।। প্রথম কলকাতা ।।
গোটা গ্রাম রাত্রে নিশ্চিন্তে ঘুমায়। চোর ডাকাতের ভয় পায় না। কারণ একটাই। গ্রামে পাহারা দিচ্ছেন ঝলকানি মা। বসে রয়েছেন ১০৮টি মুণ্ড দিয়ে তৈরি বেদির উপর। দেখতে দেখতে এই মন্দিরের বয়স পেরিয়েছে প্রায় ৪০০ বছর। কিন্তু মর্যাদা রয়েছে এক্কেবারে অটুট। দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ পায়ে হেঁটে আসেন মন্দিরে। শুধু মায়ের আশীর্বাদ পাবেন বলে। গ্রাম জুড়ে রয়েছে আশ্চর্য এক কাহিনী। কালী পুজোর সময় ভক্তদের ভিড়ে গিজগিজ করে মন্দির চত্বর। নিষ্ঠার সাথে মনের ইচ্ছা জানান ভক্তরা। কোথায় রয়েছে এমন আশ্চর্য মন্দির? কেনই বা এই মন্দির ঘিরে এত রহস্য? বিস্তারিত জানতে পুরোটা পড়ুন।
একটা সময় নদীর তীরে গড়ে উঠেছিল ছোট্ট একটা গ্রাম। ভরা ছিল গাছ-গাছালিতে। তখনই এই গ্রামে তৈরি হয় মা কালী মন্দির। এখানে মা পরিচিত ঝলকানি মা রূপে। সিউড়ি থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে মল্লিকপুর গ্রাম। কথিত আছে, ঝলকানি মা এই গ্রামের পাহারাদার। গ্রামের সমস্ত বিপদে আপদে তিনি আশ্রয়স্থল। একটা সময় এখানে বাস করতেন জমিদার কানাইলাল সিংহ। তিনিই ৪০০ বছর আগে মন্দিরটি তৈরি করেছিলেন। মায়ের বেদি তৈরি হয় ১০৮ মুণ্ড দিয়ে। তার উপরই অধিষ্ঠান করেন দেবী। বেদির একটু আগেই রয়েছি একটা ফাঁকা পঞ্চমুণ্ডির আসন। মন্দিরের রীতি অনুযায়ী, পুরোহিত আসনে বসে মায়ের আরাধনা করেন। যদিও কে এই বেদিকে নির্মাণ করেছিলেন তা এখনো পর্যন্ত জানা যায়নি। তবে বিন্দু মাত্র চিড় ধরেনি ৪০০ বছরের রীতিতে। একইভাবে একই নিয়মে পূজিতা হয়ে আসছেন মা ঝলকানি।
আগে পুজোর পরে প্রতিমা বিসর্জন হত, কিন্তু ২০০০ সালে বন্যার পর সেই নিয়মই এসেছে একটু বদল। এবার আসা যাক সেই আশ্চর্যজনক কাহিনীতে। নদীর দুকূল ছাপিয়ে চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে বন্যার জল। কিন্তু বেঁচে যায় মল্লিকপুর গ্রাম। আশেপাশে বানভাসি ঘটলেও গ্রামে বিন্দুমাত্র জল ঢোকেনি। লোকের মুখে মুখে কথিত আছে, কয়েক বছর আগে নাকি মায়ের দেড়শ ভরি সোনার গয়না ডাকাতি করতে এসেছিল একদল দুষ্কৃতী। কিন্তু মন্দিরে পা দিতেই কাটে তাল। চারিদিকে সবকিছু অন্ধকার দেখতে থাকে। অবশেষে মুক্তি পেতে শরণাপন্ন হয় মায়ের।
বিশেষ থিতিতে ঝলকানি মায়ের পুজো হয় সারা রাত ধরে। নিশি পুজোর ঠিক পরে বলি দেয়া হয় শতাধিক ছাগ। এছাড়াও মোষ এবং মেষও বলি হয়। পাশাপাশি রয়েছে আখ বলি। গ্রামবাসীদের বিশ্বাস, শত শত বছর ধরে ঝলকানি মা আগলে রেখেছে মল্লিকপুর গ্রামকে। সব বিপদ থেকে রক্ষা করেন ভক্তদের।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম