।। প্রথম কলকাতা ।।
কাঠ পাথর মাটি দিয়ে সাত তলা বাড়ি। কোনো দিন দেখেছেন? দূর থেকে মনে হবে কোন ঘুপচি কিংবা পাখির বাসা। এবড়ো খেবড়ো। পুরোটাই বানিয়েছেন একজন মানুষ। এই বাড়িটা তার কাছে প্রাণ। এই বাড়িতেই রয়েছে স্বস্তির নিঃশ্বাস। গত ১০ বছর ধরে তিলে তিলে নিজের হাতে যে বাড়িটা বানিয়েছেন সেখানেই থাকতে পারেন না। অপেক্ষা করেন প্রিয় মানুষগুলোর জন্য। কিন্তু তিনি জানেনই না, তারা আর আসবে না। তার স্বপ্নের ভালোবাসার বাড়ি এভাবেই খালি পড়ে থাকবে। তার সুখের সংসারের স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যাবে। এই নিঃসঙ্গ একা মানুষটা জীবন জানলে আপনার চোখের জল আসবে। প্রিয়জন না থাকার কষ্টটা ঠিক কতটা
চীনের শানডঙের লিঙ্কু কাউন্টিতে থাকে ৫৫ বছরের গরিব কৃষক গুয়াংঝৌ। মাথা আগের মতো কাজ করে না। অপেক্ষা করেন প্রিয় দুই ভাইয়ের জন্য। অপেক্ষা করতে করতে মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। কারোর কথা কানে নেন না। নিজে যা মনে করেন সেটাই ঠিক সম্বল বলতে ছোট্ট একটা চাকা লাগানো গাড়ি। সারাদিন কৃষিকাজ করেন আর সেই গাড়িতে করে রাস্তা থেকে কুড়িয়ে আনেন কাঠ পাথর মাটি। এভাবেই গত ১০ বছর ধরে তৈরি করেছেন স্বপ্নের বাড়ি। শুধুমাত্র ভিত তৈরি করেছেন পাঁচ বছর ধরে। তিন বছর ধরে তৈরি করেছেন বাড়ির এক তলা। বয়স হয়েছে তো কি হয়েছে, মনের জোর একটুও কমেনি। দু চোখ ভরা শুধু স্বপ্ন। ভাইয়েরা বহুদিন আগে কথা দিয়ে গিয়েছিল, তারা চাকরির খোঁজে যাচ্ছে। তারপর টাকা নিয়ে এসে একসাথে সবাই সুখের সংসার পাতবে। কিন্তু সেই ভাইয়েরা আর ফিরে আসেনি। শোনা যায়, তারা দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছে। প্রতিবেশীরা গুয়াংঝৌকে বারংবার বুঝিয়েছে ভাইয়েরা আর ফিরে আসবেনা। কিন্তু সেই কথা কে শোনে? পাত্তাই দেয়নি গুয়াংঝৌ।
তার সারাদিন কাটে বাড়ি তৈরি করতে। তার একমাত্র স্বপ্ন, জীবনের লক্ষ্য এই বাড়ি। আর কিচ্ছু না। দিন গুজরান হয় সরকারি ভর্তুকিতে। তবে থাকেন অন্য বাড়িতে। প্রশাসন একটা ঘর তৈরি করে দিয়েছে। প্রশাসনের তরফ থেকে তার কুঁড়ে সাত তলা বাড়িটা বারংবার ভেঙে ফেলার কথা বললেও ভাঙেনি।
গুয়াংঝৌ একা তার শূন্য সাত তলা বাড়ি আগলে বসে আছে। একটু একটু করে এই বাড়িয়ে চলেছে বাড়ির দৈর্ঘ্য। এই কাজেই সেই অক্লান্ত নিরলস। স্বপ্ন দেখে, তার ভাইয়েরা ঠিক ফিরে আসবে, তাদের বুকে জড়িয়ে ধরবে। তারা ফিরে এলে সুখের সংসার পাতবে। শেষ হবে দুঃখের গল্প। কিন্তু সবাই জানে গুয়াংঝৌয়ের এই দুঃখের গল্প শেষ হওয়ার নয়, শুধু বোঝে না গুয়াংঝৌ।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম