।। প্রথম কলকাতা ।।
Neptune: সৌরজগতের এই গ্রহতে হয় হিরের বৃষ্টি, এখানেই রয়েছে বরফের আগ্নেয়গিরি। শুনেই থতমত খেলেন তো! এই আগ্নেয়গিরি থেকে আগুন নয়, ঠিকরে বেরিয়ে আসে বরফের কণা আর নানান গ্যাস। সৌরজগৎকে নিয়ে রহস্যের শেষ নেই। বিজ্ঞানীরা নিত্য নতুন আবিষ্কার করেই চলেছেন। তবে বর্তমানে সৌর বিজ্ঞানীদের কাছে অন্যতম রহস্যজনক একটি গ্রহ হল নেপচুন। পৃথিবী থেকে এক্কেবারে আলাদা এই গ্রহ সম্পর্কে যতই জানবেন ততই আশ্চর্য হবেন। বরফের দৈত্যাকার এই গ্রহ নিয়ে বৈজ্ঞানিকদেরও মাথা ব্যথার শেষ নেই।
সূর্য থেকে অষ্টমতম স্থানে রয়েছে নেপচুন। এটি অন্ধকার, ঠান্ডা এবং সুপারসনিক বায়ু দ্বারা বেষ্টিত। নেপচুন পৃথিবীবাসীর কাছে ‘বরফ দৈত্য’ নামে পরিচিত। প্লুটো বামন গ্রহ হিসেবে পরিচিত হওয়ার পর, নেপচুন হল সূর্য থেকে সবথেকে দূরবর্তী গ্রহ। রোমান সমুদ্রের দেবতার নামে এই গ্রহের নামকরণ হয়েছে। মিথেন এবং হিলিয়াম গ্যাস বেশি থাকায় নেপচুনের রং নীল। এটি রয়েছে সূর্য থেকে প্রায় ৪৪৯.৭ কোটি কিলোমিটার দূরে। এর তাপমাত্রা -২১৪° সেলসিয়াস। এখানে সবকিছুই বরফের আকারে জমাট বেঁধে থাকবে এটাই স্বাভাবিক। পৃথিবীতে ২৪ ঘন্টায় একদিন হয়, কিন্তু নেপচুনে একদিন হয় ১৬ ঘন্টায়। সূর্যের চারিদিকে নেপচুনের পরিক্রমণ করতে সময় লাগে ১৬৫ বছর। যেটা পৃথিবীর সময় লাগে মাত্র ৩৬৫ দিন। পৃথিবী থেকে প্রায় চার গুণ বড় নেপচুন অজানা সব রহস্য ঘেরা। এখানে সূর্যের আলো পৌঁছাতে সময় লাগে, প্রায় ২৩৯ মিনিট। আশ্চর্যের বিষয় হল, নেপচুন সৌরজগতের এমন গ্রহ যাকে দেখে আবিষ্কার করা যায়নি। গাণিতিক হিসাব কষে জানা যায় যে সৌরজগতে নেপচুন নামক একটি গ্রহ রয়েছে। এখানে হাওয়ার গতিবেগ এতটাই যে এই গতিবেগে যদি পৃথিবীতে হাওয়া বয় তাহলে ভয়ঙ্কর প্রলয় কাণ্ড ঘটে যাবে। এখানে প্রতি ঘন্টায় ১২০০ মাইল গতিবেগে হাওয়া বয়। নেপচুনের রহস্য উদঘাটনে বিজ্ঞানীরা আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন। এখানেই রয়েছে বরফের আগ্নেয়গিরি অর্থাৎ ক্রয়ো ভলক্যানো। সাধারণত আগ্নেয়গিরি থেকে বেরিয়ে আসে আগ্নেয় গোলা কিংবা গলিত পাথর। কিন্তু বরফের আগ্নেয়গিরি থেকে ছিটকে বেরিয়ে আসে বরফের কণা এবং অ্যামোনিয়া মিথেন মিশ্রিত ঘন ধোঁয়া। আমাদের পৃথিবীতেও এই ধরনের বরফের আগ্নেয়গিরি রয়েছে। এটি রয়েছে একমাত্র লেক সুপিরিয়রের দক্ষিণ উপকূলে পরকুপাইন পার্বত্য এলাকায়।
যে হিরে পৃথিবীতে অপ্রতুল এবং মহার্ঘ্য, সেই হিরের বৃষ্টি হয় নেপচুনে। সাম্প্রতিক মহাকাশ গবেষণায় এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে। সাধারণত পৃথিবীতে হিরে এমন এক স্থানে রয়েছে যা সংগ্রহ করা বেশ কঠিন। অথচ নেপচুনে হিরে পাওয়া যায় পৃষ্ঠ এলাকায়। পৃথিবীর বেশিরভাগ প্রাকৃতিক হিরে পাওয়া যায় পৃথিবীপৃষ্ঠ থেকে একশ মাইলের বেশি গভীরে। কার্বন থেকে হিরেতে রূপান্তরিত হতে সময় লাগে প্রায় ১০০ থেকে ৩০৫ বছর। ক্যালিফোর্নিয়ার এসএলসি ন্যাশনাল অক্সিলারেটর গবেষণাগারে একদল গবেষক জানান, নেপচুন এবং ইউরেনাসে রীতিমত হিরের বৃষ্টি হয়। তারা গবেষণাগারে দেখান, কিভাবে হিরে গঠন হয় এবং তা কিভাবে বৃষ্টির আকারে ঝরে পড়ে। এই বিষয়টি নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরে গবেষণা চালায় জার্মান, ফ্রান্স এবং যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞানীরা। বৈজ্ঞানিকদের কাছে নেপচুনের মতো বরফের দৈত্যাকার গ্রহগুলি বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের বড়সড় ভাণ্ডার।
শুধু নেপচুন নয়, একে কেন্দ্র করে ঘুরতে থাকা উপগ্রহগুলিও বেশ ইন্টারেষ্টিং। যার মধ্যে অন্যতম হল ট্রাইটন। নেপচুনের মোট ১৪টি উপগ্রহের মধ্যে সব গুলির আকার প্রায় এবড়োখেবড়ো, কিন্তু একমাত্র ট্রাইটন আকৃতিতে গোলাকার। ট্রাইটন এত বিশাল যে এটি হাইড্রোস্ট্যাটিক ভারসাম্য অর্জন করেছে। একটি পাতলা বায়ুমন্ডল বজায় রাখার জন্য মেঘ আর কুয়াশা তৈরি করতে পারে। এটি নেপচুনের সবথেকে বড় উপগ্রহ। বহু বিজ্ঞানীর সন্দেহ করেন যে এই উপগ্রহটি আসলে একটি প্ল্যানেটয়েড যা বাইরের সৌরজগৎ থেকে এসেছে। যদিও এই বিষয়ে এখনও পর্যন্ত কোন যুক্তি সম্মত তথ্য পাওয়া যায়নি। বৈজ্ঞানিকরা এই নিয়ে শত চেষ্টা চালালেও একমাত্র ভয়েজার টু মিশন নেপচুনের পাশ দিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে। সম্প্রতি নেপচুন এবং ট্রাইটনের মিশন নাসাতে প্রস্তাব করা হয়েছিল। এই বিষয়ে চীনের বৈজ্ঞানিকরা রেডিও আইসোটোপ থার্মো নিউক্লিয়ার জেনারেটরের প্রস্তাব রাখে, যার ক্ষমতা হবে প্রায় ১০ কিলোওয়াট শক্তি। এই ধরনের পারমাণবিক ব্যাটারি নাসার কিউরিসিটি এবং পারসিভারেন্স রোভারেও ইন্সটল করা আছে। যা তাপ শক্তি এবং তেজস্ক্রিয় পদার্থের বিকিরণকে বিদ্যুতে রূপান্তরিত করতে সক্ষম।
চীনের প্ল্যানেটারি ডেকাডাল সার্ভে ২০২৩ এবং ২০৩২ সালে নেপচুনে একটি পারমাণবিক চালিত মিশন সহ বেশ কয়েকটি অনুসন্ধান মিশন প্রস্তাব করেছে। এছাড়াও নেপচুনের সবচেয়ে বড় উপগ্রহ ট্রাইটনের ওপর ল্যাডার অবতরণ করার পরিকল্পনাও এই প্রস্তাবে পেশ করা হয়। গবেষকরা এই দীর্ঘ মিশনের জন্য একটি পারমাণবিক ব্যাটারির প্রস্তাবও দিয়েছেন। আগামী দশকের জন্য সৌরজগতের জন্য আরও অনেক মিশন প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে ইউরেনাস অরবিটার অ্যান্ড প্রোব (ইউওপি) ইউরেনাসের বায়ুমণ্ডল, এর অভ্যন্তরীণ গঠন, চুম্বকমণ্ডল, উপগ্রহ এবং বলয় অধ্যয়ন করবে। এখনো পর্যন্ত এই প্রচারণা চালাচ্ছে চীনের জাতীয় মহাকাশ সংস্থা (CSNA), চাইনিজ অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্সেস (CAS), চায়না অ্যাটমিক এনার্জি অথরিটি, চায়না একাডেমি অফ স্পেস টেকনোলজিসহ বহু বিশ্ববিদ্যালয়। এই সম্পর্কিত তথ্য সায়েন্টিয়া সিনিকা টেকনোলজিকা জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। এবার শুধু অপেক্ষা নেপচুন সম্পর্কে অভূতপূর্ব আশ্চর্য কিছু জানার জন্য।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম