।। প্রথম কলকাতা ।।
Puja Roy: সূর্যের আলোয় বেড়ে ওঠা স্বপ্ন রাতের অন্ধকারে ক্রমশ আবছা হয়ে আসে। শিক্ষিকা হওয়ার ইচ্ছা। নীল আকাশে সূর্যের আলো যতক্ষণ আছে ততক্ষণ বই একদম মুখের কাছে এনে স্কুলের পড়া করতে হয়। হাতে বেশিক্ষণ সময় থাকে না। প্রাইভেট টিউশন আর স্কুল করে অধিকাংশ সময় কেটে যায়। হাতে পড়ে থাকে মাত্র কয়েক ঘন্টা। সেই সময় নিজের মতো করে পড়ার সময় পায় ছোট্ট পূজা। সূর্য ডুবলেই অন্ধকারে হারিয়ে যায় বইয়ের অক্ষর। ষষ্ঠ শ্রেণীর পূজা রায় পড়াশুনায় বেশ আগ্রহী। বড় হয়ে সে স্কুল শিক্ষিকা হতে চায়। কিন্তু তার স্বপ্নের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে শারীরিক প্রতিবন্ধকতা। ছোটো থেকেই সে চোখে কম দেখে। বিশেষ করে সূর্য ডুবলে বইয়ের পড়া একদমই পড়তে পারে না। চোখে দেখতে না পাওয়ার কারণে তার বাবা-মা তাকে ছেড়ে চলে গিয়েছে। পূজা বড় হয়েছে দাদু দিদার কাছে। দিন আনা দিন খাওয়ার সংসারে পূজার চোখের চিকিৎসা করতে হিমশিম খাচ্ছেন দাদু দিদা।
বনগাঁ (Bangaon) থানার অন্তর্গত চাঁদা পাঁচ মাইল এলাকায় থাকে ছোট্ট পূজা। সে চাঁদা ললিত মোহন উচ্চ বিদ্যালয় ষষ্ঠ শ্রেণীতে পড়াশোনা করছে। স্কুলের আর পাঁচটা সাধারণ শিশুর থেকে তার জীবন এক্কেবারে আলাদা। পড়াশোনার ইচ্ছা থাকলেও সূর্য ডোবার সাথে সাথে সে চোখে সেভাবে দেখতে পায় না। যার কারণে বই পড়তে খুব অসুবিধা হয়। অথচ পড়াশুনার প্রতি তার প্রবল ঝোঁক। তার মনে খুব কষ্ট, সে যদি চোখে দেখতে পেত। চোখে দেখতে না পাওয়ার কারণেই ছোটবেলায় পূজার বাবা-মা তাকে ছেড়ে চলে গিয়েছে। তারা বর্তমানে অন্যত্র নতুন করে বিয়ে করে সংসার শুরু করেছেন অথচ তাদের জীবনে ছোট্ট পূজার কোন জায়গা নেই। দিনের পর দিন ক্ষীণ হয়ে আসছে পূজার স্বপ্নগুলো।
পূজার দিদা অঞ্জনা সরকার জানান, ছোট থেকেই পূজার চোখের সমস্যা। যত দিন যাচ্ছে সমস্যা আরও বাড়ছে। চিকিৎসকরা বলেছেন যত তাড়াতাড়ি সম্ভব অপারেশনের প্রয়োজন। একটি চোখ অপারেশন করতে প্রায় ১ লক্ষ টাকার বেশি খরচ। পূজার মণি ধীরে ধীরে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। দ্রুত অপারেশন না করলে সমস্যা আরো বাড়বে। মেডিক্যাল কলেজে পূজার দাদু দিদা নাতনিকে নিয়ে কম ছোটাছুটি করেননি। কিন্তু পেরে উঠছেন না খরচের কাছে। দুবার ওটিতে গিয়েও পূজাকে ফেরত পাঠানো হয়। মেডিক্যাল কলেজে পূজার সঙ্গে আরেকটি শিশু ভর্তি ছিল। তার চোখ অপারেশন করে সুস্থ হয়ে গিয়েছে। কিন্তু এক্ষেত্রে যে টাকার প্রয়োজন, সেই টাকা খরচের সামর্থ্য পূজার দাদু দিদার নেই।
পূজার যখন এক থেকে দেড় বছর বয়স তখন তার বাবা-মা ছেড়ে চলে যায়। তারপর থেকে দাদু দিদা তাকে মানুষ করেছেন। পূজার পড়াশোনায় আগ্রহ দেখে পাশে দাঁড়িয়েছে স্কুলও। তাকে বিভিন্নভাবে স্কুল কর্তৃপক্ষ সাহায্য করে। এমনকি পূজার জন্য পরীক্ষার প্রশ্নপত্র আলাদাভাবে বোল্ড করে তৈরি করা হয়। স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সৌমেন চ্যাটার্জি জানান, পূজা পড়াশোনায় খুবই ভালো এবং পড়াশোনার প্রতি তার আগ্রহ রয়েছে। কিন্তু চোখ তার বড় সমস্যার কারণ। স্কুলের তরফ থেকেও চোখের অপারেশনের জন্য যতটুকু সম্ভব সাহায্য করা হচ্ছে। কিন্তু খরচের অঙ্কটা বিশাল। তিনি চান কোন সহৃদয় ব্যক্তি যেন পূজাকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসেন।
পূজার দাদু-দিদা, স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারা, এমনকি প্রতিবেশীরাও চান ছোট্ট পূজা যেন চোখে ভালোভাবে দেখতে পায়. তাকে যেন সূর্যের আলোর উপর নির্ভর করতে না হয়। খুব দ্রুত পূজার চোখের অপারেশনের প্রয়োজন তার জন্য দরকার প্রচুর অর্থ। সবাই চান পূজা যেন স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসে। তার চোখ দুটো যেন সম্পূর্ণ ঠিক হয়ে যায়। সে স্বপ্নের জাল বুনুক শুধুমাত্র দিনের রোদে নয়, রাতের অন্ধকারেও।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম