।। প্রথম কলকাতা ।।
Earthquake Forecasting: ভূমিকম্পের (Earthquake) পূর্বাভাস (Forecasting) দেওয়া আদৌ কি সম্ভব? ভূমিকম্প আসার আগে ঠিক কি প্রতিক্রিয়া জানায় পশু পাখিরা? যদি সত্যি ভূমিকম্পের পূর্বাভাস পাওয়া যেত তাহলে আজ মৃত্যুপুরীতে পরিণত হত না তুরস্ক (Turkey)। ভূমিকম্পের পূর্বাভাস নিয়ে নানা মুনির নানান মত। এখনো পর্যন্ত বিজ্ঞানীরা শক্তপোক্ত কোনো পদ্ধতি সামনে আনতে পারেননি। আসলে প্রকৃতির লীলার কাছে বিজ্ঞান মাঝে মাঝে তুচ্ছ হয়ে যায়। তবে ভূমিকম্পের এমন কিছু লক্ষণ রয়েছে যা দেখলে বোঝা যেতে পারে সামনে কোন ভয়ঙ্কর বিপদ আসতে পারে।
তুরস্ক আর সিরিয়ার আকাশে এখন শুধু মৃত্যুর হাহাকার। প্রায় এক সপ্তাহ হয়ে গিয়েছে। উদ্ধার কাজ এখনো অব্যাহত। জাতিসংঘ আশঙ্কা করছে, এই ঘটনায় মৃত্যু হতে পারে প্রায় ৫০ হাজারের বেশি। ভূমিকম্পের আশঙ্কায় রয়েছে ভারত সহ প্রতিবেশী দেশগুলিও। ১৩ই ফেব্রুয়ারি ভারতের সিকিম সাত সকালে ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে। তার আগে ভূমিকম্প হয়েছে অসমে। যদিও ভারতে এই ভূকম্পন গুলির মাত্রা রিখটার স্কেলে কম থাকায় প্রাণহানি বা ক্ষয়ক্ষতি সেভাবে হয়নি। সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়া থেকে শুরু করে বিশ্বের নানান গণমাধ্যমে একটি নাম সামনে এসেছে, তা হল হুগারবিট। নেদারল্যান্ডসের এই অখ্যাত ভূতত্ত্ববিদ তুরস্কের ভূমিকম্পের তিন দিন আগে একটি টুইট করেছিলেন। যেখানে তিনি বলেছিলেন তুরস্কের মধ্য দক্ষিণাঞ্চল, সিরিয়ার জর্ডান ও লেবাননে ৭.৫ মাত্রার ভূমিকম্প হবে। তুরস্কে ভয়াবহ ভূমিকম্প হতেই গণমাধ্যমের আলোচনায় চলে আসে ওই ব্যাক্তির নাম। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, আন্দাজে বলা কথা হঠাৎ করে বাস্তবে ফললে অনেকেই বাহাদুরি ফলাতে ভালোবাসেন, কিন্তু সেক্ষেত্রে ঠিক কতটা যৌক্তিকতা রয়েছে তা নিয়ে নানান প্রশ্ন রয়েছে।
এক কথায় বলা যেতে পারে, ভূমিকম্পের পূর্বাভাস দেওয়া খুবই জটিল ব্যাপার। যদি সত্যি ভূমিকম্পের পূর্বাভাস দেওয়া যেত তাহলে পৃথিবীর উন্নত দেশগুলো অনেক আগে থেকেই তা জানতে পারত। মাইক্রোসিসমিসিটি আর ফোকাল ম্যাকানিজম গবেষণার মাধ্যমে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা বা সম্ভাব্য কিছু পূর্বাভাস জানা যায়, যার ফলে প্রাণে বাঁচতে পারে জীবজগৎ। তবে তৎক্ষণাৎ ফলাফল পাওয়া খুব মুশকিল। তুরস্কের মানুষ ভূমিকম্পের সঙ্গে বেশ পরিচিত। মূলত ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে তুরস্ক এতটা ভূমিকম্পপ্রবণ। এর পিছনে রয়েছে টেকটোনিক প্লেট। তুরস্কের মূল অবস্থান আনাতোলিয়ান টেকটোনিক প্লেটের ওপর। এছাড়াও দেশটির কিছুটা অংশ রয়েছে ইউরেশিয়ান আর আফ্রিকান টেকটোনিক প্লেটের উপর। পাশাপাশি যুক্ত হয়েছে অ্যারাবিয়ান প্লেট। সব থেকে ভয়ের হল, টেকটোনিক প্লেটের সংযোগস্থল উত্তর আনাতোলিয়ান ফল্ট লাইন। যেখানে রয়েছে তুরস্কের উত্তরের বিস্তীর্ণ অঞ্চল। যত বার তুরস্ক ভয়াবহ ভূমিকম্পের মুখোমুখি হয়েছে তার পিছনে অন্যতম কারণ হল এই ফল্ট লাইনের বিচ্যুতি।
তুরস্কের ভূমিকম্পের পর একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়া তুমুল ভাইরাল হয় যেখানে দেখা যায় ভূমিকম্পের কিছুক্ষণ আগে অস্বাভাবিক আচরণ করছিল পাখিরা। কথিত আছে পাখি কিংবা পশুরা নাকি ভূমিকম্পের আগাম পূর্বাভাস পেয়ে থাকে। তাই তারা সেই জায়গা ত্যাগ করে অন্যত্র চলে যাওয়ার চেষ্টা করে। ভিডিওটি অনুযায়ী গত সোমবার ভোররাতে একটি গাছকে কেন্দ্র করে পাখিরা অস্বাভাবিক আচরণ করছিল, যে সময় তাদের ঘুমানোর কথা। ১৯৭৫ সালে চীনের হাইচেং নামক একটি প্রদেশ ৭.৩ মাত্রার ভূমিকম্পে কেঁপে উঠেছিল। কিন্তু সেই ঘটনায় একজনেরও মৃত্যু হয়নি। সেই সময় চীনের বিশেষজ্ঞরা পূর্বভাস দিয়েছিল যে কিছুদিন ধরেই নাকি ওই অঞ্চলে জলের স্তরের তারতম্য দেখা যায়। পাশাপাশি পশু পাখিদের মধ্যে এক অস্বাভাবিক আচরণ লক্ষ্য করা গিয়েছিল। তাই আগে থেকে সবাই সতর্ক হয়ে যায় প্রাচীনকালে জাপানি মাঝিরা মনে করতেন, সমুদ্রের মাঝখানে যদি কোন উড়ুক্কু মাছ দেখা যায় তাহলে নাকি কয়েকদিনের মধ্যেই বড়সড় প্রাকৃতিক বিপর্যয় আসতে পারে। ১৮৫৭ সালে ইতালিতে ভূমিকম্পের আগে ঝাঁকে ঝাঁকে পায়রা উড়তে শুরু করেছিল। পায়রা শূন্য হয়ে গিয়েছিল জেনোয়া শহর। আসলে তারা ভূমিকম্পের আগেই নিরাপদ স্থানে চলে যায়। এখানেও রয়েছে প্রশ্ন। পাখিরা কোন কারণে ভয় পেলে এই ধরনের অস্বাভাবিক আচরণ করতে থাকে। পশু পাখিদের ভূমিকম্পের আগে এই অস্বাভাবিক আচরণে পোক্ত কোন বৈজ্ঞানিক যুক্তি পাওয়া যায়নি। উন্নত প্রযুক্তির আশীর্বাদে বিজ্ঞানীরা অনেক জটিল কাজ হাতের মুঠোয় করে ফেলেছেন, কিন্তু ভূমিকম্পের পূর্বাভাস এখনো পর্যন্ত ১০০% পাওয়া কঠিন।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম