।। প্রথম কলকাতা ।।
YouTuber Amit Mondal: ইচ্ছাশক্তি থাকলে শারীরিক প্রতিবন্ধকতা আসলে যে কোন বাধা নয় তা প্রমাণ করতে পেরেছিলেন অমিত মণ্ডল (Amit Mondal)। ২২ বছরের এই তরুণ এক বুক আশা নিয়ে ভালো ভবিষ্যতের পথে এগিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার করেছিলেন। ছোটবেলা থেকেই নানা প্রতিকূল পরিস্থিতি তাকে ঘিরে ধরে। তাঁর মধ্যে থেকে অন্যতম বড় প্রতিকূলতা ছিল হাঁটা চলার সামর্থ্য না থাকা । কিন্তু তাতেও সাফল্যের সিঁড়ি চড়া তাঁর কাছে অসম্ভব ছিল না। ইউটিউবকে (YouTube) মাধ্যম করে অমিত তাঁর সারাদিনের ছোটখাটো নানান ঘটনা, অভিজ্ঞতা, বন্ধুদের সাথে কাটানো কিছু সময়, মা-বাবার সঙ্গে ভাগ করে নেওয়া কিছু মুহূর্ত নিয়ে ভ্লগিং শুরু করেন। তবে সেই সাফল্যের স্বাদ যখন সে পেতে শুরু করল তখনই পথ দুর্ঘটনা প্রাণ কেড়ে নিল (Died) বিশেষভাবে সক্ষম এই ইউটিউবারের (Youtube)।
দক্ষিণ ২৪ পরগনার (South 24 Pargana) ফ্রেজারগঞ্জের শিবপুর জংশন এলাকার বাসিন্দা ছিলেন অমিত মণ্ডল। মঙ্গলবার বিকেলে তিনি ফ্রেজারগঞ্জের মুন্সিহাট এলাকায় একটি পথ দুর্ঘটনার (Road Accident) কবলে পড়েন। পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ওই দুর্ঘটনায় গুরুতর জখম হন অমিত সহ মোট তিনজন। আহতদের উদ্ধার করে তড়িঘড়ি নিয়ে যাওয়া হয় স্থানীয় হাসপাতালে। সেখানে ভর্তি করা হয়, শুরু হয় চিকিৎসা। কিন্তু অমিতের শারীরিক অবস্থার ক্রমশ অবনতি ঘটে। আশঙ্কাজনক হয়ে ওঠে পরিস্থিতি। এই কারণেই তাকে দ্রুত এসএসকেএম হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। কিন্তু তাতেও শেষ রক্ষা হয়নি।
অমিতের মতো অমিতের বাবারও হাঁটাচলা করার ক্ষেত্রে সমস্যা রয়েছে (Physically handicapped)। পরিবারের একমাত্র মেরুদন্ড হলেন তাঁর মা। স্থানীয় পঞ্চায়েত এলাকায় থাকা বিভিন্ন বাজার এবং অন্যান্য জায়গায় ঘুরে ঘুরে অমিতের মা সাফাই কর্মী হিসেবে কাজ করতেন। তাকে সহযোগিতা করতেন অমিতের বাবাও। তা দিয়েই চলত অভাবের সংসার। কিন্তু অভাব অমিতের জন্য পিছুটান ছিল না। শারীরিক প্রতিবন্ধকতা এবং অভাবকে জয় করে তিনি কলেজে ভর্তি হন। বর্তমানে ছিলেন নামখানা কলেজের প্রথম বর্ষের পড়ুয়া।
‘মাই লাইফ অমিত মণ্ডল’ নামে তাঁর একটি youtube চ্যানেল রয়েছে। সেখানে সাবস্ক্রাইবারের সংখ্যা তিন লক্ষেরও বেশি। সেখানে নিজের কলেজ জীবন সম্পর্কে, বন্ধুদের সঙ্গে কাটানো কিছু ভালো মুহূর্ত এবং নিজের ভালোলাগা খারাপ লাগা সবটা মিশিয়ে দর্শকদের কাছে তুলে ধরতেন। খুব অল্পদিনের মধ্যেই তার ভ্লগ গুলি জনপ্রিয়তা পেতে শুরু করে। লক্ষ লক্ষ দর্শক তাঁর ভিডিও দেখে অনুপ্রাণিত হতেন। পছন্দ করতেন তাঁর পরিবার এবং বন্ধুদের। এইভাবে তাদের পরিবারের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি কিছুটা সামলে ওঠে। বর্তমানে বেশ স্বাচ্ছন্দ্যে দিন কাটাচ্ছিল মণ্ডল পরিবার।
কিন্তু তখনই এই ছন্দপতন। অমিতের এমন আকস্মিক মৃত্যু মেনে নিতে পারেননি বহু বাংলা ইউটিউবার। প্রীতম চৌধুরী (Pritam Chowdhury), বাংলার আরও এক জনপ্রিয় ইউটিউবার নিজের সোশ্যাল মিডিয়ায় অমিতকে নিয়ে একটি পোস্ট করেন। তিনি লেখেন, ‘তোর স্ট্রাগল টা আমরা দেখেছি। ছোট একটা জায়গা থেকে নিজেকে এত বড় জায়গায় নিয়ে যাওয়াটা ‘Not a Joke’। এই অবস্থায় তোর মা-বাবাকে সান্তনা দেওয়ার ক্ষমতা আমাদের নেই । আমার মনে হচ্ছে একটা দুঃস্বপ্নের মধ্যে আমরা রয়েছি, স্বপ্নটা ভেঙে গেলে সব ঠিক হয়ে যাবে’।
এছাড়াও গতকাল রাতে অমিতের মৃত্যুর খবর পাওয়ার পরেই বেশ কিছু ইউটিউবার নিজেদের ইউটিউব চ্যানেলে সেই সংক্রান্ত ভিডিও পোস্ট করেন। প্রত্যেকের চোখের সামনে একটু একটু করে নিজের কাজের মাধ্যমে একটা ভালো জীবন চিনতে শুরু করেছিলেন অমিত। ছোটবেলা থেকে যে সাধারণ জিনিসগুলোও কখনো হাতে ধরা দেয়নি, সেগুলির স্বাদ নতুন ভাবে নিচ্ছিলেন তিনি। সাফল্যের শিখরে উঠতে পথ এখনও অনেকটাই বাকি ছিল। কিন্তু সেই লড়ায়ে অনিচ্ছা সত্ত্বেও থামতে হল অমিতকে।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম