।। প্রথম কলকাতা ।।
Vikramaditya: ভারত মহাসাগরে চীনের (China) আধিপত্য কায়েমে বারংবার জোর ধাক্কা দিয়েছে বিক্রমাদিত্য (Vikramaditya)। ভারতের অন্যতম যুদ্ধ জাহাজ। প্রায় ২০ থেকে ২২ তলা উচুঁ। বিশাল এই যুদ্ধ জাহাজে সার দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে দুর্ধর্ষ মিগ ২৯ যুদ্ধবিমান। চীনকে বারংবার ওপেন চ্যালেঞ্জ জানিয়েছে বিক্রমাদিত্য। এটি রাশিয়ার (Russia) হলেও দেশীয় প্রযুক্তিতে দিনের পর দিন অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠছে। ভারত সরকার বিমানবাহী এই যুদ্ধ জাহাজকে শক্তিশালী করে নতুন রূপে ফিরিয়ে আনছে। শত্রুরা হাড়ে হাড়ে বুঝতে পারবে এর কামাল।
কর্নাটকের কারওয়ার বন্দরে এখন প্রচন্ড ব্যস্ততা। সেখানে প্রয়োজনীয় মেরামতি আর আধুনিকীকরণের মাধ্যমে নতুন রূপে সাজছে ভারতের বিমানবাহীর যুদ্ধ জাহাজ বিক্রমাদিত্য। ২০২৩ এই সমুদ্রে ভাসবে বিক্রমাদিত্য। তারপর শুরু হবে সি ট্রায়াল পর্ব। বেজিংয়ের ছলচাতুরি আর কাজে দেবে না। কারণ ভারতের হাতে রয়েছে শক্তিশালী যুদ্ধজাহাজ বিক্রমাদিত্য আর দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি আইএনএস বিক্রান্ত। আপাতত ভারত সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী বিক্রমাদিত্যে যোগ হতে পারে ফরাসি রাফাল এম কিংবা আমেরিকার এফ-১৮।
সমুদ্রের সুরক্ষায় বিশ্বের তাবড় তাবড় সামরিক শক্তিধর দেশগুলো নিজেদের মতো অস্ত্রের উন্নয়ন করেই চলেছে। গত কয়েক দশক ধরে সমুদ্রে অধিকার কায়েম করতে ভারতও সেই তালিকায় পিছিয়ে নেই। দিনের পর দিন ভারতের ভাণ্ডারে জমা হচ্ছে দুর্ধর্ষ যুদ্ধ বিমান, ক্রুজ মিসাইল, লেজার রাডার, হেলিকপ্টার থেকে শুরু করে প্রচুর বিমান, নৌ বাহিনী অফিসার, হাজার হাজার যোদ্ধা এবং সেনা। ভারতের কাছে থাকা বিক্রমাদিত্যকে সমুদ্র দানব বললে খুব একটা ভুল হবে না। বলা হয় ভারতের কাছে রয়েছে বিশ্বের চতুর্থ বৃহৎ রণতরী বিক্রমাদিত্য। ২০১৩ সালে এটি ভারতীয় সেনাবাহিনীতে যুক্ত হয়। রাশিয়া থেকে ভারত এটি কিনতে খরচ করেছিল প্রায় ২.৩৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। দিনের পর দিন দেশীয় প্রযুক্তিতে আধুনিক সংস্করণের কাজ চালিয়েছে ভারত। বিক্রমাদিত্যে সার দিয়ে একসঙ্গে দাঁড়াতে পারে প্রায় ৩৬ টি যুদ্ধবিমান। এর ওজন প্রায় ৪৪৫০০ টন। এখানে একসঙ্গে প্রায় ১১০ জন নেভি অফিসার কর্মরত থাকেন। নৌ সেনা নিযুক্ত রয়েছে প্রায় ১৫০০ জনের বেশি। প্রায় ২০ থেকে ২২ তলা সমান বিশাল আকৃতির বিক্রমাদিত্যের দৈর্ঘ্য প্রায় ২৮৪ মিটার। ভারতের সমুদ্রপবক্ষে ভারতের এই প্রধান যুদ্ধাস্ত্র ঘন্টায় প্রায় ৫৬ কিলোমিটার গতিতে ছুটতে পারে।
বিক্রমাদিত্যকে দূর থেকে দেখলে মনে হবে সমুদ্রের উপর ভাসছে একটা শহর বা বায়ু সেনা ঘাঁটি। যা শত্রুর বুকে কাঁপন ধরাতে যথেষ্ট। ভারত মহাসাগরে চীন আর পাকিস্তানের সঙ্গে মোকাবিলা করতে ভারতের অন্যতম হাতিয়ার বিক্রমাদিত্য। ২০১৩ সালে রুশ নির্মিত এই রণতরী ভারতীয় নৌসেনার অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পর ধীরে ধীরে আরো শক্তিশালী হয়েছে। এখানে রয়েছে মিগ ২৯ যুদ্ধবিমান, বারাক মিসাইলের মতো প্রচুর ঘাতক অস্ত্র। ১৯৮৭ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের নৌ সেনায় এই জাহাজ অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল ‘বাকু’ নামে। ১৯৯২ সালে রুশ সেনায় এটি অন্তর্ভুক্ত হয় ‘অ্যাডমিরাল গর্শকফ’ নামে। ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত এই যুদ্ধজাহাজ রাশিয়ায় কাজ করেছে। তারপর রাশিয়া নিজেই ভারতের কাছে এই জাহাজটি বিক্রি করার প্রস্তাব দেয়। এটি কেনায় ভারতের নৌ বাহিনী এবং এয়ারক্রাফট কেরিয়ারের শক্তি আরো দ্বিগুণ বেড়ে যায়। মাটি থেকে আকাশে হামলায় ভারত বিক্রমাদিত্য থেকে বারাক-৮ নামক একটি ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা করেছিল। যা লক্ষ্যবস্তুকে সফলভাবে টার্গেট করে। এছাড়াও বিক্রমাদিত্যে রয়েছে জিএস ১ এমএফ এবং জি এস সি ৩ নামের দুটি হাইড্রোলিক সিস্টেম। এর মধ্যে প্রথমটি হেলিকপ্টার ওঠা নামায় সাহায্য করে, আর দ্বিতীয়টি যুদ্ধবিমান ওঠা নামার কাজে সাহায্য করে। বিক্রমাদিত্য খুব সহজেই ৩০ টি মিগ যুদ্ধবিমানের পাশাপাশি ছটি হেলিকপ্টার রাখা যায়। বিশাল মহাসাগরের বুকে শত্রুকে রুখতে এর থেকে ভালো বিকল্প আর কিবা হতে পারে? সমুদ্রে ভাসমান এই বিশাল বিক্রমাদিত্যের মতো যুদ্ধ জাহাজের সম্পূর্ণ মেরামতি বেশ সময় সাপেক্ষ। সেই কারণে একে ড্রাই ডেকে এনে তলদেশের মেরামতির কাজ করা হয়। যখন ছোটখাটো মেরামতির কাজ থাকে তখন সমুদ্রে ভাসমান অবস্থায় ডুবুরি নামিয়ে সেই কাজ সম্ভব।
২০১৬ সালে একবার চীনকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে ভারতের দুই যুদ্ধ জাহাজ শ্রীলঙ্কায় নোংর করেছিল। তার মধ্যে একটি বিক্রমাদিত্য। সেই সময় ভারতকে অগ্রাহ্য করে চীনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়াতে গিয়েছিল শ্রীলঙ্কা। সেই সুযোগে চীন কলম্বোয় বন্দর বানাতে শুরু করে। সেখানে মোতায়েন করে চীনা নৌবহর। চীন চেয়েছিল এইভাবে ভারতকে চাপে রাখবে। কিন্তু সেই কারসাজি সফল হয়নি। চীনের লক্ষ্য ছিল, ওই বন্দরকে কাজে লাগিয়ে গোটা ভারত মহাসাগরের দাপিয়ে বেড়াবে। সেই খবর পেয়ে হাজির হয় ভারতের বিমানবাহী যুদ্ধ জাহাজ আইএনএস বিক্রমাদিত্য আর গাইডেড মিসাইল ডেস্ট্রয়ার আইএনএস মাইসোর । কলম্বোয় রণতরী পাঠিয়ে ভারত বেজিংকে খোলাখুলি চ্যালেঞ্জ ছুঁড়েছিল। ভারত বুঝিয়ে দিয়েছিল, ভারত মহাসাগরের চীনের একচ্ছত্র অধিপত্য কায়েমের স্বপ্ন কখনোই পূরণ হওয়ার নয়।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম