।। প্রথম কলকাতা।।
Gangasagar Mela : ‘সব তীর্থ বারবার , গঙ্গাসাগর একবার’ বাংলার এই প্রবাদ বাক্যটি আপনিও কখনও না কখনও একবারের জন্য হলেও শুনে থাকবেন । কারণ এই প্রবাদ বাক্যটি ভীষণভাবে প্রচলিত। যত তীর্থস্থান রয়েছে তার মধ্যে গঙ্গা সাগরকে অন্যভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়ে থাকে। হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা মনে করেন অন্যান্য তীর্থস্থান গুলিতে আপনি চাইলেই যেতে পারবেন । কিন্তু গঙ্গাসাগরে চাইলেই যাওয়া যায় না । পশ্চিমবঙ্গের বুকে পৌষ মাসে এই গঙ্গাসাগরের মেলা ( Gangasagar Mela) আয়োজিত হয় । আর সেই মেলাতেই দূর-দূরান্ত থেকে এসে উপস্থিত হন পুণ্যার্থী থেকে শুরু করে ভক্ত এবং সাধুরা। চলুন জানা যাক কোন কোন দিক থেকে বিশেষ এই মেলা।
* দ্বিতীয় বৃহত্তম হিন্দু মেলা
কুম্ভমেলা হল হিন্দুদের সবথেকে বড় উৎসব বা মেলা । আর তারপরেই স্থান রয়েছে পশ্চিমবঙ্গের গঙ্গাসাগর মেলার। এটি পশ্চিমবঙ্গের হুগলি নদীর তীরে আয়োজিত হয়। গঙ্গাসাগর এবং বঙ্গোপসাগরের মিলন স্থলে এই মেলা হয় প্রত্যেক বছর । সাগরদ্বীপ নামক জায়গাটির দক্ষিণ প্রান্তে অবস্থিত কপিল মুনির আশ্রম । আর মকর সংক্রান্তিতে সেই আশ্রম সংলগ্ন এলাকাতেই গঙ্গাসাগরের মেলা বসে । পুণ্যার্থীদের বিশ্বাস , বাকি সব তীর্থক্ষেত্রে যাত্রা করে যতটা পুণ্য লাভ করা যায় তার থেকে অনেক দিন বেশি পুণ্য পাওয়া যায় শুধুমাত্র একবার গঙ্গাসাগরে তীর্থযাত্রা করলে।
* পৌরাণিক কাহিনী
তীর্থক্ষেত্রের সঙ্গে একটি পৌরাণিক কাহিনীর যোগসূত্র অবশ্যই থাকে । ব্যতিক্রম নয় গঙ্গাসাগরের মেলা। পৌরাণিক একটি কাহিনী অনুসারে , অযোধ্যার ঈক্ষাকু বংশীয় রাজা ছিলেন সগর। দেবরাজ ইন্দ্র সগর রাজার অশ্বমেধ যজ্ঞের ঘোড়া চুরি করে নিয়ে এসেছিলেন গঙ্গাসাগরে । আর তারপর কপিল মুনির আশ্রমের পেছনে সেই ঘোড়া গুলিকে লুকিয়ে রেখেছিলেন । সগর রাজার ৬০ হাজার পুত্র সেই ঘোড়া খুঁজতে গিয়ে কপিল মুনির রোষের মুখে পড়ে। রীতিমতো ভষ্মীভূত হয়ে যায় তাঁরা। তাদের আত্মাকে নরকে নিক্ষিপ্ত করা হয় । পরবর্তীতে বহু বছর পরে সগর রাজার পৌত্র ভগীরথ তাঁর পূর্বপুরুষদের আত্মাকে মুক্তি দেওয়ার উদ্দেশ্যে স্বর্গে গমন করেন।
কপিল মুনির নির্দেশ অনুযায়ী ভগীরথ গঙ্গাকে মর্ত্যে নিয়ে আসেন। আর গঙ্গা শিবের জটা থেকে বেরিয়ে সোজা পৃথিবীতে প্রবাহিত হয়ে এসে পৌঁছায় কপিল মুনির আশ্রমে এবং তারপর সেখান থেকে গঙ্গা মিলিত হয় সাগরে। ওই দিনটি ছিল মকর সংক্রান্তি। তাই হিন্দু ধর্মে মকর সংক্রান্তির দিনে গঙ্গাসাগরে স্নান করার বিশেষ মাহাত্ম্য রয়েছে। মানুষ পূর্ণ মনে বিশ্বাস করেন, বছরের এই দিনে গঙ্গা এবং সাগরের সঙ্গমে স্নান করলে তাদের জীবনের সমস্ত দুঃখ কষ্ট থেকে মুক্তি মিলবে। বলা হয় ১০০ টি যজ্ঞ করলে যতটা পুণ্য লাভ করতে পারে একজন মানুষ, সাগর সঙ্গমে একবার ডুব দিলে ঠিক ততটাই পুণ্য অর্জিত হতে পারে।
* অন্যান্য পৌরাণিক গাঁথা
এছাড়াও লোকমুখে প্রচলিত কাহিনী অনুসারে, গঙ্গাসাগরে কপিল মুনির একটি আশ্রম অবস্থিত ছিল। কিন্তু সেই আশ্রমটি একসময় হঠাৎ সমুদ্র গর্ভে হারিয়ে যায় । কথিত রয়েছে, ওই আশ্রমটি সারা বছর সাগরের নিচেই থাকতো । কিন্তু মকর সংক্রান্তির বিশেষ দিনে কপিল মুনির আশ্রম উঠে আসতো গঙ্গার উপরে । তারপর থেকেই মকর সংক্রান্তি বা পৌষ সংক্রান্তিতে লক্ষ লক্ষ মানুষের ভিড় জমতে থাকে এই সঙ্গমে। তাকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে বিরাট মেলা। যা বর্তমানে পরিচিত সাগর মেলা হিসেবে। যদিও এই কাহিনীর সত্যতা নিয়ে যথেষ্ট ধোঁয়াশা রয়ে গিয়েছে।
সাগরদ্বীপ যা হিন্দু ধর্মের মানুষের কাছে কপিলমুনির ধাম হিসেবে পরিচিত সেটি মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন । সুন্দরবনের শেষ প্রান্তের এই দ্বীপটিকে মূল ভূখণ্ড থেকে আলাদা করেছে মুড়িগঙ্গা নদী। কাকদ্বীপের লট নম্বর আট থেকে মুড়িগঙ্গা নদী পেরিয়ে তারপরে সাগর দ্বীপে পৌঁছাতে হয়। তাই স্বাভাবিকভাবেই বোঝা যাচ্ছে সাগর দ্বীপে যাতায়াত করা খুব একটা সহজসাধ্য বিষয় নয় এই কারণেও গঙ্গাসাগরে বারবার যাওয়া তীর্থযাত্রীদের পক্ষে খানিকটা সমস্যার হয়ে ওঠে । যদিও পুণ্য লাভের আশায় সেই দুর্গম জলপথ পেরিয়ে যেতে রাজি হন তাঁরা।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম