান। সৎ পুলিশ কনস্টেবলের সেই অবস্থা দেখে অফিসাররা তার অপরাধী ছেলেদের ক্ষমা করে দিয়েছিল। সেদিন অফিসাররা ভাবতেও পারেনি, এই দাউদ ইব্রাহিম পরবর্তীকালে ভারতের ত্রাস হয়ে দাঁড়াবে।
দাউদ ইব্রাহিমের বয়েস প্রায় ৬৭ বছর, কিন্তু তার মাথার দাম ২৫ লক্ষ টাকা। ভারতে একাধিক সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি তার কারণে বহু সাধারণ নাগরিকের প্রাণ গিয়েছে। সে ১৯৯৩ সাল থেকে মুম্বাইয়ের ধারাবাহিক বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে। একাধিক নাশকতায় যুক্ত দাউদ ইব্রাহিমের নাম। এমনকি জাল নোট সরবরাহের সঙ্গে জড়িয়ে দাউদের ডি কোম্পানি। অনেকেই মনে করেন দাউদ ইব্রাহিমের মাথার দাম ২৫ লক্ষ অনেকটা কম। এখন দাউদ ভারত থেকে বাঁচতে আস্তানা গেড়েছে পাকিস্তানে। করাচিতে যে দাউদ রয়েছে তা পাকিস্তান ২০২০ সালে স্বীকারও করে। দাউদ নাকি দিব্যি পাক সেনাবাহিনী আর প্রশাসনের শীর্ষকর্তাদের নাকের ডগাতেই বাস করছেন। তাকে কড়া নিরাপত্তায় রেখেছে পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই। যদিও এখন ইসলামাবাদ এই ঘটনা অস্বীকার করে। তারা বলে দাউদ নাকি পাকিস্তানে নেই।
শুধু ভারতের একের পর এক সন্ত্রাসের কর্মকাণ্ডে জড়িত রয়েছে তার আরো চার সাগরেদ। ডি কোম্পানিতে দাউদের পরেই রয়েছে শাকল শেখ ওরফে ছোটা শাকিল, ভারতে যার মাথার দাম কুড়ি লক্ষ টাকা। এছাড়াও রয়েছে দাউদের ভাই আনিস ইব্রাহিম ওরফে ছোটা আনিস। এবং এর দুই ঘনিষ্ঠ সঙ্গী জাভেদ চিকনা আর টাইগার মেমন। এই তিনজনের মাথার দাম প্রায় ১৫ লক্ষ টাকা।
সৎ পুলিশ কনস্টেবলের ছেলে দাউদ ইব্রাহিম ছোট থেকেই চুরি ছিনতাই করতে শুরু করেছিলেন। দাউদ ইব্রাহিমের বাবা যখন মুম্বাইয়ের ডোঙ্গরি এলাকায় পুলিশের এক কনস্টেবলের দায়িত্বে নিযুক্ত হন, তখন তাকে সবাই শ্রদ্ধা করতো। সততার কারণেই ইব্রাহিম কাস্কর হেড কনস্টেবলে পদোন্নতি পায়। ইব্রাহিম কাস্কর আর আমিনা কাস্করের ১২ জন সন্তানের মধ্যে দাউদ ছিল একেবারে অন্যরকম। ক্লাস সেভেন পর্যন্ত পড়ার পর স্কুল বন্ধ করে দেন। তখন থেকেই পাড়ার বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে মারপিট করতেন। পকেটমার, চুরি ছিনতাই এসব কাজে যুক্ত হয়। শুরুটা ছোটখাটো চুরি দিয়ে করলেও এখন তিনি ভারতের সবথেকে বড় মাফিয়া ডন। ভারত সরকার যাকে হন্যে হয়ে খুঁজছে। মাত্র কুড়ি বছর বয়সেই দাউদ ইব্রাহিম সেই সময়কার প্রতাপশালী পাঠান গ্যাংকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছিল। নিজের দলে তিনি নেন তার ভাই শাব্বিরকেও। সংবাদ মাধ্যমগুলি দাউদের এই গোষ্ঠীকে নাম দেয় ডি কোম্পানি। এই কোম্পানির সবথেকে প্রথম বড় অপরাধ ছিল ব্যাংক লুঠ। এদিকে ছেলের কীর্তি শুনে আকাশ থেকে পড়েন সৎ পুলিশ কনস্টেবল বাবা ইব্রাহিম কাস্কর। তিনি দুই অপরাধ ছেলেকে টানতে টানতে নিয়ে যান মুম্বাইয়ের ক্রাইম ব্রাঞ্চ এর কাছে। যদিও তার আগে তিনি কোমরে কনস্টেবল হিসেবে গর্বের সঙ্গে যে বেল্ট বাঁধতেন, সেটা দিয়ে দুই ছেলেকে বেধড়ক মেরেছেন। পুলিশ অফিসারদের কাছে সৎ বাবার কান্না দেখে দুই ছেলেকে ক্ষমা করে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ছেলেদের তিনি শোধরাতে পারেননি। তারপর একের পর এক তালিকায় জুড়তে থাকে বাবরি মসজিদ ঘটনা, মুম্বাই বিস্ফোরণ। দাউদের ভাই সাব্বিরকে খুন করে পাঠান গ্যাংয়ের সদস্যরা। সেই গ্যাংয়ের অন্যতম সদস্যকে খুন করে ভাইয়ের মৃত্যুর বদলা নেয় দাউদ। সময়টা তখন ১৯৮৬। ১৯৯২ এর পর থেকে দাউদের মূর্তি আরও ভয়ঙ্কর হতে শুরু করে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে তিনি নাকি পাকিস্তানের সাহায্যে চোরা পথে ভারতে বিস্ফোরক পদার্থ নিয়ে এসেছিল। আর তারপরেই ১৯৯৩ এর মুম্বাইতে সিরিয়াল বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে। যার কারণে সেই সময় মৃত্যু হয়েছিল প্রায় ২৫৭ জন মানুষের, আহত হয়েছিলেন ৭০০ জনের বেশি। যুক্তরাষ্ট্র অভিযোগ করে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে যে বিমান হামলা হয়েছিল সেখানেও নাকি দাউদের যোগ রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র বারংবার দাউদকে গ্লোবাল টেরোরিস্ট তকমা দিয়েছে। দাউদ প্রথমে নিজেকে বাঁচাতে পালিয়েছিল দুবাই। তারপর দুবাই, পাকিস্তান সহ মধ্যপ্রাচের বিভিন্ন দেশে বিনিয়োগ করতে শুরু করে। বলিউড ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিও তার টাকায় ফুলেফেঁপে উঠেছিল। শোনা যায় বলিউডের নামজাদা তারকা কিংবা পরিচালকের সঙ্গে দাউদের গোপন সম্পর্ক ছিল। ১৯৯৪ সালে তৎকালীন জনপ্রিয় এবং সমালোচিত নায়িকা মন্দাকিনীর সঙ্গে দাউদের সম্পর্ক নিয়ে নানান মুখরোচক গল্প শোনা যায়।
কিন্তু এই দাউদ ইব্রাহিম এখন কোথায়? একাংশের ধারণা পাকিস্তানেই সে এখন গা ঢাকা দিয়েছে। বলা হয় পাকিস্তানের আইএসআইয়ের সাহায্যে সে এখন করাচিতে রাজার হালে আছে। পাকিস্তান যদিও এই অভিযোগ স্বীকার করেনি। অপরদিকে দাউদকে যদি একবার খুঁজে পাওয়া যায় আর সে যদি মুখ খুলতে থাকে তাহলে বহু রাজনৈতিক নেতার সত্যিও বেরিয়ে আসতে পারে।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম