।। প্রথম কলকাতা ।।
Yakutsk: বাতাসে ফুটন্ত জল ছুঁড়ে দিলে মুহূর্তে তা বরফ হয়ে ঝরে পড়বে। এখানে অনায়াসে ঘরের মধ্যে মাছ মাংস রেখে দিতে পারেন। বিন্দুমাত্র নষ্ট হবে না। সামান্য আপেল দিয়ে আপনি পেরেক পুঁততে পারবেন। কারণ এখানে আপেল লোহার মতো শক্ত। হাতুড়ির প্রয়োজনই পড়বে না। মানুষ এই অঞ্চলে যখন রাস্তায় বেরোয় তখন চোখের পাতায় জমে যায় বরফ। একে বলা হয় ডিপ ফ্রিজের শহর। ফ্রিজের থেকেও এখানকার ঠান্ডা বেশ কয়েক গুণ বেশি। এই শহরের বাসিন্দারা জানালার বাইরে মাছ মাংস ঝুলিয়ে রাখেন। এখানকার স্বাভাবিক তাপমাত্রা জিরো ডিগ্রির নিচে। এটি রাশিয়ার (Russia) ইয়াকুৎস্ক (Yakutsk) শহর।
শীতের সময় রাশিয়ার ইয়াকুৎস্ক (Yakutsk) শহরের তাপমাত্রা পৌঁছায় মাইনাস ৬০ ডিগ্রি থেকে মাইনাস ৭০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। পৃথিবীর উত্তর গোলার্ধের এক্কেবারে উত্তর দিকে রয়েছে এই শহর। মস্কো থেকে প্রায় ৫০০০ কিলোমিটার দূরে সাইবেরিয়ার (Siberia) এই অঞ্চলকে বলা হয় ডিপ ফ্রিজ। এটি নাকি পৃথিবীর সব থেকে শীতলতম স্থান। এই অঞ্চলে অধিকাংশ সময় তাপমাত্রা থাকে – ৪০ ডিগ্রির কাছাকাছি। এখানকার বাজারে মাছ মাংস রাখার জন্য কোন ফ্রিজ ব্যবহার করা হয় না। এখানে অনায়াসে পেয়ে যাবেন ফ্রোজেন মাছ মাংস। এবার ভাবছেন এই ঠান্ডার মধ্যে মানুষ থাকে কীভাবে? আসলে এখানে মানুষ এই পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিয়েছে।
এত ঠান্ডা পড়ার কারণ
এই অঞ্চলে এত ঠান্ডা পড়ার পিছনে অন্যতম কারণ হল পার্মাফ্রস্ট (Permafrost)। এই পার্মাফ্রস্টের উপর তৈরি হয়েছে নুড়ি বালি দিয়ে, যা বরফের মতো জমাট বেঁধে থাকে। বছরের সব সময় একইভাবে এই ভাবে বরফ জমে থাকায় ঠান্ডা অত্যাধিক বেশি। এখানে কিন্তু গ্রীষ্মকাল আসে, তবে কয়েক মাসের জন্য।
শত্রু যখন ঠান্ডার মারণ কামড়
এখানকার মানুষ অত্যন্ত ঠান্ডা থেকে বাঁচতে ধাতব ফ্রেমের চশমা ব্যবহার করতে পারেন না। তারা প্লাস্টিকের ফ্রেমের চশমা ব্যবহার করেন। কারণ ধাতব ফ্রেমের চশমা ব্যবহার করলে তার সঙ্গে চামড়া উঠে আসতে পারে। পানীয় জল বরফ থেকে তৈরি করে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবহার করতে হয়। নাহলে পুনরায় জমে যায়। এখানে কোন ফসল চাষ করা যায় না। পুষ্টির অন্যতম উৎস ঘোড়ার মাংস আর মাছ। শীতে এই অঞ্চলের নদীগুলির সম্পূর্ণভাবে বরফ জমে যায়। বরফের নিচে বইতে থাকে শীতল জলের স্রোত। নদীর উপর জমে থাকা পাতলা বরফের আস্তরণের উপর স্থানীয়রা এক বিশেষ কায়দায় মাছ ধরেন। শীতের সময় এখানকার মানুষরা অত্যন্ত আনন্দ সহকারে সবাই মিলে মাছ ধরতে যান। তারপর সেই মাছ সবাই সমান ভাবে ভাগ করে নেন। রাতে ঘুমানোর সময় গাড়ির ইঞ্জিন চালিয়ে রাখতে হয়। কারণ ইঞ্জিন একবার বন্ধ করলে অত্যাধিক ঠান্ডায় গাড়ি নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
ঠান্ডায় খসে পড়ে শরীরের অঙ্গ!
তাপমাত্রা মাইনাস ৫৫ ডিগ্রির নিচে নামলে মানব দেহের টিস্যু মারাত্মক ক্ষতি হয় তখন রক্ত জমাট হয়ে শরীরের অংশ খসে পড়তে পারে। যাকে বলা হয় ফ্রর্স্ট বাইট। এটি স্থানীয়দের মারাত্মক একটি সমস্যা। প্রচন্ড ঠান্ডায় শরীরের অনাবৃত অংশে রক্ত জমাট বেঁধে সেই অংশ খসে পড়তে পারে। যেমন কানের লতি, আঙুলের মাথা, নাকের ডগা প্রভৃতি জায়গায় এই ফ্রস্ট বাইট হয়ে থাকে। এই অংশগুলির কোষগুলি পচে গিয়ে ধীরে ধীরে নষ্ট হয়ে যায়। একবার ফ্রস্ট বাইট হলে সেই অংশ যদি খসে না পড়ে, তাহলে তা দ্রুত সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। এই অঞ্চলের মানুষ ফ্রস্ট বাইটের সঙ্গে কিভাবে লড়াই করতে হয় তাও জানেন। যদিও ঠান্ডা নিয়ে স্থানীয়দের কোনো অভিযোগ নেই। কারণ ঠান্ডার মারণ কামড়কে তারা হার মানিয়েছেন ।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম